ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডের ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জয় ছিল বিতর্কিত
রবিবার, ১৪ জুলাই, ঐতিহাসিক লর্ডসে নিউজিল্যান্ডকে সুপার ওভারে হারিয়ে ক্রিকেটে প্রথম বিশ্বকাপ জিতল ইংল্যান্ড।
রবিবার, ১৪ জুলাই, ঐতিহাসিক লর্ডসে নিউজিল্যান্ডকে সুপার ওভারে হারিয়ে ক্রিকেটে প্রথম বিশ্বকাপ জিতল ইংল্যান্ড। অবশ্য 'জিতল' কথাটা বলাটা কতটা ঠিক হবে জানি না কারণ নির্ধারিত ৫০ ওভার এবং সুপার ওভার -- দু'টি ক্ষেত্রেই ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের রান ছিল একই। ক্রিকেটের জনকরা শেষ পর্যন্ত জেতে বেশিবার বাউন্ডারি মারার সুবাদে যদিও সেই অদ্ভুত নিয়ম মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্গে তাদের ফুটবলে বিশ্বজয়ের ঘটনাটির একটি বড় মিল পাওয়া যাচ্ছে এবং সেটা হল বিতর্ক। ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও ইংল্যান্ডের প্রথম এবং একমাত্র মুকুটজয় নিজেদের মাটিতে, ১৯৬৬ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তখন কুড়ি বছর মোটে পেরিয়েছে এবং ইউরোপের মাটিতে বিভাজনের রাজনীতির ঘা তখনও দগদগে। সেই সময়ে দুশমন জার্মান বা ইতালিয়ানদের মতো একবারও বিশ্বকাপ না জিততে পারাটা ইংল্যান্ডের কাছে যথেষ্ট অস্বস্তির কারণ ছিল। আর তাই তারা ঝাঁপায় অন্তত একটিবার শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে।
পেলেকে 'লাথি' মেরে বের করে দেওয়া হয় বিশ্বকাপে
১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপটি ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম বড় বিতর্কিত প্রতিযোগিতা। বিশ্বকাপের শুরুর আগে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত খেলোয়াড় ববি মুর নাকি বলেছিলেন যে তুঙ্গে থাকা ব্রাজিল দল থেকে যদি পেলেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তিনি বিশ্বকাপটি তাঁর দেশবাসীর জন্যে নিয়ে আসবেন। ব্রাজিল তার আগে ১৯৫৮ এবং ১৯৬২-র বিশ্বকাপ জিতে জুলে রিমে কাপটি চিরকালের জন্যে দখল করার ইতিহাসের সামনে।
কিন্তু ব্রাজিলের বিরুদ্ধে যেন আঁতাঁত ঘোষণা করল দুনিয়ার অশুভশক্তি। ব্রাজিল সেবারে গ্রূপ পর্যায়েই ছিটকে যায়। গরুপের খেলায় পেলেকে এমন মারে বুলগেরিয়ার খেলোয়াড়রা যে তিনি হাঙ্গেরির সঙ্গে দ্বিতীয় ম্যাচে আর খেলতেই পারেননি। সেই ম্যাচে ব্রাজিলের দু'টি গোলও অবৈধ ঘোষণা করা হয় এবং তৃতীয় ম্যাচেও পর্তুগালের খেলোয়াড় জোয়াও মোরেইস ফের পেলেকে আহত করে মাঠের বাইরে পাঠান। মোরেইসকে রেফারি এই কাণ্ডের জন্যে সাবধানও করেননি। এখানে বলা যেতে পারে যে ব্রাজিলের খেলাগুলিতে রেফারির ভূমিকায় ছিল পশ্চিম জার্মান এবং ইংল্যান্ডের আধিকারিকরা। সেবারের বিশ্বকাপ থেকে দেশে ফিরে আয়োজক দেশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন পেলে। এমনকি ইংল্যান্ডের বিশ্বজয়ী দলের প্রকৃত ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। ফাইনালে সেবার পশ্চিম জার্মানিকে ৪-২ গোলে হারিয়ে কাপ যেতে ইংল্যান্ড।
মাঠের সমস্যার জন্যে কূটনৈতিক স্তরেও পড়েছিল প্রভাব
আয়োজকদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ চারাও ১৯৬৬-র সেই বিশ্বকাপে নানারকমের সমস্যা এবং বিতর্ক দেখা দিয়েছিল, যেমন অন্যান্য দলের সুযোগ সুবিধা, মিডিয়া কভারেজ ইত্যাদি। এমনকি, এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ব্রাজিলের কূটনৈতিক স্তরেও দেখা দিয়েছিল সমস্যা।
ফুটবলের বিশ্বকাপে ওই একবারই সাফল্য পেয়েছিল ইংল্যান্ড। গতবছর রাশিয়াতে ভালো খেললেও শেষ চারে আটকে যায় তারা।
ফুটবলের মতো অতটা না হলেও ক্রিকেটের বিশ্বকাপেও কম বিতর্কিত হল না ইংল্যান্ডের প্রথম শিরোপা জয়।