এশিয়া কাপ ২০১৮, ভারত বনাম আফগানিস্তান, বিদায়বেলায় জ্বলে উঠতে পারে আফগানরা
মঙ্গলবার এশিয়া কাপ ২০১৮ এর সুপার ফোর পর্যায়ে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হচ্ছে ভারত। সেই ম্যাচের প্রিভিউ ও দুই পক্ষের সম্ভাব্য প্রথম এগারো সম্বন্ধে জেনে নিন।
মঙ্গলবারই এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বের শেষ দিন। এদিন দুবাইতে ইতিমধ্যেই ফাইনালে উঠে যাওয়া ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়া আফগানিস্তান। আপাত দৃষ্টিতে এই ম্যাচের কোনও গুরুত্ব নেই। কিন্তু এশিয়া কাপে এই ম্যাচটিই কিন্তু সবচেয়ে জমজমাট হয়ে উঠতে পারে। কারণ অনেকের মতেই পারফরম্যান্সের নিরিখে এশিয়া কাপ ফাইনাল হওয়া উচিত ছিল ভারত-আফগানিস্তানের মধ্যেই।
আফগানিস্তানের পক্ষে গত সপ্তাহটা মেনে নেওয়া কঠিন। তাদের আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলির সঙ্গে খেলার বিশেষ সুযোগ হয় না। ত সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মতো দলকে এককথায় উড়িয়ে দিয়ে গ্রুপ বি-র চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার ফোর পর্বে পা রেখেছিল তারা।
কিন্তু প্রথমে পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশ, পর পর দুটি ম্যাচে শেষ ওভারে অল্পের জন্য হারতে হয়েছে। তাদের পারফরম্যান্সে কোনও কমতি ছিল না, অভিজ্ঞতার অভাবটা বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। টুর্নামেন্ট থেকে বেরিয়ে যেতে হলেও আফগান ক্রিকেটাররা কিন্তু মাথা উঁচু করেই দুবাই ছাড়বেন। কারণ এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ধারাবাহিক দল তারাই। এমনকী ভারতকেও প্রথম ম্যাচে হংকংয়ের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও সমস্যায় পড়তে হয়েছিল।
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের নিরিখেও এশিয়া কাপে কিন্তু আফগানরা অনেকটাই এগিয়া আছেন। সর্বোচ্চ রানের তালিকায় শিখর ধাওয়ান (৩২৭) ও রোহিত শর্মা (২৬৯) -এর পরেই আছেন আফগান ব্যাটসম্যান হাশমতুল্লা শহিদি (২৬৩)। অন্যদিকে বোলিংয়ে উইকেট সংগ্রহে শীর্ষে আছেন আফগান বোলার রশিদ খান (৮), দুই নম্বরে তাদেরই আরেক বোলার মুজিবুর রহমান।
উল্টো দিকে ভারত এই টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্স দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে এশিয়া কাপ জেতার অন্যন্য দাবিদারদের থেকে তারা কয়েক যোজন এগিয়ে। একমাত্র প্রথম ম্যাচে হংকং ভারতকে কিছুটা চাপে ফেলেছিল। কিন্ততু তারপর থেকে সুপার ফোরে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়েছে। আর গ্রুপ ও সুপার ফোর মিলিয়ে দুইবার বিধ্বস্ত করেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে।
কাজেই এই ম্যাচের কোনও গুরুত্ব না থাকলেও আফগানরাই এই টুর্নামেন্টে ভারতের সামনে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর আগে ২০১৪ সালে একটি একদিনের ম্যাচেই মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও আফগানিস্তান। ২০১৪ সালে ঢাকায় এশিয়া কাপের সেই ম্যাচে ভারত আফগানিস্তানকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিল।
কাপ ধরে রাখার পাশাপাশি ভারত এই টুর্নামেন্টে খেলতে এসেছিল অন্য আরেকটি লক্ষ্য নিয়ে। আগামী বছর আসছে আইসিসি বিশ্বকাপ। তার আগে ভারতীয় দলের ৪ ও ৫ নম্বর জায়গা ঠিক করে নিতে চেয়েছিল ভারত। এখনও অবধি একমাত্র হংকং ম্যাচ ছাড়া ভারতের মিডল ও লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাট করার সুযোগই পাননি। দল ইতিমধ্যেই ফাইনালে উঠে যাওয়ায় এই ম্যাচে ভারতের সামনে লোকেশ রাহুল, মনীশ পাণ্ডে, খলিলদের মতো রিজার্ভ ক্রিকেটারদের খেলিয়ে দেখে নেওয়ার সুযোগ থাকছে।
অপরদিকে টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত আফগানদের একটি পজিশনেই পরিবর্তন করতে দেখা দিয়েছে। ৪টি ম্যাচে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দুটি করে খেলেছেন নাদিবুল্লা জাদরান ও সামিফল্লা শেনওয়ারি। দলে ৪ জন কোনও ম্যাচ খেলেননি। এই ম্যাচে কিছু হারাবার না থাকায় তাদেরকে খেলাতে পারে আফগানিস্তানও। কিন্তু এই ম্যাচে তাদের কিছু পাওয়ারও আছে। তা হল ক্রিকেট বিশ্বের সম্ভ্রম আদায় করা। বিশ্বক্রিকেটের অন্যতম প্রধান শক্তি ভারতের বিরুদ্ধে সেই পাওনার লোভ তারা ছাড়তে পারবে বলে মনে হয় না।
দেখে নেওয়া যাক দুই দলের সম্ভাব্য প্রথম এগারো -
ভারত: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, আম্বাতি রায়ডু / লোকেশ রাহুল, দীনেশ কার্তিক / মনীশ পাণ্ডে, এমএস ধোনি(উইকেটরক্ষক), কেদার যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, ভূবনেশ্বর কুমার, কূলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চাহাল, জসপ্রিত বুমরাহ / খলিল আহমেদ।
আফগানিস্তান: মহম্মদ শাহজাদ (উইকেটরক্ষক), ইহসানুল্লা জানাত, রহমত শাহ, হাসমতুল্লা শহিদি, আশগর আফগান (অধিনায়ক), সামিউল্লাহ শেনওয়ারি / নাজিবুল্লা জাদরান, মহম্মদ নবি, গুলবদন নইব, রশিদ খান, আফতাব আলম, মুজিবুর রহমান।