নিজের ছেলেদের হাতেই পিছন থেকে ছুরি খেলেন কুম্বলে! ভারতীয় ক্রিকেটে এতবড় আস্পর্ধা কাদের
কোনওদিন কারোর নামে প্রকাশ্যে কোনও কুকথা বলেছেন! এমন অভিযোগ আজও অনিল কুম্বলের বিরুদ্ধে কেউ করতে পারে না। অথচ, সেই নিপাট ভদ্র মানুষটি আজ প্রবল তঞ্চকথার শিকার।
অনিল কুম্বলের বিরুদ্ধে একটা কথা চালু আছে যে দিনভর একটানা একই স্পটে বল রেখে বোলিং করে যেতে পারেন তিনি। আসলে এটাই কুন্বলের অধ্যাবসায়। যা রপ্ত করতে একটা সময় নিজের মন-প্রাণ সঁপে দিয়েছিলেন। আসলে ক্রিকেট-বল-২২ গজ আর উইকেটের ৩টি কাঠি- এটাই বরাবর কুম্বলের জীবনের সাধনা। খেলোয়াড় জীবনে সব সময়ই নানাভাবে উদ্ভাবনী কৌশল বের করতেন তিনি।
অথচ এহেন অনিল কুম্বলকে ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কমিটি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা কোয়া অনিল কুম্বলে ভারতীয় ক্রিকেট দল এবং তাঁর সঙ্গে জড়িত সাপোর্ট স্টাফদের নিয়ে রোডম্যাপ বানাতে বলে। অনিল কুম্বলে সেই রোডম্যাপ নিয়ে সম্প্রতি হাজির হয়েছিলেন কোয়ার সামনে।
সূত্রের খবর, দল নির্বাচনে কোচের হাজির থাকার বিষয়ে সওয়াল করেন কুম্বলে। তবে, নির্বাচকদের মত কোনও পদের দাবি তিনি করেননি। কুম্বলের যুক্তি ছিল একজন অধিনায়ক যেমন তাঁর পছন্দের দল চায়, ঠিক তেমনি একজন কোচ প্রতিটি খেলোয়াড়সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট নির্বাচকদের দিতে পারেন। সিনিয়র ক্রিকেট দলের কোচেদের দল নির্বাচনে হাজির করার দাবিটি বহু পুরনো। অতীতে সৌরভ, সচিনরাও একাধিকবার এই দাবি তুলেছিলেন।
এমনকী, কুম্বলে সাপোর্ট স্টাফদের মাইনেও ক্রিকেটারদের মতো করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল সাপোর্ট স্টাফরাও প্লেয়ারদের সাফল্যের পিছনে অবদান রাখেন। সুতরাং, তাঁদের সম্মান এবং মাইনে বাড়ানো না হলে একটা মানসিক দূরত্ব থেকে যায়। সূত্রের খবর অনিল কুম্বলে এই খোলামেলা পরামর্শকে ভালভাবে নেয়নি বিসিসিআই-এর একাংশ। কোয়ার সামনে পেশ করা কুম্বলের রিপোর্ট থেকে কিছু অংশও নাকি বোর্ডের একটা গোষ্ঠীর হাতে চলে গিয়েছে।
এই গোষ্ঠীর ধারণা এবার বোর্ডের মধ্যে কোচ হিসাবে ক্ষমতা বিস্তার করতে চাইছেন কুম্বলে। তাই এঁদের অনেকরই নাকি দাবি একবছরের সময়সীমা শেষ হলেই কুম্বলে বিদায় সম্পন্ন করার। যদিও, বোর্ডের তরফে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে, ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হিসাবে কুম্বলের নির্বাচন অটোমেটিক চয়েস। বিসিসিআই-এর এমন বার্তায় অবশ্য সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারণ, অনিল কুম্বলের ব্যবহার নিয়ে নাকি কোয়ার কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে। এই অভিযোগপত্রগুলিতে কুম্বলকে প্রয়োজনের থেকে বেশি কড়া বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ড্রেসিংরুমে নাকি ক্রিকেটারদের কোনও স্বাধীনতাই দেন না কুম্বলে। এমন অভিযোগ করা হয়েছে কোয়ার কাছে। আর এই অভিযোগগুলি করেছেন বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেট দলের একাধিক ক্রিকেটার। অভিযোগকারী এইসব ক্রিকেটারের নাম অবশ্য জানা যায়নি।
নিয়মানুবর্তিতা-শৃঙ্খলাপরায়ণ মনোভাব আর নিজের কর্তব্যে একনিষ্ঠ থাকা- কুম্বলের খেলোয়াড় জীবনের সাফল্যের এগুলিই ছিল চাবিকাঠি। স্বাভাবিকভাবেই কোচ হিসাবে ভারতীয় ক্রিকেট দলে এগুলির আমদানি করেছিলেন তিনি। যার নিট ফল একটানা ৫টি টেস্ট সিরিজ জয়। এই জয়ের পথে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়া। ঘরের মাঠেই ১৩টি টেস্টের মধ্যে ১১টি টেস্ট জয় পেয়েছিল ভারত।এমনকী একদিনের ক্রিকেটেও কুম্বলের কোচিং-এ সব নজরকাড়া জয় এসেছে। বলতে গেলে মাত্র এক বছরের সময়কালে এরআগে কোনও ভারতীয় কোচের এমন সাফল্য নেই। এতসত্ত্বেও কুম্বলের কোচিং চ্যাপ্টার কি ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাস হতে চলেছে?- তা জুন মাসের মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।