(ছবি) আইপিএল ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডে আজ সাজা ঘোষণা: ২০১৩ থেকে মামলার ১০টি উল্লেখ্য অগ্রগতি
চেন্নাই সুপার কিংস এবং রাজস্থান রয়্য়ালস কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই আইপিএল ম্যাচ ফিক্সিং ও বেটিং কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছে। আজ মঙ্গলবার এই মামলায় সাজা ঘোষণা হবে।
সবার চোখ রয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস-এর মালিক তথা প্রাক্তন বিসিসিআই প্রধান এন শ্রীনিবাসনের জামাই গুরুনাথ মাইয়াপ্পান এবং রাজস্থান রয়্যালসের মালিক তথা অভিনেত্রী শিল্পা শেঠীর স্বামী রাজ কুন্দ্রার উপর।
সুপ্রিম কোর্টের নিযুক্ত লোধা কমিটি আজ সাজা শোনাবে। ভারতের প্রাক্তন মুখ্য বিচারপতি রাজেন্দ্র মাল লোধা নেতৃত্বাধীন এই কমিটি যে রায় দেবে তা চূড়ান্ত হবে এবং বিসিসিআই-কে মানতে হবে।
২০১৩ সাল থেকে এই আইপিএল দুর্নীতি মামলায় কোন ১০টি মুখ্য অগ্রগতি হয়েছে একঝলকে দেখে নেওয়া যাক।
দুর্নীতি সামনে আসে
২০১৩ সালের ১৬ মে আইপিএল দুর্নীতি সামনে আসে, যখন দিল্লি পুলিশ রাজস্থান রয়্যালস খেলোয়াড় এস শ্রীসন্থ, অঙ্কিত চবন এঊং অজিত চান্ডিলাকে টাকার পরিবর্তে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিয়োগে মুম্বই থেকে গ্রেফতার করে। সেখান থেকে সূত্র পেয়ে বিন্দু দারা সিংকে এই ঘটনায় গ্রেফতার করে পুলিশ। বিন্দু দারা সিং বেটিং কাণ্ডে গুরুনাথ মাইয়াপ্পানের যোগ সম্পর্কে মুখ খোলেন। মুম্বই পুলিশ বেটিং, প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মাইয়াপ্পানকে গ্রেফতার করে।
মাইয়াপ্পান-কুন্দ্রা
২৬ মে শ্রীনিবাসন নেতৃত্বাধীন বিসিসিআই ৩ সদস্যের কমিশন গঠন করে। বিচারপতি টি জয়রাম চৌটা, বিচারপতি আর বালাসুহ্মনিয়াম এবং বিসিসিআই সেক্রেটারি সঞ্জয় জাগদালে এই কমিশনে ছিলেন, যারা মাইয়াপ্পানের বিরুদ্ধে বেটিংয়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখছিলেন। আচমকাই জাগদালে সরে দারান। বিসিসিআই কোষাধ্যক্ষ অজয় শিকরেও পদত্যাগ করেন। বিচারকরা বেশি কিছু তদন্ত না করেই মাইয়াপ্পান ও রাজ কুন্দ্রাকে ক্লিন চিট দিয়ে দেন।
শ্রীনির বিরুদ্ধে অভিযোগ
মাইয়াপ্পান ও কুন্দ্রাকে ছেড়ে দেওয়ার বিসিসিআই প্যানেলের সিদ্ধান্তকে বম্বে হাই কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বিহারের সেক্রেটারি আদিত্য বর্মা। শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে জামাই মাইয়াপ্পান এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সহকারীদের রক্ষা করার। ২৮ জুলাই বম্বে হাইকোর্ট বলে বিসিসিআই-এ তদন্তকারী প্যানেল বেআইনি। এবং তাদের রিপোর্ট কার্যকরী হবে না।
মুকুল মুদগল
৫ আগস্ট বম্বে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে শীর্ষ আদালতে 'স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন' দায়ের করে বিসিসিআই। ৭ অক্টোবর শীর্ষ আদালত ৩ সদস্যেক একটি কমিটি গড়ে দেয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারক মুকুল মুদগল। এই কমিটিকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় কিন্তু এই কমিটির সাজা ঘোষণার এক্তিয়ার নেই বলেও জানিয়ে দেয় শীর্ষ আদালত। এই তদন্তে বিসিসিআই যেন সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে তাও বলে দেওয়া হয়।
শীর্ষ আদালতে রিপোর্ট জমা
আইপিএল এবং বোর্ড আধিকারিক, প্রবীন খেলোয়াড়-সহ প্রায় ১০০ জনের সঙ্গে কথা বলার পর ২০১৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শীর্ষ আদালতে রিপোর্ট পেশ করে মুদগল কমিটি মুখবন্ধ খামে ১৩ জনের নাম আদালতের কাছে জমা দেয় কমিটি। এই ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, এবং তাদের বিরুদ্ধে আরও গভীর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে আদালতকে জানায় মুদগল কমিটি।
মুদগল কমিটি এও জানায়, মাইয়াপ্পান চেন্নাই সুপার কিংসের মুখ, এবং বেটিং চক্রে তিনি সামিল। মাইয়াপ্পানের পাশাপাশি কুন্দ্রার নামেও বেটিংয়ে যুক্তের অভিযোগ জানানো হয়।
দায়িত্বে গাভাস্কার
২৫ মার্চ, স্বচ্ছ ও অবাধ তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্ট শ্রীনিবাসনকে বিসিসিআই-এ কাজ কর্ম থেকে সরে যেতে বলে। বিসিসিআই-এর অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি হিসাবে বিচারকরা সুনীল গাভাস্কার (আইপিএল সংক্রান্ত) এবং শিবলাল যাদব (আইপিএল ব্যতীত অন্যান্য অনুষ্ঠান)-কে দায়িত্ব গ্রহণ করতে বলেন। একই সঙ্গে আদালত এও জানিয়ে দেয় ইন্ডিয়া সিমেন্টের কোনও কর্মী বা ব্যক্তি, সিএসকে-র মালিক বিসিসিআই-এ কোনও কাজে যুক্ত হবে না।
তদন্ত
১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট খাম বন্দী ১৩ টি নামের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার ক্ষমতা দেয় মুগদল কমিটির হাতে। তদন্তে সাহায্য়ের জন্য আইপিএস আধিকারিক বিবি মিশ্রকে এই কমিটিকে যুক্ত করা হয়। শ্রীনিবাসনের বোর্ড চালানোর (আইপিএল ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে) আর্জি আদালত খারিজ করে দেয়, তবে আইসিসি-তে বিসিসিআই-এ প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই বলে জানিয়ে দেয়।
বিসিসিআই-এর আবেদন
২৯ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন একটি রিপোর্ট জমা দেয় মুদগল কমিটি। এর পর ৩ নভেম্বর মুদগল কমিটি তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়। কিন্তু আদালতে বিসিসিআই-এ তরফে আর্জি জানানো হয় এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে না আনার।
বিসিসিআই নীতির বিতর্কিত সংশোধন
বেশ কয়েকটি শুনানির পর ২০১৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সিদ্ধান্ত নেয় বিসিসিআই নীতির বিতর্কিত সংশোধনী পরীক্ষা করে দেখা হবে। বাণিজ্যিক স্বার্থে আইপিএল এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ টি ২০-তে অফিস ধারকরা নিজেদের দল নিতে পারবে।
স্বার্থের সংঘাতের তিরস্কার করা হয় শ্রীনিকে, যাঁর সংস্থা ইন্ডিয়া সিমেন্ট চেন্নাই সুপার কিংসের মালিক। শ্রীনি এই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
লোধা কমিটি
২০১৫ সালের ২২ জানুয়ারি ঐতিহাসিক রায় আসে। সুপ্রিম কোর্ট শ্রীনিবাসনকে বলে বিসিসিআই নির্বাচনে তাকে অংশগ্রহণ না করার জন্য। সুপ্রিম কোর্টের তরফেই লোধা কমিটি গড়া হয় য়ারা মাইয়াপ্পান, কুন্দ্রা এবং তাদের দলের সহকারীদের সাজা ঘোষণা করবে।