এশিয়া কাপ ২০১৮, রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল গড়ালো শেষ বল পর্যন্ত, সপ্তমবার ট্রফি তুলল ভারত
এশিয়া কাপ ২০১৮ ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যের ফাইনাল ম্যাচের ফলাফল ও ম্যাচ রিপোর্ট।
আরও একটা রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল দেখল এশিয়া কাপ ফাইনাল। টসের সময় বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফে মোর্তাজা বলেছিলেন তাঁরা শেষ বল অবধি লড়বেন। অধিনায়কের কথার মর্যাদা রাখলেন বাংলাদেশই খেলোয়াড়রা। একেবারে শেষ বলে বাংলা দেওয়া ২২৩ রানের টার্গেট ছুঁল ভারত। ৩ উইকেটে ম্যাচ জিতে ঘরে তুলল সপ্তম এশিয়া কাপ ট্রফি।
প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ২২২ রান তুলেছিল। তাতে ইনিংস বিরতির সময়ে মনে করা হয়েছিল এই ম্যাচ সহজেই জিতে যাবে ভারত। কিন্তু প্রথম ইনিংসের মতোই গোটা ম্যাচই বারবার করে দুলেছে। কখনও ঝুঁকে পড়েছে বাংলাদেশের দিকে, কখনও ভারতের দিকে।
এদিন অবশ্য শুরুটা অন্যান্য ম্যাচের মতো দুর্দান্ত হয়নি। শিখর ও রোহিত হাত খুলে মারতে শুরু করেছিলেন ৫ ওভারের আগেই বোর্ডে ৩৫ রান উঠে গিয়েছিল। কিন্তু খেলার গতির বিরুদ্ধে নাজমুল হকের বলে মারতে গিয়ে মিড অফে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন ধাওয়ান (১৫)।
রায়ডুও(২) বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। বাংলাদেশ অধিনায়কের বলে ব্যাটের কানা ছুঁইয়ে তিনি উইকেটের পিছনে ধরা পড়েন। তাঁর উইকেট নিয়ে একদিনের ক্রিকেটে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২৫০ উইকেট দখল করেন মাশরাফে মোর্তাজা।
এরপর দীনেশ কার্তিক ও রোহিত শর্মা ভারতীয় ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ১৭ তম ওভারে ফের একবার ম্যাচের গতির বিপরীতে ৪৮ রানে আউট হয়ে যান রোহিত শর্মা। রুবেল হোসেনের একটি শর্ট পিচ বল পুল করে গ্যালারিতে পাঠানোর লোভ সামলাতে পারেননি ভারত অধিনায়ক। কিন্তু বাউন্ডারির আগেই তিনি নাজমুলের হাতে ধরা পড়েন।
এরপরেই আবার ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। রোহিত আউট হওয়ার পরেই ভারতের রান তোলার গতিতে ভাটা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু কার্তিক ও ধোনি নিজেদের মধ্যে ভাল পার্টনারশিপ গড়ে তুলেছিলেন। ধীরে ধীরে ছন্দও খুঁজে পাচ্ছিলেন তাঁরা। ঠিক যখন মনে হচ্ছে ভারতকে বৈতরণী পার করে দেবেন তখনই মাহমুদুল্লার একটি ফুলটস বল মিস করে এলবিডব্লু হন কার্তিক (৩৭)।
এরপর ক্রিজে এসেছিলেন কেদার যাদব। প্রথম থেকেই ভাল ব্যাট করার প্রতিশ্রুতি দেখা যাচ্ছিল তার খেলায়। কিন্তু এরপরই আবার ঘুরে যায় খেলা। একটি সিঙ্গলস নিতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান কেদার। মাঠেই তাঁর চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু তারপরও তাঁর দৌড়তে সমস্যা হচ্ছিল। এই অবস্থায় সিঙ্গলস নেওয়ার রাস্তা ছেড়ে মারতে গিয়েছিলেন ধোনি। কিন্তু চতুর বাংলাদেশি অধিনায়ক এই সময়ে আক্রমণে এনেছিলেন মুস্তাফিজুরকে। তাঁর বলেই উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন ধোনি (৩৬)।
এরপর টিম ম্যানেজমেন্ট কেদারকে ড্রেসিংরুমে এনে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে তাঁর বদলে মাঠে নামেন ভূবনেশ্বর কুমার। ধোনি আউট হতে মাঠে নেমেছিলেন জাদেজা। এই দুই লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান দারুন গুরুত্বপূর্ণ পার্টানারশিপ গড়ে তোলেন। এই সময়ে ভারত প্রায় প্রতি বলেরান নিচ্ছিল।
ডেথে আবার রুবেল হোসেন ও মুস্তাফিজুরকে ফিরিয়ে আনেন মোর্তাজা। আর ৪৭ ও ৪৮ তম ওভারে তাঁরা ফিরিয়ে দেন যথাক্রমে জাদেজা (২৩) ও ভূবনেশ্বর কুমার (২১)-কে।
ফলে আবার ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ। কিন্তু ততক্ষণে মুস্তাফিজুরের ওভার শেষ হয়ে গিয়েছিল। ৫০তম ওভার বল করতে এসেছিলেন মাহমুদুল্লা। ভারতের দরকার ছিল ৬ রান। ভূবি আউট হতে চোট নিয়েই ক্রিজে ফিরে এসেছিলেন কেদার যাদব। অপরদিকে ছিলেন কূলদীপ যাদব। শেষ পর্যন্ত একেবারে শেষ বলে সিঙ্গলস নিয়ে ম্যাচ জিতিয়ে আসেন কেদার (২৩*) ও কূলদীপ(৫*)।
এদিন অসাধারণ বল করেন বাংলাদেশি পেসাররা। মুস্তাফিজুর ও রুবেল দুজনেই ২টি করে উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ভারতের রান তোলার গতি রুখে গিয়েছিলেন। মুস্তাফিজ ১০ ওভারে দেন ৩৮ রান, আর রুবেল মাত্র ২৬। ভাল বল করেন বাংলাদেশি অধিনায়ক মোর্তাজাও। তিনি ৩৫ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন। মাহমুদুল্লা ও নাজমুল ইসলামও ১টি করে উইকেট পেলেও তারা যতেষ্ট রান দিয়েছেন।
এদিনের ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন বাংলাদেশি ওপেনার লিটন দাস। টুর্নামেন্টে এতদিন রান পাননি তিনি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে একটি ৪৩ ছাড়া ২ অঙ্কের রানই ছিল না। ফাইনালে তিনি ১২ টি ৪ ও ২টি ৬ সহযোগে ১১৭ বলে করে গেলেন ১২১ রান।
তাঁর সঙ্গে এদিন ওপেনে নেমেছিলেন মেহিদি হাসান (৩২)। এতদিন টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি ২৫-ও পার করতে পারেনি। এদিন ২১ ওভারের তারা তুলল ১২০ রান। কিন্তু তারা আউট হওয়ার পর একমাত্র সৌম্য সরকার (৩৩) ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে কেউ দুই অঙ্কের রানই করতে পারেননি।
ভারতীয় পেসার জুটি ভূবি ও বুমরা তাঁদের আগের ম্য়াচগুলির পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারেননি। বুমরা শেষ পর্যন্ত রুবেলের উইকেটটি তুললেও ভূবি উইকেটহীনই থাকেন। দুজনে আজ রানও দিয়েছেন ওভার প্রতি প্রায় ৫ এর কাছাকাছি। জাদেজাও কোনও উইকেট তুলতে পারেননি। তবে দুরন্ত ফিল্ডিংয়ে মিঠুনকে রান আউট করেন।
স্পিনারদের মধ্যে সেরা ছিলেন কূলদীপ। তিনি ১০ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন। এদিন আবার ভাল বল করলেন কেদার যাদব (৪১-২) চাহালও ৮ ওভারে ৩১ রান দিয়ে ১টি উইকেট পেয়েছেন।