নতুন নয় ক্রিকেটে ধর্মঘট, জেনে নিন ১২৫ বছর পুরোনো ইতিহাস
ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। বহুল প্রচলিত এই কথাটি সবার জানা। আর হয়ত এর জন্যই ক্রিকেটের সঙ্গে বিদ্রোহ, ধর্মঘট—শব্দগুলো একেবারেই বেমানান। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বিষয়টি একটু আলাদা।
ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। বহুল প্রচলিত এই কথাটি সবার জানা। আর হয়ত এর জন্যই ক্রিকেটের সঙ্গে বিদ্রোহ, ধর্মঘট-শব্দগুলো একেবারেই বেমানান। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বিষয়টি একটু আলাদা। সেদেশে ১১ দফা দাবি জানিয়ে বোর্ড কর্তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন শাকিবরা। দিয়েছেন ধর্মঘটের ডাক। তবে সেদেশে ক্রিকেটারদের ধর্মঘটে যআওয়ার নজির এই প্রথম না। এর আগেও ঘটেছে এই ঘটনা।
১৯ বছর আগে একবার ধর্মঘট দেখেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পাঁচ মাস আগে সেই ধর্মঘট শেষ হয়েছিল বোর্ড ও খেলোয়াড়দের মধ্যে সমঝোতায়। এবারের এই ঘটনার ছয় বছর আগে ২০১৩ সালেও একবার প্রতিবাদ জানিয়ে বিসিবি কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়েছিলেন সেদেশের ক্রিকেটারেরা। আর ক্রিকেটে বিষয়টি ১২৫ বছর পুরোনো। ক্রিকেটে ধর্মঘটে যাওয়ার পথটা দেখিয়ে গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারেরা।
১৮৮৪ সালে অস্ট্রেলিয়া
বিলি মারডক। ভিক্টর ট্রাম্পার আসার আগে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন এই মারডক। ১৮৮৪ সালে ঘরের মাঠে মারডকের নেতৃত্বে অ্যাশেজ সিরিজে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বিলি মারডকের নেতৃত্বে প্রথম ধর্মঘটের নজির দেখা গিয়েছিল সেই সিরিজেই। প্রথম টেস্টের পর মারডকের নেতৃত্বে ম্যাচের ‘গেট মানি'র (টিকিট বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ) ৫০ শতাংশ অর্থ দাবি করেছিল অস্ট্রেলিয়া দল। দাবি না মানায় মেলবোর্নে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে নামেনি মারডকের দল। মারডকের স্থানে দলকে নেতৃত্ব দেন টম হোরান। সেই ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া হেরে যায় দশ উইকেটে। তৃতীয় টেস্টে নিয়মিত খেলোয়াড়দের বেশির ভাগ দলে ফিরলেও মারডক সে সিরিজে ফেরেননি। ছয় বছর পর (১৮৯০) তাঁকে আবারও দেখা গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে। এর দুই বছর নাগরিকত্ব পাল্টে ইংল্যান্ডের হয়েও একটি টেস্ট খেলেছিলেন মারডক।
১৮৯৬ সালে ইংল্যান্ড
সেই ঘটনার দুই বছর পর খেলা থেকে ধর্মঘটে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারেরাও। ১৮৯৬ সালে অ্যাশেজ সিরিজে শেষ টেস্টের আগে ম্যাচ ফি দ্বিগুণ করার দাবিতে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন পাঁচ প্রফেশনাল ক্রিকেটার। ইংল্যান্ডের প্রফেশনাল ক্রিকেটারেরা তখন টেস্ট ম্যাচ প্রতি ১০ পাউন্ড করে পেতেন। অন্যদিকে একই দলে অ্যামেচার হিসেবে খেলা ডব্লিউ জি গ্রেস তাঁদের চেয়ে বেশি অর্থ পেতেন। এ ব্যাপারটি ভালো লাগেনি বিলি গান, জর্জ লোহম্যান, টম রিচার্ডসন, টম হেউইড ও ববি অ্যাবেলদের।
১৯৭৭ সালে কেরি প্যাকার ওয়ার্ল্ড সিরিজের জের
খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন কেরি প্যাকার। অস্ট্রেলিয়ান টিভি চ্যানেল চ্যানেল নাইন-এর এ মালিক ১৯৭৭ সালে খেলাটির সম্প্রচার স্বত্ব কিনতে ব্যর্থ হন। এ কারণে গ্রেগ চ্যাপেল, ক্লাইভ লয়েড, ইমরান খানদের মত ক্রিকেটারদের লোভনীয় অঙ্কের চুক্তিতে উড়িয়ে এনে জন্ম দিয়েছিলেন কেরি প্যাকার ওয়ার্ল্ড সিরিজের।
ভারতীয় ক্রিকেটাররাও ধর্মঘট করেছিলেন
১৯৮৯ সালে বিসিসিআইয়ের সঙ্গেও পারিশ্রমিক নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছিল ভারতীয় দল। বোর্ডের চুক্তিপত্রে কিছু শর্ত নিয়ে অসন্তোষ ছিল ক্রিকেটারদের মধ্যে। বোর্ডে নির্দেশ অমান্য করে ঘরের মাঠে সিরিজ চলাকালীন সংবাদপত্রে লিখে ছয় মাস নিষিদ্ধও হয়েছিলেন প্রাক্তন ক্রিকেটার দিলীপ ভেঙ্গসরকার, কপিল দেব, মহম্মদ আজহারুদ্দিন, কিরণ মোরে, অরুণ লাল ও রবি শাস্ত্রী। এদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডে তো মাঝে মধ্যেই এমন হয়ে থাকে।