কথা যদি নাই মানা হবে তাহলে সিএসি রেখে সৌরভ-সচিনদের অপমান করার কী প্রয়োজন
ভারতীয় ক্রিকেটের কোনটাতে ভালো হবে তা সচিন-সৌরভের চেয়ে ভালো আর কেউ কি বুঝতে পারবেন? যদি না পারেন তাহলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ও তা টিঁকিয়ে রাখার ক্ষমতা তাঁদের হাতেই থাকা উচিত।
ভারতীয় ক্রিকেটের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে অনুরাগ ঠাকুর বোর্ড সভাপতি থাকাকালীন ভারতীয় ক্রিকেটের 'বিগ ফাইভ'-কে কাজে লাগানোর ভাবনা শুরু হয়। সেই সূত্রেই রাহুল দ্রাবিড়কে অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এবং নতুন ক্রিকেট পরামর্শদাতা কমিটি বানিয়ে তাতে রাখা হয় সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও ভিভিএস লক্ষ্মণকে।[আরও পড়ুন:সৌরভকে নিয়ে মুখ খুললেন রবি শাস্ত্রী, কী বললেন তিনি]
এই ত্রয়ী সুনীল গাভাসকর ও কপিল দেবের পর ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল ক্রিকেটারদের অন্যতম। বলা ভালো একেবারে শীর্ষে রয়েছেন। নতুনভাবে যে ভারতীয় ক্রিকেটকে আমরা পেয়েছি, সেই দুর্নীতিমুক্ত, সাহসী, বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করা ভারতের নবজন্ম হয়েছে এঁদের আমলেই। ফলে ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত এঁরা নিতে পারবেন তাতে সন্দেহ নেই। আর সেজন্যই সচিন-সৌরভদের বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, কোনও ধরনের ভাতা ছাড়াই সচিন-সৌরভরা ভারতীয় ক্রিকেটের উন্নতিতে সময় দিয়ে চলেছেন।[আরও পড়ুন:জাহিরের বদলে যিনি বোলিং কোচ হবেন, সেই ভরত অরুণের রেকর্ড জানেন]
পরামর্শদাতা কমিটি তৈরির পর তাঁদের প্রথম বড় কাজ ছিল গতবছরের কোচ নির্বাচন। সেই নিয়ে শেষদিকে বিতর্ক বাঁধিয়ে দেন রবি শাস্ত্রী। তাঁকে কেন কোচ কার হয়নি তা নিয়ে প্রকাশ্যেই সৌরভের প্রতি বিষোদ্বগার করেন তিনি। কেন তাঁর ইন্টারভিউয়ের সময়ে সৌরভ উপস্থিত ছিলেন না তা নিয়ে জবাবদিহি করেন শাস্ত্রী। অথচ তিনি নিজে বিদেশ ছুটি কাটাতে কাটাতে স্কাইপে ইন্টারভিউ দিয়েছেন।
সেই বিতর্ক দূরে সরিয়ে অনিল কুম্বলেকে কোচ করে ক্রিকেট পরামর্শদাতা কমিটি। যা একেবারে সঠিক সিদ্ধান্ত প্রমাণিত হয়েছে একবছরের মাথায়। গত একবছরে কুম্বলের কোচিংয়ে ভারত টেস্ট হোক অথবা একদিনের ম্যাচ- সবেতেই দারুণ সাফল্য পেয়েছে। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারতীয় দল এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছে।
একবছর পরে যখন প্রথা মেনে ফের কোচ বাছার সময় চলে আসে, তখনই কুম্বলে-কোহলি বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। কোহলি প্রথম থেকেই রবি শাস্ত্রীকে কোচ চেয়ে এসেছেন। তাই কোনওমতেই তিনি কুম্বলের সঙ্গে ঘর করবেন না। অগত্যা কুম্বলেই সব ছেড়ে ইস্তফা দিয়ে বিদায় নিয়েছেন। অথচ কোচ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অধিনায়কের মতামত গুরুত্ব পাবে ধরে নিয়েও ক্ষমতা ক্রিকেট পরামর্শদাতা কমিটির হাতেই দেওয়া হয়েছিল।
কুম্বলে চলে যাওয়ার পরে কোচ বাছাইয়ে সিএসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। যাঁরা কোচ হিসাবে আবেদন করেছিলেন তার মধ্যে রবি শাস্ত্রীকে সবচেয়ে যোগ্য মনে করে সৌরভরা তাঁকে কোচ বেছেছেন। তার পাশাপাশি শাস্ত্রীর মতামত নিয়েই বোলিং কোচ হিসাবে জাহির খান ও বিদেশ সফরে ব্যাটিং পরামর্শদাতা হিসাবে রাহুল দ্রাবিড়ের নাম ঘোষণা করা হয়।
এর কিছুঘণ্টার মধ্যেই শাস্ত্রী দাবি করেন, জাহির নয়, তিনি চান কোনও এক অখ্যাত ভরত অরুণকে। ভরত চেন্নাইয়ের ক্রিকেটার। মাত্র ২টি টেস্ট ও ৪টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন দেশের হয়ে। জাতীয় দলে কিছুদিন কোচিং স্টাফ ছিলেন। সেই সূত্রেই অনেকে তাঁকে চেনেন। খেলোয়াড় হিসাবে পরিচিতি নেই। আর জাহির খানের অভিজ্ঞতার কাছে তিনি নস্যি মাত্র।
তা সত্ত্বেও প্রভাবশালী শাস্ত্রী দাবি করেছেন, যেহেতু জাহির পুরো সময় দিতে পারবেন না, তাই ভরত অরুণকে নেওয়া হোক। বিসিসিআই প্রথমে একবার জানায় যে ক্রিকেট পরামর্শদাতা কমিটি জাহির ও দ্রাবিড়ের নাম ঘোষণার আগে নতুন কোচ শাস্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সেরেছে। পরে বিবৃতি দিয়ে জানায়, জাহিরকে বোলিং কোচের জায়গায় পরামর্শদাতা করা হচ্ছে বিদেশ সফরের জন্য। অর্থাৎ শাস্ত্রীর পছন্দের ভরত অরুণকে সম্ভবত বোলিং কোচ করা হবে।
এখন ঘটনা হল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আপতকালীন ব্যবস্থা হিসাবে ক্ষণস্থায়ী কমিটি গড়ে বিসিসিআই চালানো হচ্ছে। দুর্নীতি মুক্ত ভারতীয় ক্রিকেট গড়তেই এই সিদ্ধান্ত। তবে শুধু আর্থিক দুর্নীতিই কি দুর্নীতি। ভারতীয় ক্রিকেটের মহীরুহ বলে পরিচিত যেসব ক্রিকেটাররা, তাঁদের বোর্ড রাজনীতিতে ডেকে নিয়ে এসে, হাতের পুতুল বানিয়ে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া কি দুর্নীতি নয়? এর আগেও তো বহুবার জাতীয় ক্রিকেটের প্রশাসনে থেকেছেন। তখন শাস্ত্রী ও তাঁর সঙ্গীরা কি পেরেছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ভালো করতে? আর সবচেয়ে বড় কথা, ভারতীয় ক্রিকেটের কোনটাতে ভালো হবে তা সচিন-সৌরভের চেয়ে ভালো আর কেউ কি বুঝতে পারবেন?
রবি শাস্ত্রী বা ভরত অরুণরা তো আর গাভাসকর বা কপিল দেব নন। কিছুদিন ভারতীয় ক্রিকেটের অন্দরমহলে থাকা মানেই প্রাজ্ঞ হওয়া নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বুঝতে গেলে, ভারতীয় ক্রিকেটের কিসে ভালো হয় তা বুঝতে গেলে সচিন-সৌরভের উচ্চতায় যেতে হবে। আর যদি কেউ তা না পারে তাহলে সচিন-সৌরভদের হাতেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ও তা টিঁকিয়ে রাখার ক্ষমতা দেওয়া উচিত। তা নাহলে ডেকে এনে এঁদের পদ দিয়ে অপমান করা যুক্তিহীন।