ভারতের ক্রীড়া-জগতে নারীদের জয়গান - যে পাঁচ মহিলা বদলে দিয়েছেন খেলাধূলার মানচিত্রটাই
শুক্রবার পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই উপলক্ষে আসুন এমন ৫ মহিলার কথা আলোচনা করা য়াক, যাঁরা ভারতের খেলাধুলার মানচিত্রটাই বদলে দিয়েছেন।
ক্রীড়া জগতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বরাবরই মহিলারা ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন। দলগত খেলা থেকে ব্য়ক্তিগত খেলা - সব জায়গাতেই ভারতীয় মহিলা ক্রীড়াবিদদের দাপট দেখা গিয়েছে। সেই গত শতাব্দীর নয়ের দশকে পিটি ঊষা থেকে শুরু করে এখনকার দিনের সানিয়া, সাইনা, সাক্ষী, দীপা, হিমা - তালিকাটা অনেক লম্বা হতে পারে।
শেষ অলিম্পিকেও যদি দেখা যায়, পদক জিতেছিলেন দুই মহিলা ক্রীড়াবিদ - সাক্ষী মালিক ও পিভি সিন্ধু। আর আরেকজন দীপা কর্মকার, ফিরেছিলেন পদকের খুব কাছ থেকে। কিন্তু, খেলাধূলার জগতে মেয়েদের আসার পথটা মোটেই সহজ নয়। আর্থিক বাধার সঙ্গে থাকে সামাজিক, পারিবারিক - বহুবিধ বিপত্তি। সেই সব অতিক্রম করে তাদের জয় তাই শুধু একটা পদক নয়, আরও অনেক বড় কিছু।
ভারতের মহিলা ক্রীড়াবিদদের অনেকেই এই দেশের খেলাধূলার মানচিত্রটাই বদলে দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জেনে নেওয়া যাক এই রকম ৫ জন মহিলা, যাঁরা এখনও খেলে চলেছেন, তাঁদের সম্পর্কে -
সানিয়া মির্জা
ভারতের টেনিসে বরাবরই দাপট দেখা গিয়েছে পুরুষ খেলোয়াড়দের। সানিয়াই প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতেন। এখনও পর্য়ন্ত তিনি ৬টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিতেছেন। ডাবলস খেলোয়াড় হিসেবে একসময়ে তিনি বিশ্বে শীর্ষস্থানে ছিলেন। দেশকে বহু আন্তর্জাতিক সম্মান এনে দিয়েছেন তিনি। ভারত সরকার তাঁর কীর্তিকে সম্মান জানাতে তাঁকে অর্জুন, পদ্মশ্রী, খেলরত্ন, প্দ্মভূষণ পুরস্কার দিয়েছে। তারপরেও অবশ্য পাক ক্রিকেটারকে বিয়ে করার জন্য তাঁকে প্রায়শই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়।
সাইনা নেহওয়াল
ভারত যে এখন ব্য়াডমিন্টনে অলিম্পিকে নিয়মিত পদকের আশা করতে পারছে সেই জায়াটা তৈরি করে দিয়েছেন সাইনা নেহওয়াল। তিনি না আসলে ভারত সিন্ধুকে পেত কিনা সন্দেহ আছে। সাইনাই প্রথম দেখিয়েছিলেন ব্য়াডমিন্টন বিশ্বে ভারত বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে। এখনও পর্যন্ত তিনিই একমাত্র ভারতীয় শাটলার যিনি বিশ্বক্রমে এক নম্বরে পৌঁছেছিলেন। ২০১২ সালের অলিম্পিক ব্রোঞ্জ পদকজয়ী এখনও দেশকে মুঠো মুঠো পদক দিয়ে চলেছেন।
মিতালী রাজ ও ঝুলন গোস্বামী
স্বয়ং কপিল দেব বলেছিলেন দেড় দশক আগেও তিনি মহিলা ক্রিকেট নিয়ে খোঁজ খবর রাখতেন না। কিন্তু মিতালী-ঝুলনরা দেশের মহিলা ক্রিকেটের অবস্থাটাই পাল্টে দিয়েছেন। সম্প্রতি ২০০ ওএকদিনের ম্য়াচ খেলেছেন মিতালী। বিশ্বে প্রথম মগিুলা হিসেবে ৬০০০ রানের গণ্ডিও অতিক্রম করেছেন। অপরদিকে ঝুলন একদিনের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেটের অধিকারী। ৩৬ বছর বয়সে এসে ফের বিশ্বের ১ নম্বর বোলার হয়েছেন। এই দুজনকে দেখেই কিন্তু স্মৃতি মান্ধানা, হরমনপ্রিত কৌর, শিখা পাণ্ডে, জেমাইমা রড্রিগেজরা উঠে এসেছেন।
মেরি কম
তিন সন্তানের জন্ম দিয়ে, সংসার সামলে ৩৬ বছর বয়সেও বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় তা দেখিয়ে দিয়েছেন মেরি কম। ভারতীয় বক্সিং-এর আইকন বলা যায়। বক্সিং বিশ্বেই তিনি রেকর্ড ৬ বার বিশ্ব-চ্যাম্পিয়ন হয়ে কিংবদন্তির জায়গায় চলে গিয়েছেন। পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী, খেলরত্ন, অর্জুন-সহ অসংখ্য সম্মান পেয়েছেন। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি মনোনীত রাজ্যসভার সদস্যও বটে।
হিমা দাস
১৯৯৪ যে স্বপ্ন ভারতকে দেখিয়েছইলেন ঊষা তার উত্তরাধিকার বইছেন হিমা দাস। অসমের এই ক্রীড়াবিদ মাত্র ১৯ বছর বয়সেই দেশের খেলাধূলার জহতে কিংবদন্তির জায়ায় চলে গিয়েছেন। আইএএএফ অনুর্ধ্ব ১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন। এটিই ছিল ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে কোনও ভারতীয় মহিলা ক্রীড়াবিদের প্রথম স্বর্ণপদক। তাঁর সামনে এখনও অনেক শৃঙ্গজয় বাকি। তাকে নিয়ে অলিম্পিক পদকের স্বপ্ন দেখছে দেশ।