২১ বছর আগের ৭ ফেব্রুয়ারি কোন অধরা নজির গড়েছিলেন অনিল কুম্বলে
২১ বছর আগের ৭ ফেব্রুয়ারি কোন অধরা নজির গড়েছিলেন অনিল কুম্বলে
অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছেছে ভারতীয় দল। তারই তিন পর, আজ অর্থাৎ ৭ ফেব্রুয়ারি, ২১ বছর আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্টে এক ইনিংসে দশ উইকেট নিয়ে যে নজির গড়েছিলেন ভারতের স্পিন লেজেন্ড অনিল কুম্বলে, তা অধরাই রয়েছে। সেই ঘটনাকে স্মরণ করে কুম্বলেকে সম্মান জানিয়েছেন আইসিসি।
পাকিস্তানের ভারত সফর
এক দশকেরও বেশি সময় পর ভারতে ক্রিকেট খেলতে এসেছিল লেজেন্ড ওয়াসিম আক্রম নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান। যুদ্ধের আবহে মৈত্রী স্থাপনের লক্ষ্যে ম্যাচ ঘিরে আগ্রহ, উদ্দীপনা ও নিরাপত্তা ছিল উচ্চগ্রামে। এই সফরে ভারতের সঙ্গে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলেছিল পাকিস্তান। ওই সফরেই কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দুই দলের মধ্যে আরও একটি টেস্ট ম্যাচ হলেও সেটি এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্গত ছিল।
প্রথম টেস্ট
১) চেন্নাই-র এমএ চিদাম্বরম বা চিপক স্টেডিয়ামে ১৯৯৯ সালের ২৮ জানুয়ারি দুই দলের মধ্যে প্রথম টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আগে ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে ২৩৮ রানে অল-আউট হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। অ্যাওয়ে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬০ রান করেছিলেন মইন খান। ভারতের হয়ে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলে।
২) জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ২৫৪ রানে অল-আউট হয়ে গিয়েছিল ভারত। হোম টিমের হয়ে ৫৪ রান করেছিলেন বর্তমান বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বর্তমান এনসিএ প্রধান রাহুল দ্রাবিড়ের ব্যাট থেকে এসেছিল ৫৩ রান। পাকিস্তানের হয়ে সর্বাধিক ৫ উইকেট নিয়েছিলেন স্পিনার সাকলিন মুস্তাক।
৩) দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪১ রান করেছিলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন ওপেনার সইদ আনোয়ার। ৫১ রান করেছিলেন ইনজামাম-উল-হক। ২৮৬ রানে শেষ হয়েছিল ওয়াসিম আক্রমদের ইনিংস। ভারতের হয়ে সর্বাধিক ৬ উইকেট নিয়েছিলেন পেসার ভেঙ্কটেশ প্রসাদ।
৪) জবাবে ব্যাট করতে নামা ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। মাস্টার ব্লাস্টারের দুর্দান্ত ১৩৬ ও উইকেটরক্ষক নয়ন মোঙ্গিয়ার ৫২, ভারতকে জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে গেলেও মাত্র ১২ রান দূরে থেমে গিয়েছিল হোম টিম।
দ্বিতীয় টেস্ট
১) দিল্লির ফিরোজ শাহ কোটলা (বর্তমানে অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম) স্টে়ডিয়ামে হওয়া দ্বিতীয় টেস্টে আগে ব্যাট করেছিল ভারত। ওপেনার সদাগোপান রমেশের ৬০ ও অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিনের ৬৭-র সৌজন্যে প্রথম ইনিংসে ২৫২ রান তুলেছিল ভারত। পাকিস্তানের হয়ে সর্বাধিক ৫ উইকেট নিয়েছিলেন সাকলিন মুস্তাক।
২) জবাবে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। ১৭২ রানে অল-আউট হয়ে যায় তারা। ভারতের হয়ে ৪ উইকেট নেন লেগ স্পিনার অনিল কুম্বলে, ৩ উইকেট নেন অফ স্পিনার হরভজন সিং।
৩) দ্বিতীয় ইনিংসে আবারও জ্বলে ওঠে ভারতীয় ওপেনার সদাগোপান রমেশের ব্যাট। ৯৬ রান করেছিলেন তিনি। মিডিল অর্ডারে নেমে দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা বর্তমান বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ৬২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩৯ রান তুলেছিল ভারত।
দিল্লি টেস্টের চতুর্থ ইনিংস
৭ ফেব্রুয়ারির সকালে দিল্লি টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে পাকিস্তান যখন ব্যাট করতে নেমেছিল, তখন পিচ কার্যত স্পিনারদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। বল পড়ে কখনও উঠছিল, তো কখনও নামছিল আচমকাই। সেই অনিশ্চয়তাকেই নিজের হাতিয়ার বানিয়েছিলেন লেজেন্ড অনিল কুম্বলে। পাকিস্তানের ১০ জন ব্যাটসম্যানকে একাই সাজঘরে ফিরিয়ে ম্যাচে ভারতের ২১২ রানের জয় নিশ্চিত করেছিলেন জাম্বো। তাই এই দিনটি ভারতীয় ক্রিকেটে ঐতিহাসিক। কারণ অনিল কুম্বলের এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড বিশ্ব ক্রিকেটে অধরা।
|
আইসিসি-র সম্মান
অনিল কুম্বলের দুনিয়া কাঁপানো এই কীর্তির কথা মনে রেখেছে আইসিসি। এই বিশেষ দিনে ভারতীয় লেজেন্ডকে শুভেচ্ছা জানাতে কোনও কসুর করেনি বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা।