মাথার উপর থেকে সরে গেল ছাতা, চলে গেলেন ময়দানের 'ভীষ্ম' - শোকের ছায়া ফুটবল-ক্রিকেট দুই মহলেই
কিংবদন্তী ক্রীড়া প্রশাসক ও বিসিসিআই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বি এন দত্তের জীবনাবসান।
চলে গেলেন কলকাতা ময়দানের 'ভীষ্ম', বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি বিশ্বনাথ দত্ত। সোমবার দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরে নিজের বাসভবনেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ফুসফুসের সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন, যার জন্য ইচ্ছে থাকলেও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর ময়দানে যাতায়াত।
বাংলার ময়দানে প্রকৃতই পিতামহের ভূমিকায় ছিলেন তিনি। ক্রিকেট ও ফুটবল প্রশাসনের দুই বড় নাম - প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়া ও অশোক ঘোষ তাঁরই হাত ধরেই ময়দানে পা রেখেছিলেন।
তিনি নিজে প্রশাসনিক জীবন শুরু করেছিলেন ফুটবল দিয়ে। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সর্বভারতীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৭৭ সালে আসেন ক্রিকেটে। সিএবির সেক্রেটারির দায়িত্ব নেন। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি সিএবির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলান এবং ১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত ছিলেন চেয়ারম্যান।
এরপর তিনি পারি দিয়েছিলেন সর্বভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে ১৯৮৯ সালে বিসিসিআই-এর প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। তার আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও কাজ করেছিলেন। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি দুটি টার্মে বিসিসিআই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। সিএবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন।
সক্রিয় ক্রীড়া প্রশাসন থেকে অব্যাহি নেওয়ার পরও বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ময়দানকে পথ দেখিয়েছিলেন। ন্যায়পরায়ণ, সত, কঠোর ব্যক্তিত্বের মানুষ ছিলেন বিশ্বনাথ বাবু। ময়দানকে যেকোনও বিতর্ক সমাধানের জন্য তার শরণাপন্ন হতে দেখা গিয়েছে বারবার। খেলাধুলার উন্নয়নের জন্য তিনি সারাজীবন ব্যয় করেছিলেন। বিশ্বনাথ বাবুর পুত্র সুব্রত দত্ত নিজেও ফুটবল প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত।
<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/post.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2FCABCricket%2Fphotos%2Fa.950055968419499%2F1842533335838420%2F%3Ftype%3D3&width=500" width="500" height="503" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allow="encrypted-media"></iframe>
একইসঙ্গে তাঁর জহুরির চোখ ছিল বলে প্রচলিত ছিল। প্রতিভাকে এক পলকেই তিনি চিনে নিতে পারতেন। তাদেরকে ঘসে মেজে ঝকঝকে করে তোলার কাজ সারা জীবন ধরেই তিনি করে গিয়েছেন। কিংবদন্তি ক্রিকেট প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়া তাকে তাঁর গুরু বলে মানতেন। প্রায়শয়ই বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শের জন্য বিশ্বনাথ বাবুর বাড়ি ছুটতেন তিনি। এই দুই অসমবয়স্কের মধ্যে অসাধারণ বন্ধুত্ব ছিল।
সকাল ১০টায় তাঁর মরদেহ আনা হয় জর্জ টেলিগ্রাফ ক্লাব তাঁবুতে। সেখানেই বেশ কিছুক্ষণ দেহ রাখা হয়। ময়দানের হবহু পরিচিত, অপরিচিত মুখ এসেছিলেন তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সিএবিতে-ও। সোমবার তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে সিএবির সব কাজ বন্ধ রাখা হয়।
<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/post.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2FCABCricket%2Fposts%2F1842534919171595&width=500" width="500" height="794" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allow="encrypted-media"></iframe>
বিশ্বনাথ দত্তের প্রয়াণে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শেক প্রকাশ করে সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্য়ায় জানিয়েছেন, 'তিনি ক্রীড়া প্রশাসনের কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব। তাঁর মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।' বিশ্বনাথ বাবুর পরিবারের প্রতি তিনি সমবেদনা জানান।
বিশ্বনাথবাবুর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সিএবি-র যুগ্মসচিব তথা জগমোহন ডালমিয়ার ছেলে অভিষেক ডালমিয়া। তিনি বলেন, 'কলকাতা ময়দানের পিতৃপুরুষ ছিলেন তিনি। তাঁর অবদান অপরিমেয়। সবাইকে একত্রিত করার এক অদ্ভূত ক্ষমতা ছিল তাঁর। তাঁর মৃত্যু আমার ব্যক্তিগত ক্ষতি। আমাদের পরিবারের বন্ধন একেবারে ভিন্ন পর্যায়ে।'