এশিয়ান কাপ ২০১৯: থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও বাহরিন - জেনে নিন ভারতের প্রতিপক্ষদের
এএফসি এশিয়ান কাপ ২০১৯-এর গ্রুপ এ-তে ভারতের তিন প্রতিপক্ষ - থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও বাহরিন সম্পর্কে জানুন।
২০১৭ সালে ভারত এশিয়ান কাপে খেলার ছাড়পত্র লাভ করেছিল। তারপর থেকে গত একবছর ধরে ভারতের ফুটবল-প্রেমীরা এই টুর্নামেন্টের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছেন। আর মাত্র ৩ দিন, তারপরেই সেই প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। আগামী শনিবার (৫ জানুয়ারি) থেকেই শুরু হয়ে যাবে এশিয়ান কাপ ২০১৯। এই টুর্নামেন্টে অন্তত দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে এশিয়ায় নিজেদের শক্তি জাহির করতে চাইছে ভারত।
কাজটা অবশ্য বেশ কঠিন। কারণ ভারত যে গ্রুপ এ-তে রয়েছে, সেই গ্রুপের বাকি তিন দল - থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও বাহারিন। থাইল্যান্ডকে বাদ দিলে বাকি দুই দলই ভারতের থেকে ধারে ভারে অনেকটাই এগিয়ে আছে। বাহারিনের কাছে সাম্প্রতিক অতীতে বেশ কয়েকার হারতে হয়েছে ভারতকে। তবে গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। আয়োজক দেশ হওয়ায় তাদের পক্ষে থাকবে দর্শক-সমর্থনও।
আবুধাবির মাঠে বল গড়ানো শুরু হওয়ার আগে এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, এশিয়ান কাপ ২০১৯-এর ভারতের গ্রুপ প্রতিপক্ষদের। দেখে নেওয়া যারক কোথায় দাঁড়িয়ে আছে ভারতীয় দল। কারাই বা এবারের এশিয়ান কাপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন।
|
থাইল্যান্ড
৬ জানুয়ারি থাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্য়াচ দিয়েই কাপ অভিযান শুরু করছে ভারত। প্রথম প্রতিপক্ষ অবশ্য সুনাীলদের জন্য সহজই। বর্তমানে ফিফা ক্রমতালিকায় ১১৮তম স্থানে থাকা থাইল্যান্ড ১২ বছর ফিরছে টুর্নামেন্টে। ১৯৭২ সালে এই প্রতিযোগিতায় তারা ততীয় স্থান পেয়েছিল। তারপর থেকে পাঁচবার গ্রুপ স্তর থেকেই বিদায় নিয়েছে। এই পাঁচবারে তারা গোল করতে পেরেছে মাত্র ১টি।
মিলোভান রাজেভাক-এর কোচিং-এ অবশ্য এশিয়ান কাপের দ্বিতীয় কোয়ালিফাইং পর্বে তারা গ্রুপ চ্য়াম্পিয়ন হয়েছিল। তবে সম্প্রতি সুজুকি এএফএফ কাপে সেমিফাইনালেই মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে হেরে বিদায় নিতে হয়েছে।
তারকা - চানাথিপ সঙ্ক্রাসিন, তিরাসিল দাঙ্দা
|
সংযুক্ত আরব আমিরশাহি
ভারতীয় দলের একাধিক খেলোয়াড় আয়োজক দেশকেই তাদের গ্রুপের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার এশিয়ান কাপ আয়োজন করছে ইউএই। এখনও এবারও কাপ জিততে না পারলেও এর আগে ১৯৯৬ সালে ঘরের মাঠে তাঁরা কিন্তু রানার আপ হয়েছিল। এসি মিলান, ইন্টার মিলান ও জাপানের প্রাক্তন কোচ অ্যালবার্তো জাছেরোনি-এর কোচিং-এ আয়োজক দেশই গ্রুপ এ-এর মধ্যে ফিফা ক্রমতালিকায় (৭৯) সবচেয়ে এগিয়ে থাকা দল।
ঘরের মাঠে কাপ জিততে মরিয়া আমিরশাহি প্রস্তুতিতে কোনও খুঁত না রাখলেও তাদের তারা প্লেমেকার ওমর আবদুল্লারহিম-ই চোটের জন্য খেলতে পারবেন না এই টুর্নামেন্টে। কাজেই তাদের কাপ পরিকল্পনা কিছুটা হলেও ঘেঁটে গিয়েছে। সম্প্রতি ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচে, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে হারও চাপে রেখেছে তাদের ইতালিয় কোচকে। ২০১১ সালে জাপানের হয়ে এই কাপ জিতেছিলেন তিনি। তবে তাঁর সামনে চ্যালেঞ্জটা এবার বেশ কঠিন।
তারকা - ইসমাইল আল হামাদি, খালিদ এসা
|
বাহরিন
এই নিয়ে পর পর পাঁচবার ও সব মিলিয়ে ষষ্ঠবার এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চলেছে বাহরিন। ২০০৪ সালে চিনে আয়োজিত এশিয়ান কাপে তারা চতুর্থ হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টে এটিই তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
বাহরিনকে অবশ্য এশিয়ান কাপে খেলার ছাড়পত্র আদায়ের জন্য যোগ্যতা অর্জনের তৃতীয় রাউন্ড পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এশিয়ান কাপের প্রস্তুতির জন্য তাদের চেক কোচ মিরোস্লাভ সউকুপ কিন্তু বেশ কয়েকটি ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্য়াচ খেলিয়েছেন দলকে।
প্রথম দিকে সিরিয়ার কাছে হার, চিন ও ফিলিপাইন্সের বিরুদ্ধে ড্র করে বেশ চাপে পড়ে গিয়েছিল বাহরিন দল। এরপর মায়ানমারের বিরুদ্ধে জয় পেলেও ফের গত নভেম্বরে ওমানের বিরুদ্ধে ১-২ গোলে হারতে হয়। কিন্তু তারপর থেকে পর পর তাজিকিস্তান, লেবানন ও উত্তর কোরিুয়ার বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়ে এই মুহূর্তে দারুণ ছন্দে তারা। এই তিন ম্য়াচে ১০ গোল দিয়েছে তারা, হজম করেছে মাত্র ১টি।
তারকা - আবদুল্লা ইউসুফ হেলাল, আলি মদন
|
কোথায় দাঁড়িয়ে ভারত?
এই নিয়ে চতুর্থবার ভারত এই টুর্নামেন্টের মূলপর্বে উঠেছে। এর আগে ১৯৬৪, ১৯৮৪ ও শেষবার ২০১১ সালে এই প্রতিয়োগিতায় খেলার সুযোগ পেয়েছিল ভারত। একসময় আমাদের দেশ যে এশিয়া অন্যতম ফুটবল শক্তি ছিল তা বোঝা যায় ৬৪ সালে এই টুর্নামেন্টে রানার আপ হওয়ার তথ্য থেকেই। তারপর সেখান থেকে নামতে নামতে ২০১৫ সালে ফিফা ক্রমতালিকায় ১৭৩ নম্বর স্থানে পৌঁছে গিয়েছিল।
গত তিন বছরে অবশ্য ব্রিটিশ কোচ কনস্চটানটাইনের অধীনে অনেক উন্নতি করেছে ভারতীয় ফুটবল দল। বর্তমানে ফিফা ক্রমতালিরকায় (৯৭) প্রথম ১০০টি দেশের মধ্যেও উঠে এসেছে। বস্তুত ভারত তাদের গ্রুপে ক্রম অনুযায়ী ইউএই-এর পরেই আছে। কিন্তু ক্রমিক সংখ্যা দিয়ে তো টুর্নামেন্ট জেতা যায় না। কাজেই পরের রাউন্ডে উঠকে হলে কঠিন লড়াই করতে হবে সুনীলদের।
প্রতি গ্রুপের শীর্ষ দুই দল যাবে পরের রাউন্ডে। আমিরাশাহিকেই ভারতের গ্রুপের সেরা দল মনে করা হচ্ছে। অবশ্য ভারত তৃতীয় হলেও একটা সম্ভাবনা থাকবে শেষ ষোলয় ওঠার, কারণ সেরা ৪টি তৃতীয় স্থানাধিকারী দলও যাবে নকআউট পর্বে।
ভারতকেও যোগ্যতা অর্জনের জন্য তৃতীয় রাউন্ড পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিককালে ভারতীয় দল গোল করার অভাবে ভুগছে। জাতীয় দলে একমাত্র সুনীল ছেত্রি ছাড়া আর কেউ গোলের মধ্যে নেই। তবে আশা জাগাচ্ছে রক্ষণ। চিন, ওমানের মতো শক্তিশালী দলকে রুখে দিয়েছে ভারতীয় রক্ষণ।
তারকা - সুনীল ছেত্রি, গুরপ্রিত সিং সান্ধু
|
কাপ জেতার প্রধান দাবিদার
এশিয়ান কাপ ২০১৯ জেতার প্রধান দাবিদার হিসেবে ধরা হচ্ছে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা জাপান, জার্মানিকে ছিটকে দেওয়া দক্ষিণ কোরিয়া, ও ২০১৫ সালের বিজয়ী অস্ট্রেলিয়াকে। এছাড়া সিরিয়াও দৌড়ে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।