পাপালির জীবনের দুই দুর্গা, কারা তারা, জানুন খোদ ঋদ্ধির মুখে
জয় মা দুর্গা বললেই মনে যে শুধু ভক্তিভাব জেগে ওঠে তাই নয়। মা দুর্গা যিনি নিজের দশহাত দিয়ে আমাদের রক্ষা করেন। আজ ঋদ্ধির জীবনের দুর্গাদের চিনে নেব
'জয় মা দুগ্গা '- র সাক্ষাৎকারের সময় ওয়ান ইন্ডিয়ার বাংলা দল বিভিন্ন মানুষকে বেছে নিয়েছিল। দুর্গাপুজোর পাঁচদিন বাঙালিদের মন্ডপে ঘোরা, আড্ডা, খাওয়াদাওয়া, ফ্যাশন এসব নিয়ে তো কম নিউজ প্রিন্ট খরচ হয়নি, বৈদ্যুতিন মাধ্যমে কম এয়ার টাইমও খরচ হয়নি। তাই একটু অন্য কিছু করার প্রয়াসে 'জয় মা দুগ্গা'-র ভাবনার জন্ম।
ঋদ্ধিমান সাহা। শুধু নামটাই যথেষ্ট। কে ঋদ্ধিমান, বা কী করছেন ঋদ্ধিমান তা বলতে আর দু -চার কথা আলাদা করে বলতে লাগে না। ভারতীয় টেস্ট দলে উইকেটের সামনে ও পিছনে যিনি ভরসা যোগান তিনি বাংলার পাপালি।তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারকে দশহাতে আগলে রেখেছেন কারা। 'জয় মা দুগ্গা' শুনলে ঋদ্ধির ঠিক কী মনে পড়ে।
অন্তর্মুখী ঋদ্ধির কথা শুরুর দিন থেকে তাঁকে গড়ে তোলার অবদান যাঁর, তিনি তাঁর মা মৈত্রেয়ী সাহা। শিলিগুড়ি থেকে পথচলা শুরু। কলকাতায় এসে খেলবে ছেলে প্রাথমিকভাবে আপত্তি ছিল মা মৈত্রেয়ী দেবীর। কিন্তু মা-রা তো মা-হন। সন্তানের ভাললাগার জন্য নিজেকে অনেকটাই বদলে ফেলেন তাঁরা।
বিয়ের আগে অবধি পুরোটাই মায়ের তত্বাবধানে ছিলেন পাপালি। ট্যুরে যাওয়ার সময় জিনিসপত্র গুছিয়ে দেওয়া থেকে ছেলেকে মানসিক জোর দেওয়া সবই দেখতেন মৈত্রেয়ী দেবী। বাবা প্রশান্ত সাহা ডাব্লু বিসিবি-র কর্মী ছিলেন। মা মৈত্রেয়ী ঋদ্ধিমান ও তাঁর দাদাকে দেখার পুরো দায়িত্ব সামলাতেন।শুরুর দিকে যখন ট্যুরে যেতে হত বিভিন্ন খেলার সূত্রে তখন মা দিয়ে দিতেন ছেলের হাতখরচ। ছেলেও কখনও অপচয় করেননি, ট্যুর থেকে যে টাকা বেঁচে ফিরত ঋদ্ধি তাঁর মাকেই ফিরিয়ে দিতেন। ঋদ্ধির মতে মা তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ার শুরুর লড়াইয়ের শক্তি ছিলেন। আস্তে আস্তে বাংলা দলে আসা, ক্লাব ক্রিকেট খেলা সেখান থেকে আইপিএল সেখানে সঙ্গ দিয়েছেন মা।
জীবনের পথচলা এগিয়েছে। ধীরে ধীরে আরও শক্ত লেভেলে পৌঁছেছে জীবনের গেম। ঋদ্ধির পথ চলার সঙ্গী হিসেবে নিজেকে জুড়ে নিয়েছেন রোমি। ঋদ্ধির স্ত্রী। অর্কুটের সূত্রে যে আলাপ তা পথ নিয়ে এগিয়ে গেছে বিয়ের ছাদনাতলায়। ২০১১ থেকে ঋদ্ধির জীবনসঙ্গিনী রোমি।
ঋদ্ধি মায়ের সঙ্গে এখন রোমিকও রাখেন দুগ্গা মা-র তালিকায়। কারণ তাঁর সাফ কথা তিনি শুধু ক্রিকেটটা খেলেন, বাকি সব কিছু সামলান তাঁর স্ত্রী। দশহাতে মা দুর্গা যেমন সবদিক আগলে রাখেন, ঠিক তেমনিই রোমি পরিবার, মেয়ে, সংসার সব একাই সামলান।
একসময়ে মৈত্রেয়ী দেবী যেভাবে সংসার সামলেছেন আজ রোমি সেভাবে সংসার সামলাচ্ছেন। ছেড়ে দিয়েছেন নিজের পেশা। তবে মানসিক চাপের জায়গাটা আরও বেড়েছে। জাতীয় দলে খেলা যেমন সম্মানের ঠিক ততটাই চাপেরও পারফরম্যান্স ও ফিটনেস দিয়ে সর্বোচ্চ জায়গাটা ধরে রাখার নিরন্তর লড়াই।তবে আজকের লড়াইটা দুগ্গারও কঠিন লাগে। মানসিক চাপ এতটাই বেশি থাকে যে মাঝেমধ্যে অবসাদও আসে , কিন্তু পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই চালিয়ে নিয়ে যান। আঘাতকে জয় করেই তো দুর্গার পথ চলা। তবে ঋদ্ধির দ্বিতীয় দুগ্গার একটা স্বপ্ন আছে, সেটা হল শুধু টেস্ট দলে নয় , একদিনের দলেও খেলুক পাপালি, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলুক বিশ্বকাপ।