এশিয়া কাপ ২০১৮, শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ হারিয়ে বাংলাদেশ বোঝালো কেন তারা টুর্নামেন্টের 'কালো ঘোড়া'
এশিয়া কাপ ২০১৮-এর উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ ১৩৭ রানের ব্যবধানে জিতল। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেন মুস্তাফিকুর রহিম।
প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ দেখিয়ে দিল কেন তাদের দলকে এই এশিয়া কাপের কালো ঘোড়া বলা হচ্ছে। প্রথমে ব্যাটিং-এ মালিঙ্গা ঝড় সামলে একক লড়াইয়ে মুস্তাফিকুর রহিম বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছিলেন ২৬১ রানে। তারপর ধারাবাহিকভাবে উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ১২৪ রানে বেঁধে রেখে ১৩৭ রানের ব্যবধানে ম্যাচ জিতে নিল বাংলাদেশ।
প্রবাদ আছে দিনটা কেমন যাবে তা নাকি সকাল সকালই বোঝা যায়। এই ম্যাচের ক্ষেত্রে অন্তত এই প্রবাদ খাটে না। এদিনের ম্য়াচ শুরু হয়েছিল এক বছর পর একদিনের ক্রিকেটে লাসিথ মালিঙ্গার সদর্প ফিরে আসা দিয়ে। ১০ ওভার বল করে মাত্র ২৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
তবে বোলিং পরিসংখ্যান দিয়ে মালিঙ্গার বোলিংকে বোঝা যাবে না। ম্যাচে যখনই তাঁকে আক্রমণে এনেছেন অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, তখনই তিনি উইকেট তুলে নিয়েছেন। বাংলাদেশের রান তোলার গতি কমে গিয়েছে। শুধু একজনকেই পরাস্ত করতে পারেননি তিনি, মুস্তাফিকুর রহিম।
বাংলাদেশ ইনিংসকে প্রায় একা টেনে নিয়ে গিয়েছেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। শেষ ওভার পর্যন্ত ব্য়াট করে তিনি ১৪৪ রান করে থিসারা পেরেরার বলে আউট হন। তাঁর দৌলতেই বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ১ রান থেকে ২৬১ রানে পৌঁছায়। তাঁকেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ নির্বাচিত করা হয়েছে।
প্রথমে মহম্মদ মিঠুন (৬১)-কে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ১৩৩ রান যোগ করেন তিনি। পরে টেল এন্ডারদের নিয়ে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যান। তবে ম্যাচের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্ত এসেছিল বাংলাদেশ ইনিংসের ৪৬.৫ ওভারে। মুস্তাফিজুর রহমান রান আউট হতে বাংলাদেশের স্কোর সেই সময় দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ২২৯।
সকলেই ভেবেছিলেন ওখানেই বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হল। কারণ ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই লাকমলের একটি বল পুল করতে গিয়ে কব্জির হাড় ভেঙে যায় হাতে বাংলাদেশ ব্য়াটিং-এর সবচেয়ে বড় ভরসা তামিম ইকবালের। টুর্নামেন্টেই তিনি আর খেলতে পারবেন না।
৯ উইকেট পড়ে যেতে দলের প্রয়োজনে তিনি ওই ভাঙা হাত নিয়েই খেলতে নামেন। ৪৬ তম ওভারের শেষ বলটি তিনি একহাতে খেলেন। দলের স্বার্থে তাঁর এই যন্ত্রণা অস্বীকার করাকে যোগ্য সম্মান জানান মুস্তাফিকুর। শেষ তিন ওভার বেধারক পিটিয়ে তিনি আরও ৩২ রান যোগ করেন।
শ্রীলঙ্কার হয়ে তীব্র গতিতে ইনিংস শুরু করেছিলেন উপুল থরঙ্গা। মাশরাফে মোর্তাজা প্রথম ওভারেই ১টি ৬ ও ১টি ৪ মেরে ১৩ রান তোলেন। তার পরের ওভারে মুস্তাফিজুরকেও পর পর ২টি ৪ মারেন। কিন্তু ওই ওভারেরই শেষ বলে কুসল মেন্ডিসকে তুলে নেন মুস্তাফিজুর।
এরপরই শ্রীলঙ্কার ধারাবাহিকতার অভাব ধরা পড়ে। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারিয়েছে তারা। ভয়ঙ্কর থরঙ্গাকে মোর্তাজা তাঁর পরের ওভারে ফেরান। থরঙ্গার ব্যাটের ইনসাইড এজে লেগে বল উইকেট ভেঙে দেয়। মোর্তাজারই পরের ওভারে কোন রান না করেই এলবিডব্লু হন ধনঞ্জয় ডিসিলভা। দশম ওভারে মেহিদি হাসানের বলে এলবিডব্লু হন কুসল পেরেরা।
অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাবে দাসুন শনকা রান আউট হন। ম্যথুসও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি পরের ওভারেই রুবেলের বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লু হন। এরপরও উইকেটে টিকে থাকার চেষঅটা না করে মেহিদি হাসানের বল তুলে মারতে গিয়ে পরের ওভারেই আউট হন থিসারা পেরেরা। ১৯ ওভারে মাত্র ৬৯ রানেই ৭ উইকেট পড়ে যায় শ্রীলঙ্কার।
পডড়েছিল শুধু শ্রীলঙ্কার টেল এন্ডাররা। এই সময় মনে হচ্ছিল তারা ১০০ রানও পার করতে পারবে না। কিন্তু যে প্রতিরোধ উপরের দিকের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল, তা কিছুটা হলেও করে দেখান দিলরুয়ান পেরেরা(২৯) ও সুরঙ্গা লাকমল(২০)। তাদের দৌলতেই শ্রীলঙ্কা ৩৫.২ ওভার খেলে ১২৪ রান অবধি পৌঁছতে পারে।
১৭ তারিখ শ্রীলঙ্কার পরের খেলা আফগানিস্তানের সঙ্গে। টেস্ট খেলার ছাড় পাওয়া আফঘানিস্তান কিন্তু এই শ্রীলঙ্কার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারে। অপরদিকে সুপার ফোরে বাংলাদেশ কিন্তু ভারত ও পাকিস্তান - দুই ফেভারিটের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে। তামিম ইকবালকে না পাওয়াটাই না তাদের বাড়তি তাতিয়ে দেয়।