স্টোকসের অল-রাউন্ড স্ট্রোকে দক্ষিণ আফ্রিকা জয় ইংল্যান্ডের
স্টোকসের অল-রাউন্ড স্ট্রোকে দক্ষিণ আফ্রিকা জয় ইংল্যান্ডের
২০১৯ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের শুরুটা যদি দক্ষিণ আফ্রিকান স্পিনার ইমরান তাহিরের হয়, তবে বাকিটা জুড়ে কিন্তু শুধুই ইংল্যান্ড। প্রথম ওভার বাদ দিলে ম্যাচের বাকি সময়ে দাপট দেখিয়েছেন ইংরেজরা-ই। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন অল-রাউন্ডার বেন স্টোকস। ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিং মাঠ মাতিয়েছেন শুধুই তিনি।
ফুল হাস লন্ডনের ওভাল ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করার জন্য আমন্ত্রণ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচের প্রথম ওভারেই ৪০ বছরের লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরের হাতে সাদা বল তুলে দেন প্রোটিয়াসদের অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসি। সেটা যে কত বড় মাস্টারস্ট্রোক, তা বোঝা যায় ওভারের দ্বিতীয় বলে। দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়কের আউট অফ দ্য বক্স থিঙ্কিংয়ে রীতিমতো হকচকিয়ে যান ইংরেজরা। আরো স্পষ্ট ভাবে বললে আইপিএল সাড়া জাগানো ব্রিটিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টো হয়তো এমন মুভ একেবারেই প্রত্যাশা করেননি। তাই ম্যাচের তথা তাহিরের ওভারের দ্বিতীয় বলেই আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যান জনি।
১ রানে ১ উইকেট হারিয়ে যখন স্নায়ুর চাপে ভুগছেন ইংরেজ সমর্থকরা, তখনই ইংল্যান্ডের অন্য ওপেনার জেসন রয়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে ম্যাচে ফেরার লড়াই শুরু করেন ওয়ান ডাউন জো রুট। নিখুঁত বোঝাপড়ায় প্রতি ওভারেই ছয়ের ওপর রান রেট বজায় রাখতে সক্ষম হন দুই ইংরেজ ব্যাটসম্যান। রয় ও রুটের মধ্যে ১০৬ রানের পার্টনারশিপ হয়। দুজনেই অর্ধ-শতরান পূর্ণ করেন। ১৮ ওভারের চতুর্থ বলে দলের ১০৭ রানের মাথায় আন্দিলে ফেলুকোয়াও-কে মারতে গিয়ে আউট হন জেসন রয় (৫৪)। ইংল্যান্ডের টোটালে আরো ৪ রান যুক্ত হওয়ার পর কাগিসো রাবাডার পরের ওভারের প্রথম বলেই সাজঘরে ফিরে যান জো রুট (৫১)।
সেই সময় কিছুটা নড়বড়ে মনে হওয়া ইংল্যান্ডের ইনিংসকে টেনে তোলার চেষ্টায় অধিনায়ক ইয়ন মর্গ্যানকে যোগ্য সঙ্গত দেন অল-রাউন্ডার বেন স্টোকস। প্রমাণ করেন কেন এই মুহূর্তে তিনি বিশ্বের অন্যতম দামী ক্রিকেটার। মর্গ্যানের সঙ্গে দলের টোটালে ১০৬ রান যোগ করেন স্টোকস। ইংল্যান্ডের ২১৭ রানের মাথায় নিজের অর্ধ-শতরানের সঙ্গে ৭ রান যোগ করে অধিনায়ক যখন ইমরান তাহিরের বলে আউট হন, তখন স্টোকস নিজের পরিকল্পনা ছকে ফেলেছেন। তাই উইকেটরক্ষক জোস বাটলার (১৮), মইন আলি (৩), ক্রিস ওকসরা (১৩) পরপর ফিরে গেলেও ক্রিজের একদিক শক্ত খুঁটির মতো ধরে রাখেন ব্রিটিশ অল-রাউন্ডার। ইংল্যান্ডের রান ৩০০-তে টেনে নিয়ে গিয়ে ৪৯ ওভারের মাথায় আউট হন স্টোকস। তাঁর ৭৯ বলে ৮৯ রানের ইনিংসে এসেছে ৯টি চার। ৩১১ রানে শেষ হয় ইংরেজদের ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ৩টি উইকেট নেন লুঙ্গি এনগিদি। ২টি করে উইকেট নেন ইমরান তাহির ও কাগিসো রাবাডা।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় প্রোটিয়াসরা। পুরনো চোটে জর্জরিত হাসিম আমলা খেলার মাঝেই উঠে যেতে বাধ্য হন। ফার্স্ট ও সেকেন্ড ডাউনে নামা যথাক্রমে মার্করাম ও অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসি ১১ ও ৫ রান করে জোফ্রা আর্চারের বলে আউট হন। আইপিএলে দুরন্ত ছন্দে থাকা উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক ও রেইসে ভ্যান ডার ডুসেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে ম্যাচে ফেরানোর মরিয়া চেষ্টা করেন। কিন্তু ৭৪ বলে ৬৮ রান করে লিয়াম প্ল্যাঙ্কেটর বলে আউট হন ডি কক। তাঁর পিছু পিছু জেপি ডুমিনি (৮) ও ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসও (১) সাজঘরের পথে হাঁটা লাগান। প্রিটোরিয়াসকে রান আউট করেন বেন স্টোকস। বাউন্ডারি লাইনে অসাধারণ একটি ওয়ান হ্যান্ডেড ক্যাচ নিয়ে আন্দিলে ফেলুকোয়াও-কেও (২৪) প্যাভিলিয়নের রাস্তা দেখান ইংরেজ অল-রাউন্ডার।
এরই মাঝে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা ডেবিউ ম্যান ডুসেনকে (৫০) আউট করে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন জোফ্রা আর্চার। শেষ বেলায় বল হাতে কাগিসো রাবাডা (১১) ও ইমরান তাহিরের (০) উইকেট তুলে প্রোটিয়াসদের কফিনে শেষ পেরেক পোঁতেন সেই স্টোকস-ই। ৩৯.৫ ওভারে ২০৭ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। ১০৪ রানে জেতে ইংল্যান্ড। হোম টিমের হয়ে ৩টি উইকেট নেন আর্চার। স্টোকসের পাশাপাশি লিয়াম প্ল্যাঙ্কেটও নেন ২ উইকেট। ম্যাচে সেরা নির্বাচিত হন ইংল্যান্ডের অল-রাউন্ডার বেন স্টোকস।