দায়বদ্ধতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন - বিধ্বস্ত মিতালী বললেন 'অন্ধকারতম দিন'
রমেশ পাওয়ার তাঁর দায়বদ্ধতা ও দক্ষতার নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর মিতালী রাজ বলেছেন, এটি তার জীবনের অন্ধকারতম দিন।
ফের মুখ খুললেন মিতালী রাজ। মহিলা টি২০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে তাঁকে প্রথম একাদশ থেকে বাদ দেওয়া নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্ক থামার তো কোনও সম্ভাবনাই নেই, বরং দিন দিন তার পরিধি ও গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। বিসিসিআইকে জমা দেওয়া ১০ পৃষ্ঠার রিপোর্টে মিতালীর বিরুদ্ধে গুরুতর কিছু অভিযোগ এনেছেন ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের কোচ রমেশ পাওয়ার। এই রিপোর্টে তিনি মিতালীর দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছেন।
এরপরই তাঁর অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে মিতালী লিখেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে 'কুৎসা' রটানো হচ্ছে তাতে তিনি গভীরভাবে দুঃখিত। অত্যন্ত আঘাত পেয়েছেন তিনি। দেশের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা, দেশের জন্য ২০ বছর ধরে খেলে যাওয়া, কঠোর পরিশ্রম, ঘাম-রক্ত ঝড়ানো সবই বৃথা হয়ে গিয়েছে বলে তাঁর মনে হচ্ছে। যেভাবে তাঁর দেশপ্রেম নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে, তাঁর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যেসব কাদা ছোঁড়া চলছে তাঁকে লক্ষ্য করে - তাতে এই সময়কে তাঁর জীবনের অন্ধকারতম সময় বলে জানিয়েছেন ভারতের মহিলা ওয়ানডে দলের অধিনায়িকা। তবে তিনি আশাবাদী এই দিনগুলো পার করার জন্য ঈশ্বর তাঁকে শক্তি দেবেন।
পাওয়ারের রিপোর্ট
বুধবার (২৯ নভেম্বর) মিতালী-বিতর্ক নিয়ে বিসিসিআই কর্মকর্তাদের কাছে ১০-পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন ভারতের মহিলা দলের কোচ রমেশ পাওয়ার। সেই রিপোর্টে তিনি অভিযোগ করেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সদ্যসমাপ্ত আইসিসি মহিলা টি২০ বিশ্বকাপে মিতালীকে দলের স্বার্থে না খেলে 'ব্যক্তিগত মাইলফলক' ছোঁয়ার লক্ষ্যে খেলছিলেন।
দায়বদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ
এখানেই থামেননি পাওয়ার, তাঁর রিপোর্টের বেশইরভাগ অংশেই রয়েছে মিতালীর বিরুদ্ধে মারাত্বক সব অভিযোগ। তিনি লিখেছেন, 'আশা করব মিতালী কোচকে ব্ল্যাকমেল করা, চাপ দেওয়া এবং দলের চেয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখা বন্ধ করবে।' কিভাবে কোচকে ব্ল্যাকমেল করেছিলেন মিতালী তাও বিশদে জানিয়েছেন পাওয়ার। পাকিস্তান ম্যাচের আগে নাকি দলের ভিডিও অ্যানালিস্ট পুস্কর সাওয়ান্ত তাঁর ঘরে এসে জানিয়েছিলেন, ফিল্ডিং কোচ বিজু জর্জ তাঁকে জানিয়েছেন, মিতালী তাঁর ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে অসন্তুষ্ট। তিনি ব্যাগ পত্র গোছাচ্ছেন। পরের সকালেই অবসর ঘোষণা করবেন। রমেশ জানিয়েছেন, মিতালীর সেই মনোভাব দেখে তিনি দুঃখ পেয়েছিলেন। তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল মিতালীর কাছে নিজের গুরুত্বই বেশি, ভারতের স্বার্থ আসে পরে। এছাড়া টুর্নামেন্ট চলাকালীন মিতালীর খামখেয়ালী আচরণে দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল বলেও তাঁর রিপোর্টে অভিয়োগ করেছেন পাওয়ার।
দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন
শুধু দায়বদ্ধতা নয়, টি২০ ক্রিকেটে মিতালীর দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পাওয়ার। তিনি জানিয়েছেন বিশ্বকাপের আগের অনুশীলন ম্যাচগুলিতে মিতালী দ্রুত রান করদতে পারছিলেন না। কারণ উইকেট নিচু এবং মন্থর ছিল। তাঁর মধ্যে মেরে খেলার ইচ্ছেরও অভাব ছিল, দক্ষতা ও ফিটনেসও ছিল সীমিত। তার জন্যই নিচু ও মন্থর উইকেটে তিনি শট নিতে পারছিলেন না। রমেশ জানিয়েছেন পাওয়ারপ্লে থেকে যত বেশি সম্ভব রান তুলে নেওয়াই ছিল দলের কৌশল। কারণ মন্থর পিচে পাওয়ারপ্লেই ছিল রান তোলার সবচেয়ে ভাল সুযোগ। মিতালীকেও তাঁরা এই যুক্তিগুলি দিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার জন্য বলেছিলেন। নিউজিল্যান্ড ম্যাচের আগে এই প্রস্তাবে মিতালীও রাজি ছিলেন বলে দাবি করেছন পাওয়ার। এর জন্যই প্রথম ম্যাচে তানিয়া ভাটিয়াকে দিয়ে ওপেন করানো হয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়ারপ্লেতে তানিয়া ও হেমলতা ১৩ বলে ২৪ রান এনে দিয়েছিলেন।
পাওয়ারের বিরুদ্ধে মিতালীর অভিযোগ
এর আগে রমেশ পাওয়ার তাঁকে গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে কোচ ক্রমাগত অপমান করে গিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন মিতালী। জানিয়েছিলেন, কোনও জায়গায় মিতালী এসে বসলেই উঠে চলে যেতেন পাওয়ার। নেটে অন্য সকলে যখন ব্যাট করত, রমেশ দাঁড়িয়ে দেখতেন। কিন্তু তিনি ব্যাট করার সময়ই চলে যেতেন। এমনকি কোনও সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে মিতালী গেলেও ফোনে চোখ বোলাতে বোলাতে রমেশ সেখান থেকে চলে যেতেন। দলের সবাই বুঝতে পারত, তাঁকে অপমান করার জন্যই এরকমটা করা হচ্ছে।