ভারতের ২০১৯-এর বিশ্বকাপ দল সবচেয়ে বয়স্ক; ক্রিকেট বয়সের খেলা নয়, ফিট মানুষের খেলা
গত ১৫ এপ্রিল ভারত আসন্ন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জন্যে তাদের ১৫ জনের দল ঘোষণা করেছে।
গত ১৫ এপ্রিল ভারত আসন্ন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের জন্যে তাদের ১৫ জনের দল ঘোষণা করেছে। বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন এই দলের নির্বাচন নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন উঠলেও (যেমন কেন অম্বাতি রায়ুডুর জায়গায় বিজয় শঙ্কর বা ঋষভ পন্থের জায়গায় দীনেশ কার্তিক) কিন্তু মোটের উপরে, নির্দিষ্ট ১৫জনের উপরে আস্থা রেখেছে প্রায় সবাই, ভারতকে তাদের তৃতীয় বিশ্বকাপ জেতার আশায়।
পরিসংখ্যান বলছে, দ্বাদশতম বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেওয়ার জন্যে যে ভারতী দলটিকে বাছাই করা হয়েছে, তা আজ পর্যন্ত নির্বাচিত প্রত্যেকটি বিশ্বকাপ দলের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক। এই দলটির গড় বয়স সাড়ে ঊনত্রিশ বছর। এই দলে সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় হচ্ছেন প্রাক্তন অধিনায়ক এবং উইকেটরক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় 'চায়নাম্যান' বোলার কুলদীপ যাদব (২৪)। দলনেতা কোহলির বয়স তিরিশের কিছু বেশি।
এর আগে ভারতের সবচেয়ে বয়স্ক বিশ্বকাপের দল ছিল ২০১১ সালে, দেশের মাটিতে। ধোনির নেতৃত্বাধীন সেই দলটির গড় বয়স ছিল ২৮.৩ বছর। সেই দলের সবচেয়ে বয়স্ক খেলোয়াড় ছিলেন সচিন তেন্ডুলকর (৩৭) এবং সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় ছিলেন ২১ বছর বয়সী পীযূষ চাওলা।
বিশ্বকাপে ভারতের সবচেয়ে কমবয়সী দল ছিল ১৯৯২ সালে; কিন্তু কতটা ফিট ছিল সেই দল?
অন্যদিকে, ভারতের সবচেয়ে কমবয়সী বিশ্বকাপগামী দল ছিল ১৯৯২ সালে, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে। সেবার মহম্মদ আজহারউদ্দিনের নেতৃত্বে খেলতে যাওয়া দলটির গড় বয়স ছিল মাত্র ২৫.৪ বছর। সেবারে দলে কপিলদেব ছিলেন সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড় (৩৩ বছর) আর অষ্টাদশ বছরের তেন্ডুলকর ছিলেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ। একদিকে কপিলদেব, শ্রীকান্ত ও অন্যদিকে তেন্ডুলকর, বিনোদ কাম্বলি, অজয় জাদেজা ও প্রবীণ আমরের মতো তরুণ খেলোয়াড়দের মিশেলে তৈরী হয়েছিল সেই দল। বিশ্বকাপে ভারতের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ দল ছিল ২০০৩ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেবার সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বাধীন দলটির গড় বয়স ছিল ২৫.৮ বছর এবং সবচেয়ে বেশি বয়সী ও সবচেয়ে কমবয়সী খেলোয়াড় ছিলেন যথাক্রমে জাভাগাল শ্রীনাথ ও পার্থিব প্যাটেল।
সবচেয়ে বুড়ো দল বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিট দলও বটে
মজার কথা, এবারের বিশ্বকাপে যে দলটি খেলতে যাচ্ছে, তা সবচেয়ে 'বুড়ো' হলেও তার ফিটনেস বিশ্বের অন্যতম সেরা। দলের সবথেকে বেশি বয়স্ক যে খেলোয়াড়, সেই ধোনির ফিটনেস এখনও বিশ্বের সেরাদের মধ্যে ধরা যায়। উইকেটের পিছনে সাঁইত্রিশ বছরের ধোনির ক্ষিপ্রতা এখনও চমকে দেওয়ার মতো। পাশাপাশি, তাঁর রানিং বিটুইন দ্য উইকেটস এখনও যে কোনও কমবয়সী ক্রিকেটারকে লজ্জায় ফেলে দিতে পারে। ব্যাটিং-এ ধোনি এখন আগের তুলনায় মন্থর হলেও পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করতে তাঁর এখনও জুড়ি মেলা ভার।
ত্রিশ পেরোনো কোহলির ফিটনেস নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলার নেই। ত্রিশোর্ধ ওপেনারদ্বয় রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানের ব্যাটিং রিফ্লেক্স এখনও চমকপ্রদ। ভারতের এখনকার জোরে বোলারদের ফিটনেস নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই। মহম্মদ শামি দীর্ঘ চোট আঘাত সরিয়ে এসে যে ফিটনেসের পরিচয় দিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
পাশাপাশি, ১৯৯২ সালের ভারতের সেই কনিষ্ঠতম বিশ্বকাপের দলটির দিকে তাকালে চোখে পড়বে উল্টো ছবি। সেই সময়ে আজহারউদ্দিন, কপিলদেব, তেন্ডুলকর বা জাদেজার মতো কয়েকজনকে বাদ দিলে বেশিরভাগের ফিটনেস ছিল যথেষ্ট হতাশাজনক। বর্তমান কোচ রবি শাস্ত্রীর কথা যেমন ধরা যাক। ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপে তখনকার বছর ঊনত্রিশের রবি শাস্ত্রীর ফিটনেসের অবস্থা ছিল তথৈবচ। হাঁটুর ব্যাথায় জেরবার শাস্ত্রীকে রান নিতে তখন রীতিমতো ঝক্কি পোহাতে হত আর ওপেনিং-এ নেমে তাঁর শ্লথ ব্যাটিং-এর জেরে ভুগত গোটা দল। চোট-আঘাতে জর্জরিত শাস্ত্রী মাত্র ত্রিশ বছর বয়সেই খেলে ফেলেন তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ এবং ক্রিকেটকে বিদায় জানান পরের বছর, ১৯৯৩ সালেই।
ক্রিকেটে ফিটনেস ২৭ বছর পরে কোথায় পৌঁছেছে, তা এই পরিসংখ্যানেই অনুমেয়
সাতাশ বছরের ব্যবধানে ভারতের সবচেয়ে কমবয়সী এবং বুড়ো বিশ্বকাপ দল দু'টির দিকে তাকালে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। বলা হয় ক্রিকেট তরুণদের খেলা কিন্তু আদতে ক্রিকেট ফিট খেলোয়াড়দের খেলা। ভারতীয় ক্রিকেটে এখন নানা কারণে ফিটনেসের মান এখন আগের থেকে অনেক উন্নত। 'ইও-ইও টেস্ট', প্রচুর পরিমানে ক্রিকেট, টি২০ নামক ক্রিকেটের আমদানি ইত্যাদি কারণে খেলোয়াড়দের এখন ব্যাটিং, বোলিং বা ফিল্ডিং-এর পাশাপাশি ফিটনেসের দিকে বাড়তি নজর দিতে হয় আর তাতেই সামগ্রিক মান ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে, ধোনি ও এখন কোহলির জমানায় ভারতীয় দলে ঢোকার ছাড়পত্র পেতে গেলে ফিট থাকাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি আর তার ফল হাতেনাতে পাচ্ছে ভারত, দেশবিদেশের মাটিতে জয়ের মধ্যে দিয়ে।
তাই ক্রিকেটকে শুধুমাত্র বয়েসের ঘেরাটোপে না ফেলে বিশেষজ্ঞদের এবারে উচিত ভারসাম্যের নজরে ব্যাপারটিকে দেখা। নচেৎ, ১৯৯২ সালের সর্বকনিষ্ঠ এবং ২০১৯-এর সর্ববয়স্ক দল আমাদের বেশ বিভ্রান্ত করতে পারে।