কাটল ৮ বছরের খরা। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই হেনরি কিসেকার জোড়া গোলে কাস্টমসকে ২-০ গোলে হারিয়ে এবছরের কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হল মোহনবাগান। বুধবারের ম্যাচ জয়ের ফলে তাদের পয়েন্ট দাঁড়াল ২৬'য়ে। ১ ম্যাচ কম খেলে ইস্টবেঙ্গল আছে ২৩ পয়েন্টে। এই নিয়ে ৩০ তম কলকাতা লিগ ঢুকল সবুজ-মেরুন শিবিরে।
কাটল ৮ বছরের খরা, ১ ম্যাচ বাকি থাকতেই লিগ জিতল সবুজ-মেরুন
আগেই কোচ শঙ্করলাল চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন, এই ম্যাচেই তাঁরা লিগ দখলে নিতে চান। সেই কারণে কাস্টমসের মতো দলের বিরুদ্ধেও পূর্ণ শক্তির দল নামিয়েছিল সবুজ মেরুন। শঙ্করলাল দল সাজিয়েছিলেন ৪-৪-৩ ছকে। গোলে শিল্টন পালের জায়গায় নামিয়েছিলেন শঙ্কর রায়কে। তাঁর সামনে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে ছিলেন কিঙসলে ও লালছাওয়ানকিমা। উইংব্যাকে ছিলেন অভিষেক আম্বেদকর ও অরিজিত বাগুই।
শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছিল বাগানের খেলোয়াড়দের পায়ে। মোহন বাগান সিসিএফসি-র গ্যালারি ভর্তি করে এসেছিলেন মোহনবাগান সদস্যরা। তাঁদের সামনে এদিনই লিগ জিততে প্রথম থেকেই মরিয়া ছিলেন সবুজ মেরুন খেলোয়াড়রা।
৪ মিনিটের মাথাতেই আসে প্রথম গোলের সুযোগ আর প্রথম সুয়োগেই গোল করে যান হেনরি কিসেক্কা। ডান প্রান্ত থেকে অরিজিত বাগুই লম্বা বল বাড়িয়েছিলেন তাঁকে উদ্দেশ্য করে। ঠান্ডা মাথায় বুক দিয়ে সেই বল নামিয়ে গোলে রাখেন কিসেক্কা।
প্রথম ৪৫ মিনিট অপ্রতিরোধ্য ছিল মোহনবাগান। পুরো দলটিকে দেখে মনে হচ্ছিল তেল দেওয়া যন্ত্র। ডানপ্রান্তে বাগুই-মাহাতো ও বামপ্রান্ত থেকে আম্বেদকর-ব্রিত্তো কম্বিনেশনে উইং ধরে বারবার আক্রমণ তুলে এনেছে তারা। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে সৌরভ দাস ও ডিসিলভাও ছিলেন একই রকমের সক্রিয়। তাঁদের সঙ্গে কিসেক্কা ও দিপান্ডা ডিকার সংযোগেও ভাল আক্রমণ তৈরি হয়েছে।
তবে এর মধ্যে একবার সমতা ফেরানোর সুযোগ এসেছিল কাস্টমসের সামনে। এজে স্ট্যানলি গতি বাড়িয়ে মোহনবাগান ডিফেন্স চিড়ে ঢুকে পড়েছিলেন। কিন্তু গোলের নিচে সজাগ ছিলেন শঙ্কর রায়। তাই বিপদ ঘটেনি। দিনটা অবশ্য মোহনবাগানের এক নম্বর স্ট্রাইকার দিপান্ডা ডিকার জন্য ভাল ছিল না। দু-দুটি গোলের সুবর্ণ সুযোগ তিনি নষ্ট করেন। আম্বেদকরের একটি ঠিকানা লেখা পাস তিনি গোলে পাঠাতে ব্যর্থ হন। এর কয়েক মিনিট পরেই ফের কিসেক্কার সাজানো বল উড়িয়ে দেন গোলের উপর দিয়ে। অবশ্য সেই ব্যর্থতা তিনি পুষিয়ে দিয়েছেন একটি দুর্দান্ত থ্রু পাস দিয়ে। পুরো কাস্টমস ডিফেন্সকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে তিনি ৬ গজের বক্সের ঠিক বাইরে পাস বাড়ান কিসেক্কার জন্য। কিসেক্কা, প্রথম ছোঁয়ায় বলটি ধরে পরের টোকায় দ্বিতীয় পোস্ট দিয়ে বলটি গোলে পাছান। এরপর ম্যাচের ৫৮ মিনিটের মাথায় আরও একটি গোলোর সুযোগ এসেছিল মোহন বাগানের সামনে। কিন্তু আকজার মালিকের হেড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ম্যাচের একেবারে শেষভাগে কাস্টমস অবশ্য চেপে ধরেছিল মোহনবাগানকে। কিন্তু সবুজ মেরুন ডিফেন্সের শৃঙ্খলা ও গোলকিপার শঙ্কর রায়ের কাছে বারবার আটকে গিয়েছেন তাদের ফুটবলাররা। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর পরের ম্যাচে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মহামেডানের মুখোমুখি হবে সবুজ মেরুনরা। কিন্তু এদিনের খেলার পর আর সেই ম্যাচের কোনও গুরুত্ব রইল না। ম্যাচের পর মাঠেই সবুজ মেরুন আবির নিয়ে বাগান সমর্থকদের আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠতে দেখা যায়। তাঁদের সঙ্গে সেই উদযাপনে সামিল হন দলের ফুটবলার, সাপোর্ট স্টাফ ও কর্তারাও।