আরও এক বিরাট শতরান, কিন্তু তাও ইতিহাস গড়ে ফেলল ওয়েস্ট ইন্ডিজ
পুনেতে তৃতীয় একদিনের ম্যাচে অধিনায়ক কোহলির দুর্দান্ত শতরান সত্ত্বেও ভারতের বিরুদ্ধে ৪৩ রানে বড় জয় পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
বিরাট-রাজের আরও এক শতরান। কিন্তু তিনি ছাড়া আর কেউ সঙ্ঘবদ্ধ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারলেন না। ১১৯ বলে ১০৭ রানের ইনিংস খেললেন বিরাট। আর বাকি ১০ জনে করলেন মাত্র ১৩৩। ফলে ৪৭.৪ ওভারেই ভারত ২৪০ রানে অলআউট হয়ে গেল। পুনেতে তৃতীয় একদিনের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৩ রানে বড় জয় পেয়ে সিরিজ ১-১ করে ফেলল। রেকর্ড বলছে এর আগে কখনও ভারতের মাটিতে রান তাড়া করতে নেমে বিরাটের শতরান সত্ত্বেও ভারত হারেনি।
এই জয় বলা যেতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের সম্মিলিত প্রয়াসের জয়। প্রথমে ব্যাট করে ভারতের সামনে ২৮৪ রানের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিল ভারত। সেই রানটা তাড়া করতে নেমে শুরুতেই রোহিত শষর্মার উইকেট হারিয়ে সামান্য হলেও চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। প্রথম স্পেলে দর্দান্ত বল করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। রোহিত তাঁরই শিকার।
কিন্তু এরপর শিখর ধাওয়ান ও কোহলি মিলে ভালভাবেই রান তাড়া করার কাজটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ১ উইকেটে ৯ রান থেকে তাঁরা দুজনে ১৭ ওভারে রানটা পৌঁছে দেন ৮৮তে। কিন্তু ঠিক তখনই অফস্পিনার অ্যাশলে নার্সের বলে ৪৫ বলে ৩৫ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান শিখর।
এরপর একেবারে নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারিয়েছে ভারত। রায়ডু (২২) ভাল শুরু করেছিলেন, কিন্তু বাঁহাতি পেসার ওবেদ ম্যাকয়কে আনতেই তিনি লৈাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান। এদিন ধোনির আগে নেমেছিলেন ঋষভ পন্থ। প্রথম থেকেই চালিয়ে খেলার পথে হেঁটেছিলেন এই তরুণ ক্রিকেটার। নার্সের একটি লেগ স্টাম্পের বাইরের বল সুইপ করতে গিয়ে তিনি উইকেটের পিছনে ধরা পড়েন।
মাঠের আম্পায়ার অবশ্য প্রথমে তাঁকে আউট দেননি। বল তাঁর গ্লাভস ছুঁয়ে গিয়েছিল, যা আম্পায়ারের নজর এড়িয়ে যায়। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ রিভিউ নিয়েছিল। রিপ্লে দেখে থাঁকে আউট দেওয়া হয়।
এরপর এসেছিলেন অভিজ্ঞ ধোনি। ফিল্ডিংয়ের সময়ে ফউইরকেটে পিছনে এদিনল দুরন্ত খেলেছিলেন তিনি। সদ্য টি২০ দল থেক বাদ পড়ার পর এদিন তিনি ব্যাট হাতেও জবাব দেবেন বলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর জার্সি নম্বরে পৌঁছেই তিনি হোল্ডারের বলে উইকেটের পিছনে ধরা পড়েন। অফ স্টাম্পের বাইরে বলটিতে কিন্তু বিশেষ কারিকুরি কিছু ছিল না।
ধোনি আউট হতেই পুনের স্টোডিয়াম জুড়ে নৈশব্দ নেমে এসেছিল। গর্শকরা হয়ত তখনই ভবিষ্য়তের লিখনটা পড়তে পেরেছিলেন। তখনও ভারতের জেতার জন্য দরকার ছিল ৮৯ রান। হাতে ছিল ৫ উইকেট। একমাত্র আশা ছিলেন কোহলি। ৩৭ তম ওভারে হোল্ডারের বলে নিজের ৩৮তম শতরানটি সম্পূর্ণ করেন কোহলি।
এদিনের শতরানের পর কিন্তু বিরাটকে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। আসলে হারের সম্ভাবনা তখন ভারতের উপর জাঁকিয়ে বসেছে। কোহলি ছাড়া একজনও প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান বাকি ছিলেন না।
কোহলিকে আউট করতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক তাঁর আস্তিনের লুকনো তাস বের করেন। বল তুলে দেন 'বুড়ো' মার্লন স্যামুয়েলস-এর হাতে। আর তাঁর প্রথম ওভারেই আইট হয়ে যান কোহলি। স্যামুয়েলস-এর একটি কুইকার ডেলিভারি বুঝতে ভুল করেন কোহলি। পুল করতে গিয়ে সময়ের সামান্য ভুলচুকে ব্যাটে-বলে হয়নি। বোল্ড হয়ে যান ভারত অধিনায়ক।
এরপর ৪৬ বলে ৬২ রান দরকার ছিল। বাকি ছিলেন, চাহাল, কুলদীপ, খলিল ও বুমরা। তাঁদের পক্ষে কাজটা অসাধ্য ছিল। পরের ২০ রানেই মধ্যএই গুটিয়ে যায় ভারতের ইনিংস। সামুয়েলস মাত্র ৩ ওভার ৪ বল হাত ঘুরিয়ে ১২ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন।
ওদিন একমাত্র অভিষেককারী ফাবিয়ান অ্যালেন ছাড়া বাকি সব ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলার উইকেট পেয়েছেন। হোল্ডার, ম্যাকয় ও নার্স ২ টি করে উইকেট নেন। রোচ পান ১ উইকেট।
এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসে দারুণ বল করেন বুমরা। ১০ ওভারে মাত্র ৩৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনি। তার জেরেই শাই হোপের আরও একটি ভাল ইনিংস (১১৩ বলে ৯৫)-এর পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৮৩ রান তুলেছিল।
হেতমিয়ার তাঁর স্বভাবসিদ্ধ মারকুটে ভঙ্গিতে ২১ বলে ৩৭ রান করেন। অধিনায়ক জেসন হোল্ডার করেন ৩২। শেষ দিকে অ্যাশলে নার্স ৪ টি চার ও ৩টি ছয় মেরে ২২ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮৩তে পৌঁছে দিয়েছিলেন। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য তিনিই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন।
এতদিন ভারত জিতছিল। সবচেয়ে বড় কথা ম্যাচের পর ম্যাচ প্রথম তিন ব্যাটসম্যান বড় রান করে ভারতকে জেতাচ্ছিলেন। কিন্তু এদিনের হার কিন্তু ভারতের দলের ভারসাম্য নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল। সবাই কোহলি নন যে রোজ রোজ একই পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারবেন। বিশ্বকাপের আগে কিন্তু ভারতকে আবার দল নিয়ে বসতে হবে।