'গ্রেগ' অধ্যায় নিয়ে বিস্ফোরক সৌরভের নিশানায় কারা? ২০০৫-এর সেই দুঃসহ অধ্যায়!
'গ্রেগ' অধ্যায় নিয়ে বিস্ফোরক সৌরভের নিশানায় কারা? ২০০৫-এর দুঃসহ অধ্যায়!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন ১২ বছর আগে। এতদিন চুপই ছিলেন মহারাজ। বলেননি কাউকে কিছুই। কেবল জবাব দিয়েছেন কাজে। কখনও ব্যাটে, তো কখনও ক্রিকেট প্রশাসকের আসনে বসে। দিন যত গড়াচ্ছে, ততই শক্তিশালী হচ্ছেন বেহালার লড়াকু আইকন। বিসিসিআইয়ের শীর্ষ আসনে বসে আইসিসি-র সর্বোচ্চ পদের দিকে নিশানা তাক করেছেন দাদা। তাই এবার এগিয়ে এসে বাপি বাড়ি যা করতই পারেন সৌরভ এবং করলেনও। ২০০৫-এর সেই দুঃসহ অধ্যায় নিয়ে মুখ খুললেন এতদিন পরে। গুরু গ্রেগ চ্যাপেল অধ্যায় নিয়ে বলতে গিয়ে কাঠগড়ায় তুললেন একে একে প্রত্যেককে।
সবচেয়ে বড় ধাক্কা
২০০৫ সালে পারফরম্যান্সের দোহাই দিয়ে আচমকাই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এমনকী তাঁকে নিজের হাতে গড়া দল থেকেই কার্যত ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছিল। ওই ঘটনাই যে তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারের সবচেয়ে বড় দুঃসময়, এক সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাতকারে তা মেনে নিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে অন্যায় এবং অবিচার করা হয়েছিল বলে সাফ জানিয়েছেন মহারাজ। স্মৃতির সরণী ধরে হেঁটে বিসিসিআই সভাপতি জানিয়েছেন, জিম্বাবোয়ের মাটিতে সিরিজ জিতে দেশে ফিরেই তাঁকে এই খবর শুনতে হয়েছিল। তিনি বিরাট বড় ধাক্কা খেয়েছিলেন।
২০০৭-এর বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন
দক্ষিণ আফ্রিকায় হওয়া ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ একটুর জন্য হাতছাড়া হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নেতৃত্বাধীন টিম ইন্ডিয়ার। ফাইনালে পরম শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হার হজম করতে হয়েছিল ভারতকে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি টিম ইন্ডিয়াকে ২০০৭-এর বিশ্বকাপ জেতানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন বলে জানিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই মতো তিনি প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন মহারাজ। কিন্তু একটা ঝড়ে সব স্বপ্ন ওলোট-পালোট হয়ে গিয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন দাদা। বলেছেন, পাঁচ বছর ধরে অধিনায়ক হিসেবে দলকে ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফরম্যান্স দিয়েও তাঁকে অন্যায়ের শিকার হতে হয়েছিল। প্রথমে ওয়ান ডে এবং পরে টিম ইন্ডিয়ার টেস্ট দল থেকেও তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছিল বলে আক্ষেপের সুরে বলেছেন বিসিসিআই সভাপতি।
গ্রেগের গোপন চিঠি
দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, শুরুটা করেছিলেন গ্রেগ চ্যাপেলই। অজি কোচ তাঁর বিরুদ্ধে বিসিসিআই-কে গোপন ইমেল করেছিলেন বলে জানিয়েছেন মহারাজ। তিনি তা পরে জানতে পেরেছিলেন। শুরুটা সেখান থেকে হয়েছিল বলে জানিয়েছেন দাদা। এরপর তাঁর সাজানো সংসার ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হয়েছিল বলে আক্ষেপও করেছেন বিসিসিআই সভাপতি।
ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, ক্রিকেট দল পরিবারের মতো। সেখানে দুই সদস্যের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, মতের অমিল হতেই পারে বলে মনে করেন দাদা। তাঁর কথায়, কোচ চ্যাপেলের সমস্যা হলে তিনি তা সরাসরি বলতে পারতেন। এভাবে পিঠে ছুরি মারা কোনও অভিভাবক সুলভ ব্যক্তিত্বের কাজ হওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন বিসিসিআই সভাপতি।
প্রত্যেকে জড়িত ছিলেন
ওই দুঃসহ পরিস্থিতির জন্য গ্রেগ চ্যাপেলকেই কেবল দোষ দিতে চান না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর সোজাসাপ্টা বক্তব্য, চ্যাপেল শুরু করলেও শেষ করেছিল বিসিসিআই। মহারাজের কথায়, বিদেশি কোচ আর যাই হোক ক্রিকেটার নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না। গ্রেগ চক্রান্ত করেছিলেন এবং তাতে নির্বাচকরা সামিল হয়েছিলেন বলে সাফ জানিয়েছেন দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক। সৌরভের দাবি, ঘটনায় জড়িত ছিল সিস্টেম।
আত্মবিশ্বাস
এই কঠিন সময়ে তিনি কখনও চাপ অনুভব করেননি বলে জানিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। বলেছেন, তিনি কোনওদিনই নিজজের ওপর বিশ্বাস হারাননি। তাই এক বছর পরেই তিনি ফের জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পেরেছিলেন বলে জানিয়েছেন মহারাজ। সেই সঙ্গে আরও একবার বলেছেন যে কোচ নয়, কোনও ক্রিকেট দলে অধিনায়কের হাতেই শেষ কথা বলার মতো অধিকার থাকা উচিত।