মোক্ষম 'সৌরভ' চাল দিয়ে বাজিমাত মমতার!
কলকাতা, ২৫ সেপ্টেম্বর : জগমোহন ডালমিয়ার মৃত্যুর পর থেকেই সিএবি-র দায়িত্বভার কার হাতে যেতে চলেছে তা নিয়ে একটা জল্পনা শুরু হয়েছিল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম উঠে এসেছিল। সৌরভের নাম ঘোষণার আগেই সিএবি-র সভাপতির নাম মোটামুটি আন্দাজ করা গিয়েছিল।
তাই সৌরভের নাম ঘোষণা হওয়ার পরও চমক লেগেছে সে কথা কিন্তু কেউই বলতে পারবেন না। তবে চমক ছিল অন্যখানে। স্বশাসিত সংস্থা সিএবি-র সভাপতির ঘোষণা হল নবান্ন থেকে। আর তার থেকেও বড় চমক ঘোষণা করলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। [সর্বসম্মতিক্রমে সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়]
সৌরভ ও সিএবি-র অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণের বৈঠক করার পর নবান্নে দাঁড়িয়ে একথা ঘোষণা করেন মমতা। আর তা ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক। কেন ক্রিকেটকে নবান্নে টেনে আনা হল তা নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রশ্ন, পাল্টা প্রশ্নের পালা।
তবে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে সৌরভ চাল দিয়ে রাজনৈতিক সমীকরণটা নিজের তরফে আনতে চাইছেন বলেই সিএবি-র সভাপতির ঘোষণা গড়াল নবান্ন পর্যন্ত। আর সে বার্তাটা অনেকটাই স্পষ্ট করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সৌরভকে নিয়ে রাজনীতির দড়ি টানাটানি খেলায় বিরোধীদের একটা বড় ঝটকা দিলেন মমতা।
বিজেপি-সৌরভ সমীকরণ
কিছুদিন আগে পর্যন্ত তুমুল জল্পনা শুরু হয়েছিল, হয়তো বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন দাদা। নিজের স্বচ্ছ ভারত অভিযান-এর জন্য সৌরভকে বেছে নেন মোদী। সৌরভও রাজি হন। এর পরেই জল্পনা শুরু হয় তাহলে কী স্বচ্ছ সৌরভারত অভিযানের আড়ালে এক মোক্ষম রাজনৈতিক চাল দিলেন মোদী। সৌরভকে কাছে টেনে তাঁর জনপ্রিয়তার সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে বাংলায় রাশ টানার পরিকল্পনা করছে বিজেপি? শোনা যাচ্ছিল সৌরভকে ক্রীড়া মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল বিজেপির তরফে। তারপর আবার সৌরভের মুখে মোদীর প্রশংসা সৌরভের বিজেপি টানের জল্পনাকে আরও উস্কে দিয়েছিল।
সৌরভের বাম সমীকরণ
অন্যদিকে আবার, সিপিএমও নাছোড়বান্দা। রাজত্ব হারানোর পর থেকে এরাজ্যে তাদের ভিতটাও নড়বড়ে হয়েছে। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর জন্য কোনও খুঁটি পাচ্ছিল না বামেরা। সৌরভকে দলে টেনে সেই সহায়ক খুঁটি পাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল এই দল। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের সঙ্গে অত্য়ন্ত ঘণিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল সৌরভের। কিন্তু সৌরভের রাজনীতিতে না মনোভাবের সামনে অশোক ভট্টাচার্যর এই সৌরভ সখ্যকেও কাজে লাগাতে পারে বামেরা।
রাজনীতির রং ছাড়াই মমতার চরম রাজনৈতিক চাল
অন্যদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি সৌরভকে নির্বাচন, মন্ত্রীত্বের লোভ না দেখিয়েই বিরোধীদের টেক্কা দিয়ে সৌরভকে ধীরে ধারে কাছে আনার চেষ্টা শুরু করে দেন। সৌরভের জনপ্রিয়তা বঙ্গে যে তুঙ্গে তা মমতা ভালই জানেন। তাই তো শুরুটা করেছিলেন সৌরভের অ্যাকাডেমি, স্কুলের জমির ব্যবস্থা করে দিয়ে। এরপর বিজনেস রিয়্যালিটি শো এগিয়ে বাংলার সঞ্চালনার জন্য সৌরভের নাম ঘোষণা করেন মমতা। এই সবের দরুণই সৌরভও মাঝে মাঝে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতেন। তখন থেকেই শাসক-দল ও সৌরভের নয়া সমীকরণ নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা ছিল, মমতা যদি বাম বিরোধীতার মেন্টালিটি আঁকড়ে এখনও বসে থাকেন তাহলে সৌরভকে তিনি কিছুতেই সিএবি-র সভাপতি হতে দেবেন না। কিন্তু সেই ভুলটি করেননি মমতা। বরং সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি দাদা ও দিদির নয়া সমীকরণের বার্তা বিচক্ষণভাবেই দিয়ে দিলেন। আপাতদৃষ্টিতে রাজনীতির রং না থাকলেও সৌরভকে সিএবির সভাপতি করে কাছে টেনে সঠিক সময়ে মোক্ষম দান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
পদ্মকাঁটা ভাঙল বুঝি
আর এর ফলে যা হল, তাতে মমতার কাছে চলে আসায় বিজেপি বা বামেদের নাগালের অনেকটা বাইরে চলে এলেন সৌরভ। কিছুদিন আগেই, নেতাজি সম্পর্কিত গোপন তথ্যের ফাইল প্রকাশ করে মোদীকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন দিদিমণি। এবার সৌরভকে মোদীর হাতের নাগাল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গোদের উপর বিষফোড়া দিলেন দিদি।