মহেন্দ্র সিং ধোনিকে কেউ ডেকে বলতে পারছেন না 'ওহে তুমি বুড়ো হয়েছো, এবারে বিদায় নাও!'
মহেন্দ্র সিং ধোনিকে নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। রাঁচির এই আটত্রিশের ক্রিকেটার এখনও জানাননি যে তিনি কবে অবসরগ্রহণ করবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আর তার ফলে বিষয়টি একটি মনস্তাত্বিক
মহেন্দ্র সিং ধোনিকে নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। রাঁচির এই আটত্রিশের ক্রিকেটার এখনও জানাননি যে তিনি কবে অবসরগ্রহণ করবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আর তার ফলে বিষয়টি একটি মনস্তাত্বিক চাপ-পাল্টা চাপের খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবং এই খেলায় যে এই মুহূর্তে ধোনিই জিতেছেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আর এখানেই ভারতীয় ক্রিকেটের সাবালক হয়ে ওঠা বাকি।
স্টিভ ওয়া ক'দিন আগে ভারতের অবসরগ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন
কয়েকদিন আগে প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক স্টিভ ওয়া ভারতের এই ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়ে ফের একটি প্রশ্ন উস্কে দেন। তিনি বলেন এদেশের বড় ক্রিকেটারদের এমন 'জীবনের চেয়েও বড়' ভাবমূর্তি তৈরী হয় যে তাঁদের অবসরগ্রহণের পথ বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। কোটি কোটি ফ্যান-সমর্থকদের আবেগ তাঁদের সরে যাওয়ার ইস্যুটিকে জটিল করে তোলে। ওয়া বলেন এদিক থেকে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট প্রশাসকরা বর্ষীয়ান খেলোয়াড়দের সরে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে অনেক বেশি পেশাদারিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করে। কোনওরকম হঠকারিতা বা আবেগের ধার না ধেরে মসৃণভাবে নামি ক্রিকেটারদের অবসর নেওয়ার পথ প্রশস্ত করে দেন তাঁরা। আর এতে সব পক্ষই খুশি থাকে।
ধোনি খোঁড়াচ্ছেন, তবুও অবসর নেবেন না
ভারতে সেই ম্যান ম্যানেজমেন্ট একজনও ভবিষ্যতের গর্ভে। ধোনি বিগত কয়েক বছর ধরেই খোঁড়াচ্ছেন। তাঁর ব্যাটিং এখন অতীতের ছায়া মাত্র। এদিকে বেশ কিছু নতুন ক্রিকেটারও এসে গিয়েছেন। এই অবস্থায় ধোনির উচিত ছিল বিশ্বকাপের মতো মঞ্চেই অবসর ঘোষণা করা; সেমি-ফাইনালে হেরে যাওয়ার পরেই। ধোনি হয়তো ভেবেছিলেন যে ভারত এবারে জিতলে বিজয়ীর মঞ্চ থেকে বিদায় নেবেন কিন্তু তা বাস্তবে না হওয়ার ফলে এখন ফের দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।
নামের আগে 'প্রাক্তন' বসলেই ব্র্যান্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়
আসলে খেলা ছাড়া এদেশের ক্রিকেটারদের কাছে এক অগ্নিপরীক্ষার সামিল। খেলায় থাকাকালীন যে পাহাড়প্রমাণ সুযোগ-সুবিধা, বাণিজ্যিক মুনাফা এবং অর্থ তাঁরা পান, নামের আগে 'প্রাক্তন' বসে গেলে সেই স্বর্গীয় জীবন নিমেষে অতীত হয়ে যাবে। ফিকে হয়ে যাবে গোটা ব্র্যান্ডটাই। আর সেটা কেই বা চান? অতীতে কপিলদেব এমনকি আমাদের সবার প্রিয় সচিন টেন্ডুলকারকেও দেখা গিয়েছে এই একই কাণ্ড করতে।
বয়সের ধর্ম কেউ খণ্ডাতে পারে না। আর বিশেষ করে, খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রে যেহেতু কেরিয়ারের মেয়াদ খুব বেশি নয়, তাই এই অবসরগ্রহণের বিষয়টি আরও কঠিন হয়ে পড়ে। আর সেখানেই প্রয়োজন একটি শক্তসমর্থ নীতি-নিয়ম। ভারতে সেটাই নেই।
ধোনির সঙ্গে এখনও কেউ তাঁর অবসর নিয়ে কথা বলেছেন কি না জানা নেই কিন্তু সেই কাজটি যে অনেকের কাছেই 'অপ্রিয়' তা বুঝতে দেরি হয় না। অধিনায়ক বিরাট কোহলিও বোধকরি এই কাজটা করতে চান না। মুখ্য নির্বাচক এম এস কে প্রসাদও না।
আমরা ভারতীয়রা সত্য কথাটি মুখের উপরে বলতে পারি না
আসলে এটা ভারতীয় সংস্কৃতির সমস্যা। অপ্রিয় কথাটি আমরা বলতে চাই না পাচ্ছে উল্টোদিকের মানুষটি যদি কিছু মনে করেন। আত্মীয় সমাজের অন্যতম বড় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এটাই। কিন্তু খেলার মতো একটি বয়সকেন্দ্রিক ক্ষেত্রে এই অপ্রিয় কথাটি বলা খুব প্রয়োজন, নয়তো জাতীয় ক্ষতির সম্ভাবনা। ধোনি যেভাবে সামরিক প্রশিক্ষণে চলে গেলেন বাকি সবাইকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে তাতে পরিষ্কার বোঝা গেল যে তিনি সময় কিনছেন কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট নিশ্চই তাঁর জন্যে বসে থাকবে না। তিনি অবসর নেবেন কি না তা তাঁর ব্যক্তিগত বিষয় কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটের উচিত তাঁকে বাদ রেখেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেওয়া। আগামী ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ঋষভ পন্থরা ভালো খেলে দিলে ধোনির প্রত্যাবর্তনের পথ কঠিন হয়ে গেলে তখনও নির্বাচকরা তাঁকে কঠিন কথাটি সহজ করে মুখের উপরে বলে দিতে পারবেন তো?
কোটি টাকার প্রশ্ন সেটাও।