ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে এল সহজ জয় - কে কেমন খেললেন, দেখে নিন রিপোর্ট কার্ড
ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজে ভারতীয় খেলোয়াড়রা কে কেমন খেললেন।
রাজকোটের পর হায়দরাবাদেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তিনদিনেই সহজ জয় তুলে নিয়েছে ভারত। নিঃসন্দেহে এই স্বল্প দৈর্ঘের সিরিজে আগাগোড়াই ভারত তার প্রাধান্য বজায় রেখেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলোয়াড়রা সিরিজে ব্য়াটে বা বলে কখনই ভারতের সামনে সেভাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে পারেনি।
জয় অনেকসময় কার্পেটের মতো অনেক ফাটা-ফুটো ঢেকে দেয়। সহজে জয় এলেও এই সিরিজে ভারতের যে লক্ষ্য ছিল তা কী পূরণ হল? নাকি পরের মাসে অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে ভারতীয় দলে এখনও কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গেল? দেখে নিন মাইখেল বেঙ্গলির রিপোর্টকার্ড।
বিরাট কোহলি (রান - ১৮৪, সর্বোচ্চ - ১৩৯, গড় - ৯২) - ৮/১০
রাজকোটের শুকনো গরমের মধ্যেও কোহলি তাঁর মনোসংযোগ ধরে রেখে শতরান করেন। বিরোধী দল তাঁকে কঠিন পরীক্ষায় প্রসারিত না ফেললেও তাঁর সামনে বাধা ছিল পরিবেশ। বড় রান পাওয়ার ইচ্ছাজনিত পরীক্ষা ছিল তাঁর নিজের কাছে। কোহলি কিন্তু এই সিরিজে ব্যাটের পাশাপাশি অধিনায়ক হিসেবেও ভাল পারফর্ম করেছেন। আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে সবসময়ই ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট শিকারে ব্যাগ্র ছিলেন।
কেএল রাহুল (রান - ৩৭, সর্বোচ্চ - ৩৩, গড় - ১৮.৫) - ৩/১০
এই ওপেনারের জন্য সিরিজটি অত্যন্ত খারাপ গেল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থ হতে হতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল তাঁর। সেই সময়ই ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরির করেছিলেন তিনি। তাতে মনে করা হয়েছিল অবস্থাটা পাল্টেছে। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজটিতে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে সমস্যা এখনও তাঁর মধ্যে রয়েই গিয়েছে। বিশেষ করে ভিতরে ঢুকে আসা বলের বিরুদ্ধে তাঁকে অত্যন্ত অসহায় দেখাচ্ছে।
পৃথ্বী শ (রান - ২৩৭, সর্বোচ্চ - ১৩৪, গড় - ১১৮.৫০) - ৮/১০
তাঁর অভিষেকের দিকে তাকিয়ে ছিল গোটা দেশ। ১৯৮৯ সালে সচিন তেন্ডুলকারের অভিষেকের পর এরকমটা আর আগে দেখা যায়নি। পৃথ্বী নিরাশ করেননি। প্রথম টেস্ট ইনিংসেই দাপুটে শতরান হাঁকিয়েছেন। শুধু ব্যাটিংই নয়, এই তরুণ মুম্বইকর কিন্তু ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ভাল ফিল্ডিংয়ের পরিচয়ও দিয়েছেন। টেস্ট ক্রিকেট বা তারকা খেলোয়াড়দের উপস্থিতিতে তিনি কখনই গুটিয়ে যাননি। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের বিরুদ্ধে পরীক্ষাটা নিঃসন্দেহে আরও কডড়া হবে। তার জন্য তাঁর ব্যাটিং আরও আঁটসাঁট করা দরকার। তবে তিনি যে সঠিক পথেই চলেছেন তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এই সিরিজে।
চেতেশ্বর পুজারা (রান - ৯৬, সর্বোচ্চ: ৮৬; গড় - ৪৮): ৬/১০
পূজারা তাঁর ঘরের মাঠ রাজকোটে শতরান করার চমৎকার সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেননি। ৮৬ রানেই থেমে যান। হায়গরাবাদে একমাত্র ইনিংসেও বলার মতো কিছু করতে পারেননি। শতরানের সুযোগ তৈরি করে তা ফেলে আসার জন্য সিরিজে তাঁর পয়েন্ট কমেছে।
আজিঙ্কা রাহানে (রান - ১২১; সর্বোচ্চ - ৮০; গড় - ৬০.৫০) - ৭/১০
পুজারার মতো এই সিরিজে রাহানেও শতরানের কাছাকাছি গিয়েও শেষরক্ষা করতে পারেননি। তিনিও আটকে গিয়েছেন ৮০-র ঘরেই। কিন্তু হায়দরাবাদে ১৬২/৪ এই অবস্থা থেকে ঋষভ পন্থের সঙ্গে বড় জুটি গড়ে তিনি ভারতকে সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে মুক্ত করেছিলেন। তাঁর লড়াই ও ফোকাসের জোরে তিনি এক পয়েন্ট বেশি পেয়েছেন।
ঋষভ পন্থ (রান - ১৮৪; সর্বোচ্চ: ৯২; গড় - ৯২) - ৬/১০
সিরিজে দুই-দুইটি শতরান হারিয়েছেন তিনি। দুইবারই ৯২ রানে আউট হন। কীভাবে একটিও শতরানের সুযোগ না হারাতে হয় তা কিন্তু ঋষভ তাঁর অধিনায়কের কাছ থেকে শিখতে পারেন। তবে স্টাম্পের পেছনে এই সিরিজে তাঁকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। সামগ্রিকভাবে, সিরিজটি তাঁর জন্য সন্তোষজনক হলেও দু'টি সেঞ্চুরি হারানোরর আক্ষেপ রয়েই যাবে।
আর অশ্বিন (উইকেট - ৯; সেরা - ৩৭/৪) - ৬.৫/ ১০
টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের প্রধান স্পিনার এই সিরিজে তাঁর ফর্মের শিখরে ছিলেন না। তবে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিরুদ্ধে তার দরকারও ছিল না। যেটুকু দিতে পেরেছেন, তাতেই তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের যথেষ্ট বিব্রত করেছেন। মাঝে মাঝে সম্ভবত নিজেকে এবং দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্যই তাঁকে তাঁর হলের বৈচিত্র্য প্রদর্শন করতে দেখা গিয়েছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হিপ ইনজুরির কারণে ওভাল টেস্ট খেলেননি অশ্বিন। এই সিরিজে কিন্তু তাঁর চোটের কোনও লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রবীন্দ্র জাদেজা (রান- ১০০; গড় - ১০০, সর্বোচ্চ ১০০; উইকেট - ৭, সেরা - ১২-৩) - ৮/১০
এই সিরিজটা জাদেজার জন্য অন্যতম সেরা গেল। একদিকে তিনি টেস্টে তাঁর প্রথম শতরান পেয়েছেন, আবার নিঁখুত লাইন লেন্থে তাঁর বাঁহাতি স্পিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানদের কাজটা রঠিন করে দিয়েছেন। সিরিজে তাঁর ইকোনমি রেট ছিল ২.৭১, যা ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সেরা। পাশাপাশি প্রত্যাশা মতোই জাদেজা ফিল্ডিং-এ তাঁর জাদু দেখিয়েছেন। সবমিলিয়ে এই সিরিজ ছিল তার জন্য অত্যন্ত সন্তোষজনক।
উমেশ যাদব (উইকেট - ১১; সেরা - ৬/৮৮) - ৮/১০
বিভিন্ন কারণে জসপ্রীত বুমরা, ভুবনেশ্বর কুমার এবং ইশান্ত শর্মা না খেলায় প্রথম একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন উমেশ যাদব। সেই সুযোগকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে হায়দরাবাদ টেস্টে তিনি ১০ উইকেট দখল করেছেন। হায়দরাবাদে কিন্তু পেসারদের জন্য উইকেটে কোনও সুবিধাই ছিল না। অস্ট্রেলিয়া সফরের আগে নির্বাচকদের কাজটি তিনি কঠিন করে দিয়েছেন।
কুলদীপ যাদব (উইকেট - ১০; সেরা - ৫/৫৭) - ৭/১০
লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নেহাতই ম্যাড়মেড়ে অভিষেক ঘটেছিল কুলদীপের। কিন্তু এই টেস্ট সিরিজে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন ক্রিকেটের দীর্ঘ সংস্করণেও তিনিউপযুক্ত। লাল বলের ব্যবহারে তিনি আরও বিষাক্ত। এই সিরিজে তিনি তাঁর প্রথম টেস্টে এক ইনিংসে ৫ উইকেটও পেয়েছেন। তবে, তাঁকে নজর রাখতে হবে ইকোনমি রেটের দিকে। সিরিজে তিনি ওভার প্রতি ৩.৭৭ রান দিয়েছেন, যা ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
মহম্মদ শামি (উইকেট - ২; সেরা - ২২/২) - ৫/১০
বাংলার এই ডানহাতি জোরে বোলার শুধুমাত্র রাজকোট টেস্টই খেলেছেন। প্রথম ইনিংসে তিনি দুই উইকেট নেন। পরের ইনিংসে মাত্র তিন ওভার বোলিং করেন। হায়দরাবাদে তাকে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল।
শর্দুল ঠাকুর (১.৪ ওভারে ৯ রান) - ১/১০
মুম্বইয়ের পেসার সিরিজে মাত্র ১.৪ ওভার বোলিং করতে পেরেছেন। তারপরই কুঁচকির চোটের জন্য তাঁকে মাঠ ছাড়তে হয়। ফলে পুরোপুরি ঘেঁটে গিয়েছে তাঁর টেস্ট অভিষেক। আগামী বেশ কিছুদিন তাঁকে ভারতীয় টেস্ট দলের আশপাশে না দেখারই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাঁর চোট, এবং ইশান্ত, ভুবনেশ্বর, বুমরা ও শামির ফেরা - এই দুইয়ের যৌথ প্রভাবে আপাতত ভারতের টেস্ট ভাবনা থেকে তিনি ছিটকে গেলেন।