আর কত অবহেলিত হবেন ঝুলন, লর্ডস-এর বাঙালি বীরাঙ্গনার সম্বর্ধনা এখনও বিশ-বাঁও জলে
বুধবার দিন দু'ভাগে মুম্বই ফিরবে বিশ্বকাপে রানার্স হওয়া মহিলা ক্রিকেট দল। তবে, ঝুলন ফিরলে তাঁকে কীভাবে অভ্যর্থনা জানানো হবে বা সম্বর্ধনা দেওয়া হবে তা নিয়ে কোন পরিকল্পনা এখনও করে উঠতে পারেনি রাজ্য সরকার
বিশ্বকাপে ভারতীয় মহিলা দলের দুরন্ত পারফরমেন্সের পর গোটা দেশ জুড়ে ভারতীয় মেয়েদের বন্দনা চলছে। বিসিসিআই রানার্স দলের প্রতি সদস্যের জন্য আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন রাজ্য সরকার নিজের রাজ্যের মেয়েদের জন্য নানাবিধ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। কিন্তু হায় রে ঝুলন গোস্বামী। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং সিএবি কেউই এখনও ঘরের মেয়ের হোমকামিং নিয়ে কিছু ভেবে উঠতে পারেননি।
ঘরের মেয়ে ঝুলনের অবশ্য এতে কোনও দিনই হেলদোল ছিল না। একরাশ হতাশাকে মনের কোণায় লুকিয়ে রেখেই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একের পর এক কৃতিত্বের অধিকারিনী হয়েছেন। বাংলা থেকে ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্বের মুকুট পড়েছেন চাকদহের ঝুলন। পেয়েছেন অর্জুন পুরস্কার। এই মুহূর্তে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মহিলাদের মধ্যে বিশ্বের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী তিনি।কিন্তু সেই সোনার মেয়ের জন্য বাড়তি কোনও পরিকল্পনার কথা না রাজ্য সরকার না সিএবি- কেউই করে উঠতে পারেনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই মুহূর্তে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে হয়তো ব্যস্ত আছেন, কিন্তু রাজ্য ক্রীড়া দফতরও তো আছে। তাঁরা যে বিষয়টি নিয়ে কোনও চিন্তাভাবনা করছেন এমন কোনও খবর এখনও পর্যন্ত নেই।
সিএবি-তে এই মুহূর্তে নেই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সিএবি-র যুগ্ম সচিবরাও এখনও কিছু ঝুলন বরণের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারেননি। তাঁদের যুক্তি, যেহেতু ঝুলন কবে কলকাতায় ফিরবেন তা এখনও স্থির হয়নি, তাই এই নিয়ে পরিকল্পনা করা যায়নি। বুধবার দিন মহিলা টিম দুটি দলে ভাগ হয়ে মুম্বই পৌঁছবেন। তারপর তাঁরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের সময় এখনও স্থির না হওয়ায় ঝুলন কবে কলকাতায় পা রাখবেন তা জানা যায়নি। কিন্তু কোনও না কোনও দিন তো ঝুলন ফিরবেন তাহলে আগেভাগে পরিকল্পনাটা সেরে রাখতে অসুবিধা কোথায়? ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্যদের রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় ক্রিকেট প্রশাসন সংস্থা বিভিন্ন ধরণের পরিকল্পনা কথা ঘোষণা করছে। সেখানে সিএবি-র মতো একটা বরেণ্য এবং দক্ষ ক্রিকেট সংস্থা ঝুলনকে নিয়ে যে নজিরবিহীন নীরবতা দেখিয়ে চলেছে তাতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সিএবি-র একটা অংশও এই ধরনের নীরবতাকে মেনে নিতে পারছে না। আড়ালে-আবডালে কথা চালাচালি হচ্ছে।
ঝুলন সম্পর্কে এমন অবহেলায় সিএবি-র প্রাক্তন যুগ্মসচিব বিশ্বরূপ দে বেজায় চটেছেন। সরাসরি নাম না করলেও বর্তমান প্রশাসকদের দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি। উদাহরণ হিসেবে বলেছেন, বিশেষ কোনও ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই প্রসঙ্গেই তিনি উদাহরণ দিয়েছেন ওয়ান ডেতে রোহিত শর্মার দ্বিশতরানের ইনিংসের দিকে। বলেছেন সেদিন ম্যাচ চলাকালীনই তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া রোহিতকে আর্থিক পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
ক্রিকেটে ভারতে ধর্ম হলেও এতদিন মহিলাদের ক্রিকেট সেই স্পটলাইটের থেকে শত -সহস্র মাইল দূরে ছিল। কিন্তু এবারের মহিলা বিশ্বকাপের পর যখন সবাই বদলাচ্ছে, তখন কিছুটা না হয় বদলাল বাংলাও। প্রচলিত প্রবাদ ছিল হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে , ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুমরো। জগমোহন ডালমিয়া এই মন্ত্রেই একটা সময় সিএবি-কে বিশ্বের অন্যতম দক্ষ ক্রিকেট প্রশাসনিক সংস্থা হিসাবে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু, তাঁর ফেলে যাওয়া রাজত্বে যেসব উত্তরাধিকাররা রয়ে গিয়েছেন তারা কেন ডালমিয়ার সেই মন্ত্রকে অবজ্ঞা করতে চাইছেন।