মুক্তিযুদ্ধ থেকে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়, বাংলাদেশের পাশে সেই ভারত
স্বাধীনতা লাভ থেকে প্রথম অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়, বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে আবারও ভারত।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে প্রথম অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়, বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে আবারও ভারত। তাই বাইশ গজের শত্রুতা যতই কড়া হয়ে উঠুক, মুক্তিযুদ্ধের মতোই বাংলাদেশ ক্রিকেটে যে ভারতের অবদান ভোলার নয়, তা বলাই বাহুল্য।
পর্ব ১
১৯৭১-র ১৬ ডিসেম্বর। পাকিস্তানের চঙ্গল থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া পূর্ববঙ্গ, গা থেকে পূর্ব পাকিস্তানের তকমা ঝেড়ে ফেলেছিল সেদিনই। দীর্ঘ রক্তাক্ষয়ী সংগ্রামের পর তৈরি হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার। প্রকাশ্যে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন সে দেশের প্রথম স্বাধীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান। কারণ ভারত ছাড়া যে এ লড়াই জেতা সম্ভব হতো না বাংলাদেশের।
পর্ব ২
ভারতকে হারিয়ে প্রথম বারের জন্য অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক আঙিনায় এটাই বাংলাদেশের প্রথম কোনও আইসিসি স্বীকৃত টুর্নামেন্ট জয়ও বটে। তাই এই জয় টাইগার্সদের কাছে স্বাধীনতা লাভের থেকে কম সুখানুভূতিদায়ক যে নয়, তা বলাই চলে। বিপরীত প্রেক্ষাপট হলেও কাকতালীয়ভাবে এক্ষেত্রেও ভারতের অবদান হয়তো ভুলতে পারবে না বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ
১৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের নেতা তথা বঙ্গবন্ধু তথা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। সেই সন্ধিক্ষণ উপলক্ষ্যে সেজে উঠেছে বাংলাদেশ। সেই দিনই ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন মুজিবুর-তনয়া তথা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ১৯৭১-র মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গী তথা ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ তথা কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও নাতি তথা রাহুল গান্ধীকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতে ভোলেননি হাসিনা। যা প্রমাণ করে যে রাজনৈতিকভাবে ভারতকে অনুসরণ করা বাংলাদেশের রীতিতে পরিণত।
একই ভাবে ক্রীড়া ক্ষেত্রেও কার্যত ভারতেরই পদাঙ্ক অবুসরণ করে চলেছে শেখ হাসিনার দেশ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে হার শত দুঃখের হলেও, এই আনন্দের শ্রেয় প্রাপ্য যে ভারতেরও, এ কথা কি অস্বীকার করা যায়?
২০০০-র টেস্ট
২০০০ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে প্রথম বার টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ। পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারত। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন ভারতীয় ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধেই ওই ম্যাচ খেলেছিলেন হাবিবুর বাশাররা। নীল শিবির ওই ম্যাচ ৯ উইকেটে জিতলেও, বাংলাদেশের তরুণ ব্যাটসম্যান আমিনুল ইসলামের ১৪৫ এবং অধিনায়ক নইমুর রহমানের ৬ উইকেট নেওয়ার অনুভূতি আজও দুই দেশের ধমনীতে প্রবাহমান।
সৌরভের আমন্ত্রণ
বিসিসিআই-র সভাপতি হওয়ার পর কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দেশের প্রথম গোলাপি বলের টেস্ট আয়োজন করেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ঐতিহাসিক সেই ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সে উপলক্ষ্যে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম টেস্ট খেলা ক্রিকেটারদের ১৯ বছর পর আমন্ত্রণ জানাতে ভোলেননি বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। যা ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট ঐক্যের আরও এক নিদর্শন বলা চলে।
২০০৭-র বিশ্বকাপ
ওয়েস্ট ইন্ডিজে হওয়া ওই বিশ্বকাপেই প্রথম আইসিসি স্বীকৃত কোনও টুর্নামেন্টের নক আউট পর্যায়ে (সুপার এইট) পৌঁছেছিল বাংলাদেশ। সেই টুর্নামেন্টের গ্রুপ স্তরে ভারতকে হারিয়েছিলেন শাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালরা। ভারত ওই ম্যাচ জিতলে সেবারও বিশ্বকাপে নক আউটে পৌঁছনো কার্যত অসম্ভব ছিল বাংলাদেশের কাছে। বলা চলে, ওই ম্যাচের পরেই নতুন সকাল দেখেছিল প্রতিবেশী দেশের ক্রিকেট। শাকিব, মোর্তোজাদের হাত ধরে যা কার্যত পরিপূর্ণ আকার নিতে চলেছে। এক্ষেত্রেও ভারতের অবদান কী ভুলতে পারে বাংলাদেশ?
কাঁটায় কাঁটায় টক্কর
বাইশ গজের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং লড়াই-র নিরিখে ভারত-পাকিস্তানের মতোই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে নীল জার্সিধারীদের সঙ্গে টাইগার্সদের লড়াই। টি-টোয়েন্টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ, এশিয়া কাপ থেকে আইসিসি চ্য়াম্পিয়ন্স ট্রফি, এমনকী টেস্টেও বিরাট কোহলিদের কড়া চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করাচ্ছেন মুশফিকুর রহিমরা। প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যেও ক্রিকেটের আঙিনায় ভারতের অভিভাবকত্ব কী ভুলতে পারবে শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ?
ভবিষ্যত উজ্জ্বল
প্রথমবারের জন্য অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী দেশের এই ক্রিকেটারদের মধ্যে আগামী দিনে বিশ্ব কাঁপানোর সবরকম প্রতিভা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর তা হলে অর্থাৎ বিশ্বে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আধিপত্য কায়েম হলে ভারতের থেকে খুশি আর কেই বা হবে।