ফিরে দেখা এশিয়া কাপ, জাভেদ মিয়াঁদাদের শেষ বলের ছয় ও অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ
১৯৮৬ সালে প্রথমবার খেলা হয়েছিল অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ। ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে জাভেদ মিয়াঁদাদ ম্যাচের একেবারে শেষ বলে ছয় মেরে পাকিস্তানকে জিতিয়েছিলেন।
আজকের আধুনিক ক্রিকেটের জন্ম হয়েছিল গত শতাব্দীর আটের দশকে। সেই সময়ই ক্রিকেটে টাকা ঢুকতে শুরু করেছিল। ক্রিকেট হয়ে উঠেছিল পেশাদারদের খেলা। টেলিভিশনে আরও বেশি বেশি করে ম্যাচের সম্প্রচার শুরু হয়েছিল। ভারতীয় উপমহাদেশে তারকার মর্যাদা পেতে শুরু করেছিলেন ক্রিকেটাররা। সব মিলিয়ে ক্রিকেট খেলায় একটি বিপ্লব ঘটে গিয়েছিল।
সেই সময় আব্দুর রহমান বুখাতির নামে এক ক্রীড়ামোদী ব্যবসায়ীর মাথায় ক্রিকেট থেকে উপার্জনের কথা আসে। উপমহাদেশে তার কয়েক বছর আগেই শুরু হয়েছিল এশিয়া কাপ। বুখাতির এই টুর্নামেন্টকেই আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যান। ১৯৮৬ সালে ভারতীয় ও অস্ট্রেলিয়, দুই উপমহাদেশের সেরা দলগুলিকে নিয়ে একসঙ্গে এক টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিলেন তিনি। যার নাম ছিল অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপের বাইরে এটিই ছিল প্রথম গ্লোবাল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। সেই বছর এশিয়া কাপ জেতার সুবাদে শ্রীলঙ্কা সরাসরি সেমিফাইনাল থেকে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। শারজায় আয়োজিত ওই টুর্নামেন্টে বেশ কিছু ভাল খেলা হলেও, সবচেয়ে স্মরণীয় ছিল অবশ্যই ফাইনালের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ।
দুই দলেই সেইসময় অনেক বড় বড় ক্রিকেটার ছিলেন। তার উপর রাজনৈতিক টানাপোড়েন সেই ম্যাচকে অন্য মাত্রা দিয়েছিল। ভারত প্রথমে ব্য়াট করেছিল। গাভাস্কারের ৯২, শ্রীকান্তের ৭৫ ও দিলীপ ভেঙ্গসরকারের ৫০ রানের জোরে, ৫০ ওভারে ভারত ৭ উইকেট হারিয়ে ২৪৫ রান তুলেছিল।
তখনকার দিনের নিরিখে রানটা যথেষ্ট বেশি ছিল। তবে ভারত আরও বেশি রান তুলতে পারত। একটা সময় ভারতের রান ছিল মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ২১৬। কিন্তু ম্যাচের শুরুতে দাগ কাটতে না পারলেও শেষদিকে ছোবল মেরেছিলেন ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রমরা।
পাকিস্তানের হয়ে ভারতের এই বড় স্কোরের জবাব একাই দিয়েছিলেন জাভেদ মিয়াঁদাদ। ১১৪ বলে তিনি ওই ম্যাচে ১১৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। এছাড়া পাক ইনিংসে বলার মতো রান ছিল শুধুমাত্র মহসিন খান ও আব্দুল কাদিরের। তাঁরা ৩০-এর ঘরে রান করেছিলেন। তবে মিয়াঁদাদ ওই ইনিংসের জন্য নয়, চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন বলা যায় একটি মাত্র বলের জন্য। সেটি ছিল ম্যাচের একেবারে শেষ বল।
শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ১১ রান। এখনকার টি২০-র যুগে এই রানকে কিছু মনে না হলেও, তখনকার দিনে লক্ষ্যটা ছিল বেজায় কঠিন। ভারতের হয়ে বল করতে এসেছিলেন চেতন চৌহান। শেষের সেই ওভারে রান আউট হন আক্রম। জুলকারনাইনের উইকেট তুলে নেন চেতন।
ম্যাচ এসে দাঁড়ায় শেষ বলে। পাকিস্তানের জেতার জন্য দরকার ছিল ৪ রান। স্বাভাবিকভাবেই চেতন শেষ বলটি ইয়র্কার ডেলিভারি করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তা করতে পারেননি। বদলে মিয়াঁদাদের কোমরের উচ্চতায় ফুলটস বল আসে। বলটিকে সপাটে তুলে মেরে গ্যালারিতে পৌঁছতে ভুল করেননি মিয়াঁদাদ।
তাঁর ওই ছয় ও তারপর তৌসিফ আহমেদকে নিয়ে দুহাত তুলে বিজয়ীর দৌড়ের দৃশ্য, ভারতকে বহুদিন অবধি দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করেছিল। কারণ ওই ম্যাচ থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে শারজায় পাকিস্তানের আধিপত্যের সূচনা ঘটেছিল। যা চলেছিল গোটা ৯'য়ের দশক ধরে। ওই একটি ছয়েই পাকিস্তানের জাতীয় নায়ক হয়ে গিয়েছিলেন মিয়াঁদাদ।
এরপরের তিন বছরও আয়োজন করা হয়েছিল অস্ট্রাল-এশিয়া কাপের। প্রতিবারই এই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। তারপর ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক অন্য়ান্য টুর্নামেন্টের চাপে বন্ধ হয়ে যায় এই টুর্নামেন্ট।