১০ মিনিটের লাইফ-লাইন না পেলে আজ ক্রিকেটার হতেন না, খোলসা করলেন খোদ সচিন
একটা লাইফ লাইন- আর সেটাই রক্ষা করেছিল তাঁর ক্রিকেটার হয়ে ওঠার স্বপ্নকে। ফেসবুক লাইনে এমনই এক অজানা কাহিনি শেয়ার করলেন সচিন তেন্ডুলকর।
তাঁর চোখে সব সময়ই একটাই ছবি বার-বার ভেসে উঠত- লডস, সেখানে ভারতীয় দর্শকদের ভিড়ের মাঝে কপিল দেব, মহিন্দার অমরনাথ, বলবিন্দর সাঁধু-দের দৌড়ে পালানো। আর লডস-এর ব্যালকনিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ট্রফি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কপিল দেব। এই একটাই স্বপ্ন তাঁর শরীর থেকে মন সবকিছুকেই ছেয়ে ফেলত। এর থেকে বের হতে পারতেন না সচিন রমেশ তেণ্ডুলকর। সবসময়ই যেন ভারতীয় দলের তিরাশি-র বিশ্বকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মুহূর্তটাকে উপভোগ করতে চাইতেন। মনে মনে চাইতেন বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন ট্রফি হাতে ধরার অনুভূতি পেতে।
ভাই-এর এমন ক্রিকেট প্রেম দেখে দাদা অজিত তেণ্ডুলকর শিবাজী পার্কে রমাকান্ত আরচেকরের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। ছোট্ট সচিনকে দেখে মোটেও প্রথমে খুশি হননি আরচেরেকর। কারণ, ছোট্ট সচিন নেটে তাঁর থেকে বয়সে বড় বোলারদের কোনও বলই ঠিক-ঠাক করে মারতে পারছিলেন না। প্রচণ্ড বিরক্ত আরচেরেকর। অজিত-কে তিনি বলেই দেন আরও একটু বড় হলে ভাই-কে তাঁর কাছে নিয়ে আসতে। অজিত হাল ছাড়েননি। কারণ, ছোট্ট তেন্ডেলার মধ্যে তিনি ক্রিকেটের যে আগুন দেখেছিলেন তা আরচেরেকর-কে দেখানো দরকার ছিল। অজিত নিজেও ক্রিকেট প্লেয়ার। তাই হার মানতে রাজি ছিলেন না। আরচেরেকর কাছে তিনি মাত্র ১০ মিনিট সময় চেয়েছিলেন। আরচেরেকর-কে শুধু অনুরোধ করেছিলেন নেটের পিছন থেকে সরে যেতে। আর তাঁর ছোট্ট ভাই তেন্ডেলাকে বলেছিলেন ভয়-ডরহীন হয়ে ব্যাট করতে। অজিতের কথায় আরচেরেকর নেটের পিছন থেকে সরে গিয়েছিলেন।
এরপর ছোট্ট সচিন এমন ব্যাট করেছিলেন যে খোদ আরচেরেকর বিস্মিত হয়েছিলেন। সচিন-কে আর ফিরিয়ে দেওয়ার সাহস দেখাননি তিনি।
১৫ নভেম্বর, ১৯৮৯ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিশ্ব ক্রিকেটের আঙিনায় আবির্ভাব হয়েছিল সচিন রমেশ তেণ্ডুলকরের। তারই ২৮ বছর পূর্তি দিবসে ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন সচিন। আর সেখানেই তিনি তাঁর ক্রিকেটার হয়ে ওঠার কাহিনি থেকে প্রথম টেস্ট অভিষেক এবং আরও নানা বিষয় শেয়ার করেন।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেকের দিনে কীভাবে বাথরুমে হাউ-হাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন-সে কথাও শেয়ার করেছেন সচিন। ফেসবুকের লাইভ ভিডিও-তে সচিন জানিয়েছেন, রনজি, ইরানি ট্রফিতে একের পর এক সাফল্যে তাঁর মধ্যে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই বিশাল আত্মবিশ্বাস জন্মেছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ময়দানে টেস্ট ক্রিকেটে ব্যাট হাতে ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রাম, আকিব জাভেদ-দের মোকাবিলা করা যে চাট্টিখানি কথা নয় তা সে দিন প্রথম তিনি মালুম করেছিলেন। সচিন নিজেই জানাচ্ছেন, 'যে আমি রনজি-তে রানের পর রান করে বিশ্বাস করছিলাম যে এই ক্রিকেট ময়দান আমার জন্য, সেদিন আমি যেন কিছুই ঠিকমত করতে পারছিলাম না। আন্তর্জাতিক আঙিনায় বিশ্বসেরা বোলিং অ্যাটাককে টেস্ট ক্রিকেটে মোকাবিলা করা কতটা কঠিন আমি মালুম করেছিলাম। কোনওমতে ১৫ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে এসেছিলাম। মনে হচ্ছিল ক্রিকেটকে আমি কোনওভাবেই ধারণ করি না। বাথরুমে ঢুকে হাউ-হাউ করে কেঁদে ফেলেছিলাম। মনে হচ্ছিল ৮৩-র বিশ্বকাপের সেই স্বপ্ন আস্তে আস্তে আমার কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। সেদিন আমার সিনিয়ররা আমাকে প্রচুর স্বান্তনা দিয়েছিল। আমার মনোবল বাড়াতে সাহায্য করেছিল। তাঁদের কথায় আমিও কিছুটা আত্নবিশ্বাস ফিরে পেয়েছিলাম। চাইছিলাম অন্তত আর একটা সুযোগ। '
সচিন তাঁর এই ফেসবুক লাইভে আরও জানিয়েছেন, যে তিনি রোজ তাঁর লক্ষ্য নির্ধারণ করতেন। আর সেই লক্ষ্য পূরণের পর ফের নতুন করে লক্ষ্য তৈরি করতেন। এভাবেই তাঁর মধ্যে ক্রিকেটের মজাকে দিনের পর দিন বছরের পর বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিলেন বলে সচিন জানিয়েছেন। তাঁর মতে, চ্যালেঞ্জ দেখে পালিয়ে গেলে হবে না, তাকে মোকাবিলা করতে হবে। এই মোকাবিলায় জয়ের যে স্বাদ তা অন্য কোনওভাবে পাওয়া অসম্ভব। মুশকিল হবে কিন্তু লড়াই করলে জয় আসবেই।
মাস্টার-ব্লাস্টার আরও জানিয়েছেন, নিজের পারফরম্যান্সকে সর্বোচ্চ উচ্চতায় নিয়ে গেলেই হবে না তাকে ধরে রাখাটাও জানতে হবে। সব সময়ই সকলের থেকে বেশি পরিশ্রম করতে হবে। সাফল্য যত আসবে ঠিক তেমনিভাবে বাড়িয়ে যেতে হবে পরিশ্রমের মাত্রা। সচিন জানিয়েছেন, সারা জীবন তিনি পরিশ্রম, ডেডিকেশন আর ইনভলমেন্টের উপরে ফোকাস করে গিয়েছেন। তাঁর আরও পরামর্শ মস্তিষ্ক নয় নিজের প্যাশন-এর স্যাটিসফেশন পেতে হলে হৃদয়কে আগে গুরুত্ব দিতে হবে।
<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2FSachinTendulkar%2Fvideos%2F1713130088711183%2F&show_text=0&width=267" width="267" height="476" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allowFullScreen="true"></iframe>