রাজকোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে তিনদিনেই যেভাবে এল ভারতের জয়, দেখে নিন ম্যাচের সেরা ১০ মুহুর্ত
রাজকোটে ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে টেস্ট ম্যাচের ১০ স্মরণীয় মুহূর্তের ফটো ফিচার।
একেবারে পরিপূর্ণ দমন। এভাবেই বর্ণনা করা যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টেস্টে ভারতের এক ইনিংস ও ২৭২ রানের বিশাল জয়কে। তিন দিনের এই একপেশে জয়ের মধ্যেও কিন্তু বেশ কিছু স্মরণীয় ঘটনা ঘটে গিয়েছে।
এই ম্যাচেই অভিষেক ঘটেছে 'ভবিষ্যতের তারকা' হিসেবে চিহ্নিত পৃথ্বী শ-এর। যা তিনি স্মরণীয় করে রেখেছেন শতরান করে। দেখা গিয়েছে জাদেজার প্রথম টেস্ট শতরান, কূলদীপের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক সেইসব গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্ত।
পৃথ্বী শ-এর রাজকীয় অভিষেক
১৮ বছর ৩২৯ দিন বয়সে রাজকোট টেস্টে অভিষেক হয় মুম্বইয়ের বিস্ময় প্রতিভা ওপেনার পৃথ্বী শ-এর। আর রাজকোট টেস্টের প্রথমদিনটাই তিনি নিজের নামে করে নেন। ১৫৪ বলে ১৩৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে যান তিনি। ইনিংসের ৩৩তম ওভারেই সচিনের পর ভারতের দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি মাত্র ৯৯ বলে শতরান সম্পূর্ণ করেন তিনি। শুধু শতরান করাই নয়, রানটা করার পথে প্রত্যেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলারকে তিনি ইচ্ছেমতো শাসন করেন। মোট ১৯টি চার মারেন তিনি। শ্যানন গেব্রিয়েল, কীমো পল, শেরমন লুইস, দেবেন্দ্র বিশু, রোস্টন চেজ - ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনও বোলারকেই তিনি রেয়াত করেননি।
ঋষভ পন্থের ঝড়, থামলেন ৮ রান দূরে
প্রথমদিনের শেষে ১৭ রানে অপরাজিত ছিলেন ভারতের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থ। দ্বিতায় দিন প্রথম সেশনে তিনি একেবারে একেবারে মারকাটারি ভঙ্গীতে খেলতে শুরু করেন। তাঁর দাপটে ঢাকা পড়ে যান বিরাট কোহলিও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং ছাড়খার করে ৮৪ বলে তিনি করেন ৯২। অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে মাত্র ৮ রানের জন্য জীবনের প্রথম দুই টেস্টে শতরান করার সুযোগ কোয়ান তিনি। ৫৬ বলেই তিনি অর্ধশতরান পার করে ফেলেছিলেন। পরের ৪২ রান করেছিলেন মাত্র ২৮ বলে। যখন সবাই ধরেই নিয়েছেন শতরান আসছে, তখনই দেবেন্দ্র বিশুর একটি ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে পরাস্ত হন।
ভক্তের অনুপ্রবেশ
দ্বিতীয় দিনের খেলা চলাকালীন কোহলীর সঙ্গে দেখা করার বাসনা নিয়ে নিরাপত্তার কর্ডন ভেঙে মাঠে ঢুকে পড়েছিলেন দুই ভারতীয় সমর্থক। আম্পায়ার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রা বিরক্ত হলেও কোহলি তাঁদের সেলফি তোলার আবদার মেনে নেন। তারপর যদিও মাঠের নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁদের বের করে নিয়ে যান।
অধিনায়ক কোহলির ২৪-তম টেস্ট শতরান
রাজকোট টেস্টের দ্বিতীয় দিনে তাঁর কেরিয়ারের ২৪তম শতরান পান অধিনায়ক বিরাট কোহলিও। ১৮৪ বল খেলে শতরান পান তিনি। ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম ব্য়াটসম্য়ান হিসেবে ২৪তম টেস্ট শতরান করার নজির গড়েন তিনি। মোট ১২৩ ইনিংসে এই ল্যান্ডমার্কে পৌঁছান তিনি। তাঁর চেয়ে দ্রুত ২৪ শতরান করেছইলেন একমাত্র ক্রিকেট কিংবদন্তি ডন ব্র্যাডম্যান। ব্র্যাডম্যান অবশ্য ২৪ শতরান করতে মাত্র ৬৬টি ইনিংস নিয়েছিলেন। কোহলি ভাঙেন সচিন তেন্ডুলকরের রেকর্ড। ২৪ শতরান করতে মাস্টার ব্লাস্টার নিয়েছিলেন ১২৫ ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ১৩৯ রানে শেষ হয় কোহলির ইনিংস।
রবীন্দ্র জাদেজার প্রথম টেস্ট শতরান
কোহলির পর ভারতীয় ইনিংসের তৃতীয় শতরানটি আসে রবীন্দ্র জাদেজার হাত ধরে। পরিচিত তরোয়ালবাজির ভঙ্গিতে ব্যাট করে ১৩২ বলে ৫টি ৪ ও ৫টি ৬ মেরে তিনি তাঁর কেরিয়ারের প্রথম শতরানটি পূর্ণ করেন। লোয়ার অর্ডারে রবিচন্দ্রন অশ্বিন, কূলদীপ যাদব, উমেশ যাদব ও মহম্মদ শামিকে নিয়ে ব্যাট করে, মোটামুটি একার হাতেই ভারতের রান ৬০০ পার করিয়ে দেন তিনি।
|
ওয়েস্ট ইন্ডিজ টপ অর্ডারে ধসও জাদেজার রান আউট মজা
দ্বিতীয় দিন চা বিরতির পর মাত্র এক সেশনেই ৯৪ রানে ৬ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুতে মাত্র ৪ ওভারে বল করেই শামি ৫ রান দিয়ে তুলে নেন ব্রেথওয়েট (২) ও কিয়েরন পাওয়েল (১)কে। শাই হোপ (১০)-কে তুলে নেন অশ্বিন। সুনীল অম্বরিশ (১২) কে তুলে নিয়ে বল হাতেও ম্যাচে ছাপ রাখেন জাদেজা। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটরক্ষক ডাওরিচ (১০) আউট হন কূলদীপ যাদবের বলে।
তবে সবচেয়ে নাটকীয় ছিল হেতমিয়ের-এর (১০) রানআউট। বল মিড অনে ঠেসে রান নিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বল জাদেজার হাতে যাচ্ছে দেখে পরে সিদ্ধান্ত বদলান। ততক্ষণে ননস্ট্রাইকার তাঁর কাছাকাছি চলে এসেছে। হেতমিয়ের এই সময়ে দৌড়তে শুরু করেন। জাদেজা উইকেটের কাছে দাঁড়ানো অশ্বিনকে বল না ছুঁড়ে নিজেও দৌড়তে থাকেন। কাছাকাছি এসে সরাসরি থ্রোয়ে উইকেট ভেঙে দেন। এই ঘটনায় অশঅবিন থেকে কোহলি সবাই বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন। জাদেজা জানান মজা করছিলেন।
রোস্টন চেজ ও কীমো পলের প্রতিরোধ ও অশ্বিনের ৪ উইকেট
দ্বিতীয় দিনের শেষে ক্রিজে ২৭ রানে অপরাজিত ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের রোস্টন চেজ। তাঁর সঙ্গে ১৩ রানে ব্যাট করছিলেন কীমো পল। তাঁরা কিন্ত তৃতীয় দিন প্রথম সেশনে ভারতের তাড়াতাড়ি উইকেট তোলার পরিকল্পনা ভেস্তে দেন। তাঁরা বুঝেছিলেন ইনিংস বেশিক্ষণ টিকবে না। তাই পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় গিয়েছিলেন। তাতে ভারতীয় বোলারদের হতাশা বেড়েছিল। রোস্টন অর্ধশতরান করেন (৫৩)। আর কীমো পল থামেন ৪৭-এ। এদিন শেষ ৪ উইকেটে তারা আরও ৮৭টি রান জোড়ে।
তবে একবার উমেশ যাদব কীমোকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর বাকি ৩ উইকেট চটপট তুলে নেন অশ্বিন। সব মিলিয়ে তিনি ইনিংসে ১১ ওভার বল করে ২টি মেডেন সহ ৩৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন।
কিয়েরন পাওয়েলের প্রচেষ্টা
দ্বিতীয় ইনিংসেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্য়াটিং লাইনআপে ধস নামে। তার মধ্যে একমাত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন কিয়েরন পাওয়েল। ৮টি ৪ ও ৪টি ৬ মেরে তিনি ৯৩ বলে ৮৩ রান করে যান। একমাত্র বাঁহাতি চায়নাম্যান কূলদীপ যাদব ছাড়া বাকি সব বোলারের বিরুদ্ধেই তিনি আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করে গিয়েছেন। কূলদীপকে প্রথম থেকেই তাঁর খেলতে সমস্যা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁর বলেই স্কোয়ার লেগে পৃথ্বী শ-এর হাতে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফিরে যান।
কূলদীপের প্রথম ১ টেস্ট ইনিংসে ৫ উইকেট
প্রথম ইনিংসে একেবারেই ভাল বল করতে পারেননি কূলদীপ যাদব। ১০ ওভার বল করে ৬২ রান দিয়ে পেয়েছইলেন একমাত্র ডাওরিচের উইকেট। রান দিয়েছিলেন ওভার প্রতি ৬.২ করে! তাতেই বোধহয় তাঁর কিছু করে দেখানোর জেদটা বেড়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে একার হাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটিংয়ের কোমড় ভেঙে দিলেন তিনি। ২ থেকে ৬ নম্বর ব্যাটসম্য়ান সবাই তাঁর শিকার। ফলে টেস্ট কেরিয়ারে এই প্রথম কূলদীপ এক ইনিংসে ৫ উইকেট দখল করলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান, ১৪-২-৫৭-৫-৪.০৭।
পৌনে তিনদিনে কাজ হাসিল
প্রথম টেস্টেই বোঝা গেল ঘরের মাঠের এই ভারতীয় দলের থেকে কয়েক যোজন পিছিয়ে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এই ম্যাচে মাত্র ৩সেশনের সামান্য বেশি সময়ে তারা দু-দুবার অলআউট হয়ে গেল। তাদের প্রথম ইনিংস টিকেছিল ৪৮ ওভার। দ্বিতীয় ইনিংস গড়ালো ৫১ ওভার অবধি। তৃতীয়দিন চা বিরতির পর ফিরে এসে মাত্র ৬ ওবারের মধ্যেই খেলা শেষ করে দেন জাদেজা। ব্যাটে বলে দুর্দান্ত পারফর্ম করে মাত্র পৌনে তিন দিনেই কাজ হাসিল করে ফেলল বিরাট কোহলি ব্রিগেড।