এশিয়া কাপ ২০১৮, ১২৬ বল বাকি থাকতেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে ৮ উইকেটে জিতল ভারত
১২৬ বল বাকি থাকতেই এশিয়া কাপ ২০১৮ গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে হেলায় ৮ উইকেটে হারাল ভারত।
মাত্র কয়েক ঘন্টায় বদলে গেল ভারত। যে দলটির মাত্র একদিন আগেই হংকংয়ের মতো দলকে হারাতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল তারাই শক্তিশালী পাকিস্তানকে ১২৬ বল বাকি থাকতেই হেলায় ৮ উইকেটে হারিয়ে দিল। পরিসংখ্য়ান বলছে এর আগে ভারত কখনও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের এত বল হাতে থাকতে হারায়নি।
পাকিস্তানকে মাত্র ১৬২ রানে বেঁধে রেখেছিল ভারতের বোলাররা। ৭ ওভারে মাত্র ১৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেওয়া ভূবনেশ্বর কুমার ম্য়ান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন। মঙ্গলবার হংকংয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচে দীর্ঘদিন বাদে পিঠের চোট কাটিয়ে ফিরেছিলেন ভূবনেশ্বর কুমার। সেই ম্যাচে তাঁকে চেনা ছন্দে পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় ম্যাচেই দারুন বল করলেন ভারতেরই এই জোরে বোলার। পাকিস্তানের ইনিংসের শুরুতেই তিনি ভয়ঙ্কর দুই পাক ওপেনার ইমাম উল-হক(২) ও ফখর জামান(০)-কে তুলে নিয়ে যে ধাক্কাটা দিয়েছিলেন, তার থেকে আর বেরোতে পারেনি তারা। এই ফখরই কিন্তু দুই দলের শেষ সাক্ষাতকারে সেঞ্চুরি করে ব্যবধান গড়ে দিয়েছিলেন।
তারপর কিছুটা হলেও ইনিংসের হাল ধরেছিলেন বাবর আজম(৪৭) ও শোয়েব মালিক(৪৩)। এঁরা দুজনে পাকিস্তানকে ২১ ওভারে ৮৫ রানে পৌঁছে দেন। কিন্তু কূলদীপ যাদব তাঁর তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই একটি অসাধারণ ডেলিভারিতে তাঁর স্টাম্প ছিটকে দেন।
এরপর খেলাটা প্রায় দাঁড়িয়ে যায় পাকিস্তান বনাম পাকিস্তান। একের পর এক উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা। ম্য়াচের পর সেকথা মেনে নিয়েছেন পাক অধিনায়ক সরফরাজও। তরুণ আসিফ আলি বা শাদাব খানের পাশাপাশি সরফরাজ নিজেও বাজে শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। আর অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক দুবার জীবন পেয়ে রায়ডুর একটি দুর্দান্ত ডিরেক্ট থ্রোতে রান আউট হন।
তাঁদের খেলা দেখে মনে হয়েছে ভারতীয় পেসারদের বিরুদ্ধে সুবিধা করতে না পেরে তাঁরা সম্ভবত স্পিনারদের মারার জন্য নিশানা করেছিলেন। কিন্তু যখন একের পর এক উইকেটের পতন ঘটছে তখনও প্রতি বলে আক্রমণের রাস্তায় যাওয়াটা কোন স্ট্র্যাটেজির ফল বোধগম্য হয়নি।
এরপর পাকিস্তানের আর একটি বড় জুটি হয়েছিল। একেবারে শেষের দিকে ফাহিম আশরাফ (২১)ও মহম্মদ আমির (১৮) কিছুটা দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করেন। দুজনে জুটিতে ৩৭ রান যোগ করেন। কিন্তু বুমরা তাঁর ইংল্যান্ডের ফর্ম সঙ্গে নিয়েই আরব আমিরশাহিতে এসেছেন। প্রথম স্পেলে ভাল বল করলেও (২টি মেডেন ওভার) উইকেট আসেনি তাঁর ঝুলিতে। আক্রমণে ফিরে এসেই তিনি ফাহিমকে তুলে নেন।
তবে পাকিস্তান দলকে আজ চমকে দিয়েছেন কেদার যাদব। বল হাতে তিনি তাঁর সীমিত ক্ষমতায় ৯ ওভারে ২৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে যান তিনি। পাক অধিনায়ক ম্যাচের পর বলেন তাঁরা ভারতের দুই স্পিনারের জন্য তৈরি ছিলেন। কিন্তু কেদার তাঁদের পরিকল্পনায় ছিলেন না।
ভারতের বল ভাল হলেও ফিল্ডিংয়ে কিছু গলদ চোখে পড়েছে। বেশ কিছু ক্যাচ মিস করেছে ভারত। শোয়েব মালিক বেশিদূর এগোতে না পারলেও একবার ধোনি ও আরেকবার ভূবনেশ্বর তাঁর ক্যাচ ছেড়েছিলেন।
পাকিস্তানকে ১৬২ রানে বেঁধে রাখার পর ভারতের জেতাটা কঠিন ছিল না। তবে ভারত শুধু জিতল না, রীতিমতো কর্তৃত্ব নিয়ে জিতল। রোহিত শর্মা (৩৯ বলে ৫২) ও শিখরর ধাওয়ান(৫৪ বলে ৪৬)-এর ওপেনিং জুটি মাত্র ১৩ ওভারেই ৮৬ রান তুলে দিয়েছিল। শাদাব খান আক্রমণে এসে প্রথম বলেই বোল্ড করেন রোহিতকে।
এর তিন ওভার পরেই ফাহিম আশরাফের একটি বাইরের বল মারতে গিয়ে পয়েন্টে বাবর আজমের হাতে ধরা পড়েন শিখর। ততক্ষণে ভারত ১০৪ রানে পৌঁছে গিয়েছে। বাকি কাজটা ঠান্ডা মাথায় সারেন রায়ডু (৪৬ বলে ৩১) ও কার্তিক (৩৭ বলে ৩১)।
এদিন অবশ্য মাঠে দুটি দিঃখজনক ঘটনার সাক্ষি থাকতে হয় সকলকে। প্রথমে ভারতের বল করার সময় বল করতে গিয়ে পিঠের নিচের দিকে চোট পান হার্দিক পাণ্ড্য। মাঠের মধ্যেই তিনি শুয়ে পড়েন। শেষে মাঠ ছাড়তে হয় স্ট্রেচারে। পরে বোর্ডের তরফে জানানো হয় তিনি আপাতত চলাফেরার মতো অবস্থায় এসেছেন।
প্রায় একই ঘটনা দেখা যায় পাকিস্তানের বল করার সময়েও রোহিত শর্মাকে আউট করার পরের ওভারেই বল করতে গিয়ে একই জায়গায় চোট পান শাদাব খান। তিনি অবশ্য পায়ে হেঁটেই মাঠ ছাড়েন।