নতুন তারকার আগমন! রাজকোট টেস্টে প্রথম দিনের শেষে অ্যাডভান্টেজ ভারত
ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ রাজকোট টেস্টের প্রথম দিনের শেষে ম্যাচ রিপোর্ট।
টেস্টে ইংল্যান্ডের মাঠে যতই ভরাডুবি হোক গরের মাঠে ভারত অত্যন্ত শক্তিধর। এদিকে ম্য়াচ শুরুর আগেই চোটের জন্য ছিটকে যান ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রঝান বোলার ক্রেমার রোচ ও তাদের অধিনায়ক জেসন হোল্ডার। ফলে যা হওয়ার তাই হল। প্রথমদিনই ভারতের রান সাড়ে তিনশ' ছাপিয়ে গেল।
৮৯ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ভারতের রান আপাতত ৩৬৪। ক্রিজে অপরাজিত আছেন অধিনায়ক কোহলি (৭২) ও ইংল্যান্ড সফরের শেষ টেস্টে শতরান করা উইকেটকিপার ঋষভ পন্থ (১৭)।
তবে রাজকোট টেস্টের প্রথমদিনটা ছিল ভারতের অভিষেককারী ওপেনিং ব্য়াটসম্যান পৃথ্বী শ-এর। ১৫৪ বলে ১৩৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে যান তিনি। মারেন মোট ১৯টি চার। তাঁকে দেখে একবারও মনে হয়নি তিনি জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলছেন ভারতের সিনিয়র দলের হয়ে। এতটাই পরিণত ব্যাটিং করেন তিনি।
স্কুল ক্রিরেট টুর্নামেন্টে মাত্র ১৩ বছর বয়সে এক ইনিংসে ৫৪৬ রান করে প্রথম সংবাদ শিরোনামে এসেছিলেন তিনি। তারপর থেকে যে স্তরে ক্রিকেট খেলেছেন, সেখানেই তাঁকে প্রত্যাশার চাপ নিয়ে খেলতে হয়েছে। এদিনও শুরুতেই ভারত অপর ওপেনার লোকেশ রাহুল (০)-কে হারিয়েছিল। ইংল্যান্ড থেকে দেশের মাটিতে ফিরে এসেও রাহুলের খারাপ ফর্ম অব্যাহত থাকল।
কিন্তু শুরুর সেই পতনের চাপটা কাটিয়ে দেন পৃথ্বী ও পূজারা (৮৬)। দুজনে দ্বিতীয় উিকেটের জুটিতে ২০৬ রান যোগ করেন। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগেই খেলাটা ধরে নিয়েছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। বিস্ময় প্রতিভা পৃথ্বী অপরাজিত ছিলেন ৭৫ রানে। মধ্য়াহ্নভোজ থেকে ফিরে এসে আরও আক্রমণাত্মক খেলতে শুরু করেছিল ভারত।
ইননিংসের ৩৩তম ওভারেই সচিনের পর ভারতের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট সেঞ্চুরি করেন তিনি। শুধু শতরান করাই নয়, রান করার পথে প্রত্যেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলারকে তিনি ইচ্ছেমতো শাসন করেছেন। ইনিংসে মোট ১৯টি চার মেরেছেন এই ১৮ বছরের ব্যাটসম্যান। শ্যানন গেব্রিয়েল, কীমো পল, শেরমন লুইস, দেবেন্দ্র বিশু, রোস্টন চেজ - ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনও বোলারকেই তিনি রেয়াত করেননি।
পৃথ্বীর পর পুজারার শতরান করার সম্ভাবনাও যখন ক্রমেই উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল, তখনই ৪৩তম ওভারে শেরমন লুইসের একটি অফ স্টাম্পের বাইরের লেন্থ বলে অযথা ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পিছনে ধরা পড়েন তিনি। এরপর ক্রিজে আসেন ক্য়াপ্টেন কোহলি।
৫১তম ওভারে দেবেন্দ্র বিশুর একটি নির্বিষ লেগ স্পিনে আউট হন পৃথ্বী। তার আগের কয়েক ওভারেই তাঁর মনোসংযোগের ঘাটতি দেখা যাচ্ছিল। বিশুর বলটি তিনি সহজেই ডিফেন্স করে আটকে দিতে পারতেন। তা না করে তিনি পাল্টা মারের রাস্তায় গিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিক জায়গায় পা আনতে পারেননি। ফলে বোলারের মাথার উপর দিয়ে বল না উড়ে গিয়ে সহজ ক্যাচ আসে বিশুর হাতে।
শেষ পর্যন্ত বাজে শটে আউট হলেও তার আগে যে পরিণত ব্যাটিংয়ের উদাহরণ তিনি রাখলেন, তাতে ভারত তার টেস্ট ওপেনারের সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়ার আশা করতে পারে। সচিনের শহরের ব্যাটসম্যান হলেও তাঁর ব্যাটিং ভঙ্গী দেখে কিন্তু অনেকেরই বীরেন্দ্র সেওয়াগের কথা মনে পড়ে গিয়েছে। এমনকী তাঁর আউট হওয়াটাও ছিল সেওয়াগসুলভ।
তা বিরতির পর ভারতের ইনিংসকে টেনে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন ভারতের অধিনায়ক ও সহঅধিনায়ক। এদিন কিন্তু দেশের মাটিতে রাহানের খেলা দেখে মনে হয়েছে, ধীরে ধীরে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন তিনি। কোহলির সঙ্গে এদিন তিনি ১০৫ রানের পার্টনারশিপ গড়েন।
সেট হয়েও কিন্তু তিনি বড় রান করতে পারেননি। ৮৪তম ওভারে রোস্টন চেজের একটি বল তাঁর ব্যাটের কানা ছুঁয়ে গিয়ে জমা পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান উইকেটরক্ষক ডাওরিচের হাতে। সেইসময় ৪১ রানে ব্যাট করছিলেন রাহানে। রাহানের জায়গায় ক্রিজে আসেন ঋষভ পন্থ।
এই জায়গা থেকে ভারতের প্রথম ইনিংসে বড় রানের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁড়ে দেওয়া উচিত। বিরাট কোহলি বিশ্রাম থেকে এসেই যে ছন্দে ব্যাট করছেন, তাতে আগামীকাল তাঁর আরও একটি টেস্ট শতরান আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা ৪টি উিকেট তুলে নিলেও একমাত্র রাহুলের উইকেট ছাড়া প্রতিটির জন্য তাদেরকে যথেষ্ট খাটতে হয়েছে। গেব্রিয়েল, লুইস, বিশু ও চেজ একচি করে উইকেট নিয়েছেন। আগামীকাল ভারতের লোয়ার অর্ডারকে তাড়াতাড়ি প্যাভিলিয়নে ফেরাতে পারলে তাদের ম্যাচে ফেরার একটা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।