কঠিন পরিস্থিতিতে অর্ধশতক, কোচ জানালেন হনুমা বিহারীর ইস্পাত কঠিন মানসিকতার কারণ
অন্ধ্রপ্রদেশের রঞ্জি কোচ সনথ কুমারের মতে, ক্রিকেট রাজনীতি এবং ব্যক্তি জীবনের শোক হনুমা বিহারীকে ইস্পাত কঠিন করে তুলেছে।
স্টুয়ার্ট ব্রড, জিমি অ্যান্ডারসনদের আক্রমণ সামলাতে যখন ভারতের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা হিমশিম খেয়েছেন, তখন অভিষেকেই ৬ নম্বরে নেমে তৃতীয় দিনের সকালে চমতকার অর্ধশতরান করেছেন হনুমা বিহারী। সকলেই তাঁর ইস্পাত কঠিন মানসিকতার প্রশংসা করেছেন। অন্ধ্রপ্রদেশের রঞ্জি দলের কোচ সনথ কুমার জানিয়েছেন ব্য়ক্তি জীবনে অনেক আঘাত পেয়েছেন এই তরুন ক্রিকেটারটি। যা তাঁকে এরকম ইস্পাত-কঠিন করে তুলেছে।
সনথ কুমার জানিয়েছেন হনুমার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে ২০১৬ সালে। সেই বছরই হায়দরা বাদ রঞ্জি দলের সঙ্গে ৬ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে অন্ধ্র দলে যোগ দিয়েছিলেন হনুমা। সনথ দেখেছিলেন দলে আসা নতুন ক্রিকেটারটি কেমন যেন দীশাহীন। আসলে হায়দরাবাদে তাঁকে নাকি চরম ক্রিকেট রাজনীতির শিকার হতে হয়েছিল। সব ঘরোয় ক্রিকেটারই যে স্বপ্নটা দেখে, জাতীয় দলের হয়ে খেলা - সেটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
হনুমা এই অবস্থায় দেখে, তাঁর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলার জন্য একদিন তাঁকে হোটেলের ঘরে ডেকেছিলেন সনথ। সেইদিন দীর্ঘক্ষণ কথা বলে হনুমাকে বেশ কিছু কথা বলেছিলেন সনথ। যা বদলে দিয়েছিল হনুমা বিহারীর জীবন। কী বলেছিলেন সনথ? তাঁর কথায় সেই আলাপ আলোচা ছিল অনেকটাই জাম্বুবানের, হনুমানকে পরামর্শ দেওয়ার মত। অর্থাত নিজের শক্তি সম্পর্কে হনুমাকে অবহিত করেছিলেন কোচ।
তিনি হনুমাকে বলেছিলেন, 'খেলা ছেড়ে টেড়ে দেোয়ার মতো বোকামি কোরো না। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, আমায় তিন বছর দাও, তারপরই তুমি জাতীয় দলের হয়ে খেলবে। তুমি ততটাই ভাল খেলোয়াড়। আর যদি অন্ধ্রে সবকিছু ঠিকঠাক না চলে, তবে আমি যেখানে য়াব, তোমাকেও নিয়ে যাব।'
সনথ জানিয়েছেন, আর কিছু বলতে হয়নি তাঁকে। কোচে এই আশ্বাসে, ওই ভরসাটুকুতেই দারুন খুশি হয়েছিলেন হনুমা। তাঁর যাবতীয় আত্মসংশয় কেটে গিয়েছিল। কোচকে তিনি জানিয়েছিলেন তিনি আবার সম্পূর্ণভাবে ক্রিকেটে মনোনিবেশ করবেন।
শুধু মুখের কথাতেই নয়, তা কাজেও করে দেখিয়েছিলেন হনুমা বিহারী। সনথ জানিয়েছেন, শুধু নিজেকে বদলানোই নয়, তাঁর প্রভাবে বদলে গিয়েছিল পুরো অন্ধ্র রঞ্জি দলই। সনথ বলেছেন, 'যে দায়বদ্ধতা ও ফোকাস ও দেখিয়েছিল, তা ছড়িয়ে পড়েছিল দলের অন্য খেলোয়াড়দের মধ্যেও। বাকিদের সঙ্গে ও সারাক্ষণ কথা বলত, তাদের ট্রেনিং ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখত। এভাবেই ও দলের নেতা হয়ে উঠেছিল। এর মধ্যে নেতা হওয়ার সব গুণ আছে।'
ক্রিকেট জীবনের সংগ্রামেরর পাশাপাশি ব্যক্তি-জীবনেও অনেত ঘাত--প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে হনুমা বিহারীকে। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারিয়েছিলেন। তাঁর মা আর দাদাই হনুমার সব। আর ছিলেন এক কাকা। তিনিই হনুমাকে বড় করেছিলেন। গত বছর কিডনির রোগে তিনি মারা যান। তাঁর অসুখ ও মৃত্যুতে খুবই ভেঙে পড়েছিলেন হনুমা। কাকাকে সুস্থ করার জন্য তিনি অনেক চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তাঁর সব চেষঅটাই ব্যর্থ হয়।
আবার ক্রিকেট থেকে মন কিছুটা হলেও সরে গিয়েছিল তাঁর। ফের কোচ তাঁকে বোঝান, কাকার জন্যই তাঁকে ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে হবে। তবে এবার বেশি বলতে হয়নি। ভেতর থেকেই হনুমার মধ্যে এই অজ্ঞীকার উঠে এসেছিল। আজ তিনি ভারতের হয়ে খেলায় কোচ সনথ কুমার দারুন খুশি বলে জানিয়েছেন।
ভেতরে ভেতরে তিনি যে কতটা কঠিন, তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে রবিবারের ওভালে। ইংরেজ বোলাররা তাঁকে নানাভাবে পরাস্ত করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর জন্য অফ স্টাম্পের বাইরে ফাঁদ রচনা করেছিলেন তাঁকরা। স্পিনারদের বিরুদ্ধে পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করে, বা একেবারে কপিবুক অফড্রাইভে ফাস্ট বোলারদের বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছেন তিনি। সারাক্ষণ মুখে একটা কাঠিন্য বজায় রেখেছিলেন। যার থেকে বোঝার উপায় নেই তাঁর মনের অবস্থা।
একবার বেন স্টোকস স্লেজিং করেও তাঁর মনোসংযোগে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করেন। মুখে কোনও জবাব দেননি হনুমা। স্টোকসকে সরিয়ে নিয়ে যান ইংরেজ অধিনায়ক জো রুট। হনুমা একই অভিব্যক্তি ধরে রেখে স্রেফ গ্লাভস ঠিক করে পরের বল খেলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। এই নিয়ে সনথ কুমার বলেছেন, 'মনের দিক থেকে ও খুবই কঠিন। ক্রিকেট পলিটিক্স ও ব্যক্তিগত জীবনের যে ট্র্যাজেডি ওকে সহ্য করতে হয়েছে তাই ওকে এতটা কঠিন করে দিয়েছে।'