ভারতীয় ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত, যা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মস্তিষ্ক-প্রসূত
ভারতীয় ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত, যা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মস্তিষ্ক-প্রসূত
২০০০-র ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারি থেকে ২০১১-র বিশ্বকাপ জয়, লেজেন্ড মহেন্দ্র সিং ধোনির কৃতিত্বকে সরিয়ে রাখলে যে ব্যক্তিত্বের অবদান ভুলবে না ভারতীয় ক্রিকেট, তিনি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ভারতকে বিশ্বকাপ এনে দিতে না পারলেও, অধিনায়ক হিসেবে মহারাজের নেওয়া বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যে দেশের ক্রিকেটের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। সেগুলির দিকে নজর ফেরানো যাক।
যুবনীতি
ম্যাচ ফিক্সিং, দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত ভারতীয় ক্রিকেটকে ট্র্যাকে ফেরানোর ক্ষেত্রে অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের যে সিদ্ধান্ত সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেয়, তা হল যুবনীতি। সেই সময় ভারতীয় দলে যুবরাজ সিং, হরভজন সিং, মহম্মদ কাইফ, জাহির খান, আশিস নেহেরা, বীরেন্দ্র শেহওয়াগের মতো তারকাদের অন্তর্ভূক্তি ঘটে। আগামী এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁরাই ভারত তথা বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করেন।
ওয়ান ডে-তে উইকেটরক্ষক দ্রাবিড়
২০০৩ বিশ্বকাপের ঠিক আগে অভিজ্ঞ রাহুল দ্রাবিড়কে ভারতের ওয়ান ডে দল থেকে বাদ দেওয়ার মনস্থ করেছিলেন নির্বাচকরা। পরিবর্তে টিম ইন্ডিয়ায় একজন অল রাউন্ডার নেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মাথায় তখন অন্য চিন্তাই ঘুরছিল। রাহুল দ্রাবিড়কে দলে রাখার জন্য তাঁর হাতে উইকেটরক্ষকের দস্তানা তুলে দেনে মহারাজ। পরিবর্তে সচিন তেন্ডুলকর, যুবরাজ সিং, বীরেন্দ্র শেহবাগ এবং প্রয়োজনে নিজে হাত ঘুরিয়ে দলে অল রাউন্ডারের অভাব পূরণ করেন। ওই বিশ্বকাপের ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিল ভারত।
টেস্ট ওপেনার বীরেন্দ্র শেহওয়াগ
মিডিল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলেন বীরেন্দ্র শেহওয়াগ। এমনকী বীরুর ভয়ডরহীন ব্যাটিং টেস্ট ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত নয় বলে রব তুলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় কার্যত জেদ করেই বীরেন্দ্র শেহওয়াগকে দক্ষিণ আফ্রিকাগামী ভারতীয় টেস্ট দলে রেখেছিলেন। বীরুকে দিয়ে ইনিংস ওপেনও করিয়েছিলেন। সিংহের গুহায় প্রথম টেস্টেই শতরান হাঁকিয়েছিলেন শেহওয়াগ। একই ভাবে নির্বাচকদের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করে, ২০০১ সালে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে স্পিনার হরভজন সিং-কে দলে রেখেছিলেন মহারাজ। তারপর যা হয়েছে, তা তো ইতিহাস।
ইডেন টেস্টে সচিনের হাতে বল
২০০১-র ঐতিহাসিক ইডেন টেস্টে ফলো-অন খেয়েও ভিভিএস লক্ষ্মণ ও রাহুল দ্রাবিড়ের ম্যারাথন পার্টনারশিপে ম্যাচ বাঁচানো শুধু নয়, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সাড়ে তিনশোরও বেশি রানের লিড নিয়েছিল ভারত। ম্যাচের শেষ দিনে যখন অস্ট্রেলিয়া ড্র-র দিকে এগোচ্ছে, তখন গোল্ডেন আর্ম সচিন তেন্ডুলকরের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন টিম ইন্ডিয়ার তৎকালীন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তা রণকৌশল দুর্দান্ত ভাবে কাজ করে। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেডেন ও শেন ওয়ার্নের উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মেরুদণ্ড ভেঙে দেন মাস্টার ব্লাস্টার। ম্যাচ জেতে ভারত।
মহেন্দ্র সিং ধোনির নির্বাচন
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন অনেকে। চেন্নাইয়ের দীনেশ কার্তিক, বাংলার দীপ দাশগুপ্তের পরিবর্তে ঝাড়খণ্ডের মহেন্দ্র সিং ধোনিকে উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হিসেবে ভারতীয় দলে জায়গা দিয়েছিলেন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মহারাজ যে কতটা দূরদর্শী ছিলেন, তা প্রমাণ করেন ধোনি নিজেই। তার সাক্ষী ভারতীয় ক্রিকেটও।