আত্মজীবনী 'এ সেঞ্চুরি ইজ নট এনাফ'-এ একের পর এক গোপন তথ্য ফাঁস সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের
নিজের আত্মজীবনী প্রকাশ করতে চলেছেন সৌরভ। সেখানে একেরপর এক গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন তিনি। দেখে নেওয়া যাক মহারাজের কথার কিছু ঝলক।
ভারতীয় ক্রিকেট একসময়ে আবর্তিত হয়েছে বাঙালির ক্রিকেট জগতের সবচেয়ে বড় আইকন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে। শুরু ভারত কেন বিশ্ব ক্রিকেট সৌরভকে মনে রেখেছে শুধু ক্রিকেটার হিসাবে নয়, ফাইটার হিসাবে। নানা সময়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন অথবা জড়ানো হয়েছে। তবে ভারতীয় ক্রিকেটকে যে ট্র্যাকের উপরে খাড়া করে দিয়ে গিয়েছেন এই বঙ্গসন্তান, সেই ট্র্যাকেই পরে বুলেট ট্রেন ছুটিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি ও বর্তমানে বিরাট কোহলিরা। নিজের আত্মজীবনী প্রকাশ করতে চলেছেন সৌরভ। সেখানে একেরপর এক গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন তিনি। দেখে নেওয়া যাক মহারাজের কথার কিছু ঝলক।
কেন অবসর নিলেন
২০০৮ সালে যেন ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল সৌরভের। তার আগে ২০০৫ এ দল থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল। পরে ভালো খেলেও কিছুতেই সুযোগ দিচ্ছিলেন না নির্বাচকেরা। কিরণ মোরের নেতৃত্বে নির্বাচকদের দল গ্রেগ চ্যাপেলকে সঙ্গ দিয়ে সৌরভকে দল থেকে বাদ দেন। যা নিয়ে তুমুল হট্টগোল হয়েছিল। পরে ফেরত এলেও নির্বাচকেরা সৌরভের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। ২০০৮ ইরানি ট্রফিতে ভালো খেলেও রেস্ট অব ইন্জিয়ায় সুযোগ মেলেনি। পরে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সুযোগ পান।
কুম্বলেকে ফোন
সেইসময়ই সৌরভ ঠিক করে নেন, অনেক হয়েছে। এবার ব্যাট-গ্লাভস তুলে রাখবেন তিনি। বারবার নির্বাচকদের এহেন আচরণ নিতে পারছিলেন না। রাগ দুঃখ সবই হয়েছে। তারপরই অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজে অপ্রত্যাশিত সুযোগ চলে আসে সৌরভের সামনে। যদিও প্রথম দুটো টেস্টের জন্য সৌরভের নাম ঘোষণা হয়। সৌরভ বুঝে যান ফের নির্বাচকেরা তাঁকে নিয়ে কাঁটাছেঁড়ে করবেন। বেঙ্গালুরুতে পৌঁছে সৌরভ কুম্বলেকে জানিয়ে দেন, তিনি ঠিক করে ফেলেছেন। আর নয়, এবার সরে দাঁড়াবেন।
'এই শেষ আর নয়'
তার আগে সৌরভ বাদ পড়ার খবর শুনে ফোন করেন তৎকালীন অধিনায়ক অনিল কুম্বলেকে। জিজ্ঞাসা করেন, তিনিও কি মনে করেন তাঁর আর প্রথম দলে খেলার যোগ্যতা নেই? কুম্বলে জানান, নির্বাচক কমিটি দল তৈরির সময়ে তার মতামত নেননি। তিনি জানতেনও না। সৌরভ বুঝে যান, এভাবে চলতে পারে না। বারবার তাঁর ভাগ্য নিয়ে অন্যরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এবার সরে যাওয়ার পালা।
পুজোর মধ্যেই কেরিয়ার বিসর্জন
২০০৮ সালে পুজোর মধ্যেই বাঙালির ক্রিকেট রোমান্টিসিজম যাঁকে ঘিরে আবর্তিত হতো, সেই সৌরভ অবসর ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা সহজ ছিল না। তবে সেবার পুজোর সময় ক্রিকেটর কেরিয়ার নিয়ে এতটাই ঘেঁটে ছিলেন সৌরভ যে কবে পুজো এল আর কবে গেল তা বোঝার মতো মানসিকতা ছিল না তাঁর। এতটাই বিধ্বস্ত ছিলেন তিনি।
বাবার প্রয়াণ
আরও একটি গোপন কথা সৌরভ বইয়ে জানিয়েছেন। সৌরভ জানিয়েছেন, তিনি তাঁর বাবা চণ্ডী গঙ্গোপাধ্যায় প্রয়াত হওয়ার পর কাঁদেননি। যে বাবা হাতে ধরে ক্রিকেট মাঠে সৌরভকে নিয়ে গিয়েছেন, সৌরভের খেলা নিজের চোখে দেখেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। এমনকী বাদ পড়ার পর বলতে গেলে খেলা দেখা ছেড়ে দিয়েছিলেন, তিনি মারা যাওয়ার পর তিনি কাঁদেননি। তখনও নিজের আবেগকে চেপে রেখেছিলেন সকলের সামনে।
শেষ টেস্ট
জীবনের শেষ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে খেলার সময় অধিনায়ক ধোনি এগিয়ে আসেন সৌরভের দিকে। আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন, শেষদিনে দাদাকেই অধিনায়কত্ব করতে হবে। তবে সৌরভ রাজি হননি। তবে দ্বিতীয়বার ধোনি এসে এমনভাবে চেপে ধরলেন যে আর না করতে পারলেন না। নাগপুরে শেষ ম্যাচে এক অনন্য মাইলস্টোন তৈরি হল ভারতীয় ক্রিকেটে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ফের ফিল্ড প্লেসিং করলেন, বোলারকে নির্দেশ দিলেন। গোটা ক্রিকেট বিশ্ব তখন আবেগে ডুব দিয়েছে। তবে সৌরভ তিন ওভার পরই ধোনিকে দায়িত্ব তুলে দেন। পরে জানিয়ছেন, হঠাৎ করে দায়িত্ব পেয়ে মাঠে মনসংযোগ করতে পারছিলেন না তিনি। সবচেয়ে মজার কথা সেইদিনই আটবছর আগে ২০০০ সালে সৌরভের অধিনায়কত্বের ইনিংস শুরু হয়েছিল।
সর্দারজির বেশে
শুধু ক্রিকেটের প্রসঙ্গই নয়, নিজের জীবনের নানা ঘটনাও তুলে ধরেছেন সৌরভ। তখনও দেশের অধিনায়ক সৌরভ। একবছর দুর্গাপুজোর সময়ে ঠাকুর দেখতে গিয়ে সর্দার সাজতে হয়েছিল। মেক আপ আর্টিস্টকে বাড়িতে ডেকে ভদ্রস্থ ও বিশ্বাসযোগ্য লুক তৈরি করা হয়। পরে রাস্তায় বেরিয়ে বাবুঘাটে আসতেই পুলিশ আধিকারিক চিনে ফেলেন সৌরভকে। তবে দাদার অনুরোধে সিক্রেট ফাঁস করেননি।