ফিরে দেখা এশিয়া কাপ, শেষ ওভারে পরপর ২টি ছয় মেরে ভারতের হাত থেকে জয় ছিনিয়ে নেন আফ্রিদি
এশিয়া কাপ ২০১৪-র ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে শাহিদ আফ্রিদি শেষ ওভারে ২ টি ছক্কা মেরে তাঁর দলকে জিতিয়েছিলেন। নস্টালজিয়া সরণী ধরে সেই ম্যাচে ঘুরে আসা যাক।
শাহিদ আফ্রিদিকে কেউ কেউ বলেন, আনঅর্থোডক্স, কেউ বলেন উন্মাদ আবার কেউ বলেন জিনিয়াস। সম্ভবত, এই সবকটির সংমিশ্রনেই গড়া হয়েছে তাঁকে। খুব অল্প বয়সেই দ্রুততম সেঞ্চুরি করে পাক সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তারপর দীর্ঘ কেরিয়ারে কখনও জুটেছে রাগ, কখনও অকৃত্রিম ভালবাসা। কিন্তু ২০১৪ সালে বাংলাদেশে আয়োজিত এশিয়া কাপের ভারত-পাক ম্যাচে আফ্রিদির 'পাগলামী' ভক্তদের মনের মণিকোঠায় রয়ে গিয়েছে।
সেইবার ঢাকার পিচ ছিল স্লো, স্পিন সহায়ক। বল থমকে থমকে আসছিল ব্যাটে। প্রথমে ব্য়াট করে ভারত। শিখর ধাওয়ান রোহিত শর্মা ও রবীন্দ্র জাদেজার অর্ধশতকের উপর ভর করে ২৪৫ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল ভারত। এমনিতে এই তিন ব্যাটসম্য়ানই স্ট্রোক প্লেয়ার। কিন্তু সেইদিন তাঁদের হাফ সেঞ্চুরির বেশিরভাগ রানই এসেছিল দৌড়ে রান নিয়ে। এতটাই কঠিন ছিল সেই পিচে স্ট্রোক খেলা।
কাজেই ৫০ ওভারে ২৪৬ রান তোলা পাকিস্তানের পক্ষে খুব সহজ কাজ ছিল না। কিন্তু পাক ব্যাটসম্য়ানরা ভাল জবাব দিয়েছিলেন। আহমেদ শেহজাদ ৪৪ বলে করেন ৪২। মহম্মদ হাফিজ ১১৭ বলে ৭৫ ও শোয়েব মাকসুদ ৫৩ বলে ৩৮ করে যান। এই তিন ইনিংসের জোরে শেষ ২ ওভারে পাকিস্তানের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩ রানের।
যখন মনে হচ্ছে পাকিস্তানের জয় স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। তখনই পাল্টে যায় ম্য়াচের গতি। সৌজন্যে ৪৯তম ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারের অসাধারণ বোলিং। মাত্র ৩ রান দেন তিনি সেই ওভারে। সঙ্গে তুলে নেন উমর গুল ও মহম্মদ তালহার উইকেট।
শেষ ওভার করার গুরুভার ভারত অধিনায়ক কোহলি দিয়েছিলেন অশ্বিনের নিশ্চিন্ত হাতে। সেই ম্যাচে তখন অবধি খুব কৃপন বল করেছিলেন অশ্বিন। অধিনায়কের ভরসার মর্যাদা দিয়েছিলেন অশ্বিন প্রথম বলেই। ক্যারম বলে তুলে নেন সঈদ আজমলের উইকেট। ফলে মাত্র ৭ বলের মধ্যে পাকিস্তান ৩ উইকেট হারায়। রান ওঠে মাত্র ৩।
কিন্তু সেই বিখ্যাত সিনেমার ডায়লগের মতো 'পিকচার' তখনও বাকি ছিল। কারণ উল্টোদিকের ক্রিজে ছিলেন আফ্রিদি ও তাঁর ব্যাট। পাকিস্তানের শেষ ব্যাটসম্য়ান একটি সিঙ্গলস নিলে স্ট্রাইক পান আফ্রিদি।
বল করতে গিয়ে আফ্রিদি এগিয়ে আসছে দেখে শর্ট পিচ় ডেলিভারি করেন অশ্বিন। তাতে আফ্রিদিকে থামানো যায়নি। আফ্রিদির ব্যাচের নিচের কানায় লেগেছিল বলটি। তাও এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে বল চলে যায় সীমানার ছাড়িয়ে। ছয়। তার পরের বলেও একই ফল। শুধু এইবার বল আফ্রিদির ব্যাচের লিডিং এজে লেগে গিয়েছিল লং অফ দিয়ে মাঠের বাইরে।
তারপরের ছবি ক্রিজের মাঝখানে দুহাত ছড়িয়ে আফ্রিদি তাঁর মিলিয়ন ডলারের হাসি মুখে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। দু'বলেই ভারতের জেতার স্বপ্নে জল ঢেলে দিয়েছিলেন এই পাক ক্রিকেটার।