হিরো হতে পারতেন 'হেরো'রাই, লড়েও তবু অপূর্ণ রইলেন
হেহিরো হতে পারতেন 'হেরো'রাই, লড়েও তবু অপূর্ণ রইলেন
ব্যাট হাতে একজনের স্লো স্ট্রাইক রেট নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে। আর অন্য জন তো সমালোচকদের চোখে 'ক্ষুদ্র ও টুকরো' ক্রিকেটার। সেই তাঁদেরই ব্যাটে আটকে ছিল ১৩০ কোটি ভারতীয়র স্বপ্ন। প্রার্থনা ছিল, আরো একবার দেশে ফিরুক বিশ্বকাপ। অন্তিমে পারলেন না ঠিকই, কিন্তু যা করে দেখালেন এবং এর জন্য কুড়ানো বাহবা প্রমাণ করে, মোস্টলি এফিসিয়েন্ট ও বিগ ম্যাচ প্লেয়ার বোধহয় তাঁদের নামের পাশেই মানায়।
প্রথম জনের নাম মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং দ্বিতীয় জন রবীন্দ্রাশীষ জাদেজা। ম্যাঞ্চেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে যে লড়াইটা করলেন ভারতের তথাকথিত দুই 'হেরো' ব্যাটসম্যান, তাতে কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। হাতের থেকে বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচ কব্জায় আনলেন শুধু নয়, ভারতকে জয়ের দোড়গোড়ায় দাঁড় করিয়ে সমালোচকদের দিলেন স্পষ্ট বা্র্তা। বোঝালেন, ক্রিকেটটা মাঠে নেমে খেলতে হয়। আর সেই মাঠের রাজা তাঁরাই।
ইনিংসের শুরুতে যখন একের পর এক উইকেট হারাচ্ছে ভারত, তখন কেন অভিজ্ঞ এমএস ধোনিকে উপরের দিকে পাঠানো হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার থেকে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা। তাঁদের মধ্যে এমনও অনেকে আছেন, যাঁরা লিগ পর্যায়ে মাহির একের পর এক মন্থর ব্যাটিং দেখে বলেছিলেন, সিংহ কী তবে গুহায় ঢুকতে চাইছেন। উত্তর দেননি ভারতের সর্বকালের সেরা ক্রিকেট অধিনায়ক। উত্তর দেন না তিনি মুখে বা কোনও মাধ্যমে। দুঃসময়ে তাঁর ব্যাটই কথা বলে। অতীতেও দেখিয়েছেন। দেখালেন এবারও। ২০১৯ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ধোনির খেলা ৭২ বলে ৫০ রানের ইনিংস প্রমাণ করে, সিংহকে সমীহ করাই শ্রেয়।
অন্যদিকে, বিশ্বকাপের শুরু থেকে ভারতীয় দলে জায়গা না পাওয়া বাঁ-হাতি অল-রাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজাকে'ক্ষুদ্র ও টুকরো' ক্রিকেটার বলে কটাক্ষ করেছিলেন কোনও এক ব্যক্তি। তাঁকে মুখে জবাব দিতে ছাড়েননি জাদু। একই সঙ্গে মনে মনে হয়তো সঙ্কল্পও করেছিলেন ফিরে আসার, জবাব দেওয়ার। অবশেষে এল সেই দিন।
লিগ স্তরের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বাঁ-হাতিকে খেলার সুযোগ করে দিয়েছেল টিম ইন্ডিয়া। ১টি উইকেট ও কম রান দিয়ে তিনি ফিরে এলেন। এবার জবাব দেওয়ার পালা। বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালকেই তার মঞ্চ বেছে নিলেন জাদু। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বল হাতে উইকেট নিয়ে ও ব্যাট হাতে ৭৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে প্রমাণ করলেন যে তিনি শুকিয়ে যাননি। ৪টি চার ও ছয়ে বাঁধা জাদেজার এই ইনিংস ভারতকে জয়ের দোড়গোড়ায় দাঁড় করাল। গুরু এমএস ধোনির সঙ্গে ১১৬ রানের পার্টনারশিপ করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারলেন না। তবু বীরের মর্যাদা তাঁর প্রাপ্য এবং পেলেনও। পোয়েটিক জাস্টিস বোধহয় একেই বলে।