এশিয়া কাপ ২০১৮, ভারত বনাম পাকিস্তান রাউন্ড ২, হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আশায় ক্রিকেটপ্রেমীরা
রবিবার, এশিয়া কাপ ২০১৮-এর সুপার ফোর পর্বে ভারত ও পাকিস্তান আবারো মুখোমুখি হচ্ছে। জেনে নিন সেই ম্যাচের প্রিভিউ ও দুই পক্ষের সম্ভাব্য প্রথম এগারো সম্পর্কে।
রবিবার আরও এক ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। এক বছর ধরে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মুখোমুখি না হওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যেই দু-দুটি ম্যাচ! গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচের নিরিখে এই পাকিস্তান দলকে গুরুত্ব না দিলে কিন্তু ঠকতে হতে পারে।
এর কারণ পাকিস্তান দলের উপর ভরসা নেই। কখন তারা জলে ওঠে তার কোনও পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যেমনটা ঘটেছিল। গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে ভারত ১২৪ রানে হারিয়েছিল। অথচ ১৫ দিন যেতে না যেতেই ফাইনালে সেই পাকিস্তানই ভারতকে ১৮০ রানের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছিল। কাজেই পাকিস্তান দলকে কখনই সমীকরণের বাইরে ফেলা যায় না।
গত বুধবারের ম্যাচটি এতটাই একপেশে ছিল যে ক্রিকেটপ্রেমীদের তৃষ্ণা মেটেনি। রবিবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে অবশ্য ভারতীয় সমর্থকদের খারাপ লাগার কোনও কারণ নেই। কিন্তু সেরকমটা হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু কম। বুধবারের পরই পাক কোচ মিকি আর্থার দলের খেলার উন্নতির জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। আফগানিস্তান ম্যাচে দেখা গিয়েছে তাতে দল কিন্তু সাড়া দিয়েছে। শেষ অবধি লড়াই করে জয় ছিনিয়ে এনেছেন পাক ক্রিকেটাররা।
এখনও অবধি একমাত্র হংকং ম্যাচ ছাড়া ভারতের এশিয়া কাপে চ্যালেঞ্জ ছিল প্রায় পার্কে জগিং করার মতোই সহজ। প্রথম ম্যাচে হংকং-এর বিরুদ্ধে কিছুটা থমকানো ছাড়া অত্যন্ত মসৃণ গতিতে এগিয়েছে ভারতীয় দল। এমনকী দলের একমাত্র দোরে বোলার অলরাউন্ডার হার্দিক পাণ্ডিয়া চোটের কবলে পড়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলেও দলের খেলায় এখনও অবধি তার কোনও প্রভাবই পড়েনি।
রবিবার বিকেল পাঁচটায় সুপার ফোরে ভারত-পাক ম্যাচের বল গড়ানোর আগে ভারত এখনও পর্যন্ত অপরাজিতই রয়েছে। অপরদিকে শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে রুদ্ধশ্বাস জয় তুলে নিয়ে পাকিস্তান দলও ভারত ম্যাচের পরাজয়ের গ্লানি কাটিয়ে উঠে ফের আত্মবিশ্বাসী। রবিবারের ম্যাচ যারাই জিতবে এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠা তাদের একপ্রকার নিশ্চিত।
কাজেই বুধবারের মতো একপেশে নয়, চিরকাল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বলতেই যে হৃৎস্পন্দন বাড়ানো, উত্তেজনায় ছটফট করা ম্যাচ দেখতে অভ্যস্ত ক্রিকেট দুনিয়া, সেরকমই একটি ম্য়াচ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ক্রিকেট সমর্থকদের আশা ম্যাচ এমন হবে যে শেষ বল অবধি আসন আঁকড়ে বসে থাকতে হবে।
দুবাইয়ে দুটি পিচে খেলা হচ্ছে। এখনও অবধি কিন্তু কোনও ম্যাচেই ৩০০ রাণের গণ্ডি পার করেনি কোনও ম্যাচের স্কোর। ২৫০ থেকে ২৮০ রানই জেতার জন্য যথেষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ ম্যাচের ভারতীয় প্রথম এগারো এই ম্যাচে সম্ভবত অপরিবর্তিতই থাকবে। হার্দিক চোট পাওয়ায় দলের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু তাঁর জায়গায় রবীন্দ্র জাদেজা এমন খাপে খাপে এঁটে গিয়েছেন, যে সেই চিন্তাও দূর হয়েছে।
পাকিস্তান দলের সামনে কিন্তু প্রথম এগারো নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে। হ্যারিস সোহেল না ফাহিম আশরাফ? শাদাব খান না কি মহম্মদ নওয়াজ? শাহিন আফ্রিদি না মহম্মদ আমির? ভারতের বিরুদ্ধে নামার আগে কিন্তু এইগুলির সমাধান করতে হবে।
তিনটি প্রশ্নের প্রথমটির উত্তর সবচেয়ে কঠিন। হ্যারিস বা ফাহিমের কেউই এই টুর্নামেন্টে দারুণ কিছু করে দেখাতে পারেননি। দ্বিতীয় প্রশ্নের ক্ষেত্রে অনেক কিছু নির্ভর করছে শাদাবের ফিটনেসের উপর।
ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ২ ওভার বল করতে না করতেই তিনি চোট পেয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। আফগানিস্তান ম্যাচে খেলতে পারেননি। তাঁর চোট সেরে গিয়ে থাকলে কিন্তু পাকিস্তানের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন হবে। কারণ, তাঁর বদলে দলে এসে মহম্মদ নওয়াজ আগের ম্যাচে ৫৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন।
পাকিস্তান পেস বোলিংয়ের নেতা মহম্মদ আমির কিন্তু এই বছর তিনি একেবারেই ফর্মে নেই। এই বছর খেলা ৮টি একদিনের ম্যাচ থেকে তাঁর উইকেট সংগ্রহ মাত্র ৩টি। এই কটি উইকেট তাঁর বদলে অভিষেক হওয়া শাহিন আফ্রিদি শুধু আফগানিস্তান ম্যাচ থেকেই তুলে নিয়েছেন। কিন্তু আফগান ব্যাটিং আর ভারতীয় ব্যাটিং তো আর এক নয়। কাজেই আমিরের মতো সিনিয়রকে বসিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে স্নায়ুর চাপের ম্যাচে ১৮ বছরের শাহিনকে খেলানোর ঝুঁকি সম্ভবত তারা নেবে না।
দেখে নেওয়া যাক সুপার সানডে-তে দুই দলের সম্ভাব্য প্রথম একাদশ -
ভারত: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শিখর ধাওয়ান, আম্বাতি রায়ডু, দীনেশ কার্তিক, এমএস ধোনি (উইকেটরক্ষক), কেদার যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, ভূবনেশ্বর কুমার, কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চাহাল, জসপ্রিত বুমরা।
পাকিস্থান: ফখর জামান, ইমাম উল হক, বাবর আজম, শোয়েব মালিক, সরফরাজ আহমেদ (অধিনায়ক ও উইকেটরক্ষক), ফাহিম আশরাফ / হ্যারিস সোহেল, আসিফ আলি, শাদাব খান / মহম্মদ নওয়াজ, হাসান আলি, উসমান খান, মহম্মদ আমির।