শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের শূণ্যতা কী পূরণ হবে, কোটি টাকার প্রশ্ন
লাহোরের গদ্দাফি স্টেডিয়ামে গ্লেন ম্যাকগ্রার আউট সাইড দ্য অফ স্ট্যাম্প বল থার্ড স্লিপ রিজিয়নে ঠেলে দিয়েই শূণ্যে ব্যাট তুলে ধরলেন অর্জুনা রনতুঙ্গা।
লাহোরের গদ্দাফি স্টেডিয়ামে গ্লেন ম্যাকগ্রার আউট সাইড দ্য অফ স্ট্যাম্প বল থার্ড স্লিপ রিজিয়নে ঠেলে দিয়েই শূণ্যে ব্যাট তুলে ধরলেন অর্জুনা রনতুঙ্গা। বল বাউন্ডারি লাইন পেরোতেই হাতে তুলে নিলেন দুখানা স্ট্যাম্প। নক স্ট্রাইকার এন্ড থেকে অধিনায়কের দিকে ছুটে আসা অরবিন্দ ডি সিলভার হাতেও একটি উইকেট। ততক্ষণে বাউন্ডারি লাইনের বাইরে দলের উইনিং রানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত নীল জার্সিধারী ক্রিকেটাররা মাঠে ঢুকে একে অপরকে আলিঙ্গন করতে শুরু করেছেন। মার্ক টেলরের অস্ট্রেলিয়াকে ফাইনালে হারিয়ে ১৯৯৬-র বিশ্বকাপ জয় আজও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট প্রেমীদের কাছে স্বপ্নের মতোই মনে হয়।
এরপর দুবার (২০০৭, ২০১১) ফাইনালে উঠলেও বিশ্বকাপ হাতে তুলতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। অর্জুনা রনতুঙ্গা, অরবিন্দ ডি সিলভা, সনৎ জয়সূর্যদের শূণ্য়তা কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, তিলকরত্নে দিলসানরা পূর্ণ করলেও, তাঁদের পর কেমন একটা শূণ্যতা তৈরি হয়েছে দ্বীপ রাষ্ট্রের ক্রিকেটে। তারই মধ্যে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ শুরুর মুখে জাতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচন নিয়ে নজিরবিহীন দ্বন্দ্বে জড়ান শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা। সেই অশান্তির আগুন যে কতখানি ভয়ঙ্কর, তা বিশ্বকাপ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে নামা শ্রীলঙ্কার পারফরম্যান্সে নজর দিলেই বোঝা যায়। বিশ্বকাপের সাম্প্রতিক কালের ইতিহাসে এত খারাপ খেলেনি কোনো ওই দ্বীপরাষ্ট্রের কোনো দলই।
এই পরিস্থিতি প্রথম প্রশ্ন, ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের ভবিষ্যত কী। এবং দ্বিতীয় প্রশ্ন, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটে তৈরি হওয়া অসীম শূণ্য়তা পূরণ হবে কীভাবে। এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কা বোর্ডের সঙ্গে স্বার্থের সংঘাতের জেরে সেদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত নিয়ে কোনো পরামর্শই দিতে রাজি নন অরবিন্দ ডি সিলভা, মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারার মতো লেজেন্ডরা। সব মিলিয়ে সীমাহীন সঙ্কটের সামনে দাঁড়িয়ে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট। এমনটা যে হবে, তা ২৩ বছর আগে কী আঁচ করেছিলেন দ্বীপ রাষ্ট্রের ক্রিকেট সমর্থকরা?
১৯৯৬-র বিশ্বকাপ জয়
পর পর পাঁচটি বিশ্বকাপে (১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩, ১৯৮৭, ১৯৯২) ধারাবাহিকভাবে খারাপ পারফরম্যান্সে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট দল বিশ্বে গুরুত্ব হারিয়েছিল। সেই অবস্থায় অর্জুনা রনতুঙ্গার হাতে জাতীয় দলের অধিনায়কত্বের ব্যাটন তুলে দিয়ে মাস্টার স্ট্রোক খেলেছিলেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড। সব হিসেব ওলোট-পালোট করে ইডেন গার্ডেন্সের সেমিফাইনালে ভারত এবং ফাইনালে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন দ্বীপরাষ্ট্রের দেশ। অরবিন্দ ডি সিলভা, সনৎ জয়সূর্য, রমেশ কালুভিতারানে, রোশন মহানামা, মুথাইয়া মুরলীধরন, উপুল চন্দনা, কুমার ধর্মসেনারা দেশ তো বটেই বিশ্ব ক্রিকেটেও আইকন হয়ে উঠেছিলেন।
১৯৯৯ ও ২০০৩
১৯৯৬-র বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটের মুখ হয়ে ওঠা অরবিন্দ ডি সিলভা, ১৯৯৯ ও ২০০৩ সালের বিশ্বকাপেও দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ৯৯-তে সুপার সিক্স এবং ২০০৩-এ সেমি-ফাইনালে বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হলেও ডি সিলভা সহ দ্বীপরাষ্ট্রের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স সমর্থকদের মন জয় করেছিল।
২০০৭ ও ২০১১
অরবিন্দ ডি সিলভা যুগ শেষের পর সনৎ জয়সূর্য, মাপভিন আত্তাপাত্তু, মুথাইয়া মুরলীধরনের হাত ঘুরে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট জন্ম দেয় নতুন দুই আইকনের। তাঁদের একজনের নাম মাহেলা জয়াবর্ধনে এবং অন্যজন হলেন কুমার সাঙ্গাকারা। ২০০৭ সালে মাহেলার অধিনায়কত্বেই শ্রীলঙ্কার স্বপ্নের দৌড় শেষ হয়েছিল বিশ্বকাপের ফাইনালে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ২০১১ সালে শ্রীলঙ্কা দলের অধিনায়কত্বের ব্যাটন ছিল কুমার সাঙ্গাকারার হাতে। সেবারও ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল দ্বীপরাষ্ট্রের দল।
এরপর
২০১৫-র বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই ছিটকে যায় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। এরপর থেকে যেন ঘুরে দাঁড়ানোই যেন মুশকিল হয়ে উঠেছে দ্বীপরাষ্ট্রের। রনতুঙ্গা, ডি সিলভা, জয়সূর্যরা যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, তা কোথায় হারিয়ে গেল, তা বুঝেই উঠতে পারছেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট সমর্থকরা। আশু এই শূণ্যতা পূরণ হোক চান, সেদেশের মানুষ।