ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া, অ্যাডিলেড টেস্ট: লড়লেন পুজারা, কিন্তু দিনের শেষে এগিয়ে থাকল অজিরাই
অ্যাডিলেডে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া প্রথম টেস্টের প্রথম দিনের প্রতিবেদন।
বলা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাদের দেশে টেস্ট সিরিজ জেতার এটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ ভারতের। কিন্তু সেই সিরিজের শুরুতেই হোঁচট খেল বিরাট বাহিনী। ইংল্যান্ডের পর আরও একবার বিদেশের মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ল ভারতের টপ অর্ডার। চুড়ান্ত ব্যর্থতার মধ্য়ে শতরান করে ভারতের ইনিংস একা টানলেন চেতেশ্বর পুজারা (১২৩)। তাঁর জন্যই দিনের শেষে ভারতের রান ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫০-এ পৌঁছল।
টে জিতে প্রথমে ব্য়াট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কোহলি। কিন্তু দিনের দ্বিতীয় ওভারেই লোকেশ রাহুলকে তুলে নিয়ে দিনের সুরটা বেঁধে দিয়েছিলেন জশ হ্যাজেলউড। শরীর থেকে দূরের বল ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন রাহুল। বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে জমা পড়ে থার্ড স্লিপের হাতে।
এই ড্রাইভের ফাঁদেই ভারতীয় ব্যাটসম্য়ানদের আটকে দেন অজি পেসাররা। সপ্তম ওভারে প্রায় একই কায়দায় অউট হন মুরলি বিজয়ও। হ্যাজেলউডের বল বেশ কয়েকবার তাঁর ব্যাটের কানায় লাগে। তবে শেষ অবধি মিচেল স্টার্কের পাতা ফাঁদে পা দেন তিনি। দুরন্ত এক শর্ট বলের পরের বলটাই অফস্টাম্পের বাইরে রেখেছিলেন স্টার্ক। বিজয়ও সেই লোভ সামলাতে পারেননি।
তবে দিনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা ভারত খেয়েছিল ১১তম ওভারে। আরও একবার প্য়াট কামিন্সের বলে আউট হলেন বিরাট কোহলি। তাঁকে আটকানোর জন্য নানা পরিকল্পনা করেছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে তিনিও যে আগের দুই ব্য়াটস্য়ানের মতোই ড্রাইভের ফাঁদে পড়েন তা বোধহয় অজি বোলাররাও ভাবেননি। কামিন্সের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই গালির উপর দিয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে উসমান খোয়াজার হাতে ধরা পড়েন ভারত অধিনায়ক।
এদিন ১৬ বল খেল মাত্র ৩ রান করেন তিনি। তবে তাঁর আউটের পিছনে যতটা না কামিন্সের কৃতিত্ব, তার চেয়েও বেশি কৃতীত্ব খোয়াজার। মাথার উপর দিয়ে তীব্র গতিতে যাওয়া বলটি তিনি প্রায় উড়ে গিয়ে একহাতে তালুবন্দী করেন। ভারতের রান ছিল সেই সময় ১৯-৩।
এরপর নাথান লিয়নকে আক্রমণে এনেছিল অস্ট্রেলিয়া। এই সময় অল্প সময়ের জন্য রাহানে ও লিয়নের মধ্যে আকর্ষঁণীয় লডৈা়ই দেখা গিয়েছিল। প্রথমে অবশ্য তাঁর বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়েছিলেন রাহানে। কিন্তু সেই বল হাতে ধরে রাখতে পারেননি হ্যান্ডসকম্ব। এরপরই লিয়নকে স্টেপ আউট করে মারতে শুরু করেন রাহানে।
ঠিক যে সময় মনে করা হচ্ছিল রাহানে ও পুজারার মধ্যে প্রয়োজনীয় জুটি গড়ে উঠতে পারে, সেই সময়ই আক্রমণে ফিরিয়ে আনা হয় হ্যাজেলউডকে। আর তিনি ফিরতেই সেই এক ড্রাইভের ফাঁদে পা দেন রাহানেও। তাঁর সংগ্রহ মাত্র ১৩।
এরপর ভারতের ইনিংসকে কিছুটা স্থিতাবস্থায় ফেরান পুজারা ও রোহিত শর্মার জুটি। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগেই হাত খুলতে শুরু করেছিলেন রোহিত, একটি ছয় ও মারেন তিনি। বিরতির পর আরও আক্রমণাত্বক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এমনকী কামিন্সকে এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে একটি ছয়ও মারেন তিনি।
কিন্তু, সামিত ওভারের খেলায় রোহিত যতটাই কারযকরী, টেস্টের খেলাটা তাঁর এখনও রপ্ত হয়নি আরও একবার প্রমাণ হয়ে য়ায় এইদিন। ৩৭ রান করার পথে তিনি ৩টি ছয় মেরেছেন। শেষ ছয়টি এসেছিল ভাগ্যের জোরে। মার্কাস হ্যারিস সেই বল তালুবন্দী করার পরও ভারসাম্য রাখতে না পেরে বাউন্ডারি অতিক্রম করে ফেলেছিলেন।
কিন্তু এতেও সতর্ক হননি হিটম্যান। ফের একবার নাতান লিয়নের বলে ছয় মারতে গিয়েই তিনি সময়ে ভুলে ডিপ স্কোয়ার লেগে সেই হ্যারিসের হাতেই ক্য়াচ দিয়ে ফিরে যান।
এরপর ক্রিজে এসেছিলেন পন্থ। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার পিচে তিনি মারবেন না ধরে খেলবেন তাই ঠিক করতে পারলেননা। কিছু বলে অতিরিক্ত রক্ষণাত্বক খেললেন, আবার কিছু বলে ব্য়াট চালালেন। শেষ পর্যন্ত লিয়নের বল তাঁর ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে টিম পেইনের গ্লাভসে।
উল্টো দিকে যখন এই আসা-যাওয়ার মিছিল চলছিল, তখন উল্টোদিকে এই পিচে কীভাবে ব্য়াট করা উচিত দেখাচ্ছিলেন পুজারা। কোনও রকম তাড়াহুড়ো না করে, অফস্টাম্পের বাইরে পাতা ড্রাইভের ফাঁদে পা না দিয়ে ভারতের ইনিংস-কে টানলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম ইনিংসেই পুজারার শতরান পাওয়াটা কিন্তু ভারতের পক্ষে অত্যন্ত সুখবর।
আর অশ্বিনকে সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ে ভালই এগোচ্ছিলেন তিনি। চা বিরতির পরই সম্পূর্ণ করেন তাঁর অর্ধ শতরান। কিন্তু তাদের ৬২ রানের জুটি থেমে যায় কামিন্সের হাতে। তাঁর একটি আউট সুইঙ্গার অশ্বিনের ব্য়াট ছুঁয়ে জমা পড়ে স্লিপে।
এরপর ভারতের ব্য়াটিংয়ের লেজ বেরিয়ে গেলে এতক্ষণের স্থিতধী পুজারাও রান তোলার গতি বাড়িয়ে দেন। ২৩১ বলে তাঁর কেরিয়ারের ১৬তম ও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথম শতরান সম্পূর্ণ করেন তিনি।
তবে
তাঁর
এই
দুর্দান্ত
লড়াই
সত্ত্বেও
দিনের
শেষে
এই
টেস্টে
এগিয়ে
আছে
অস্ট্রেলিয়াই।
একটি
দ্রুত
একরান
নিতে
গিয়েছিলেন
পুজারা।
বল
ছিল
স্টাম্পের
সামান্য
দূরেই।
প্যাট
কামিন্স
মিড
অন
থেকে
দৌড়ে
এসে
সেই
বল
ধরে
উইকেট
ভেঙে
দেন।
রান
আউট
হয়ে
যান
পুজারা।
শেষ
পর্যন্ত
তিনি
করেন
১২৩৪
রান।
ক্রিজে
অপরাজিত
আছেন
শামি
ও
বুমরা।