বিশ্বকাপের স্বপ্নভঙ্গ! দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত লড়াই, অল্পের জন্য হারল ভারত
এএফসি অনুর্ধ ১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে, ভারত বনাম দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচে ভারত ১-০ গোলে হারল।
পারল না ভারতের অনুর্ধ ১৬ ফুটবল দল। এফসি অনুর্ধ ১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে শক্তিশালী দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে মাত্র ১-০ গোলে পরাজিত হল তারা। ফলে পরের বছর পেরুতে অনুষ্ঠিত অনুর্ধ ১৭ ফিফা বিশ্বকাপেও খেলা হবে না ভারতের।
২০১৭ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফিফা অনুর্ধ ১৭ বিশ্বকাপ। আয়োজক দেশ হিসেবে সেই প্রথমবার ফিফার যে কোন স্তরের বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল ভারত। তারপর থেকে কোচ বিবিয়ানো ফান্নান্ডেজের কোচিং-এ দুর্দান্ত উন্নতি ঘটিয়েছিল ভারতের অনুর্ধ ১৬ দলটি। এমনকী আর্জেন্টিনার অনুর্ধ ১৬ দলকেও তারা হারিয়ে দিয়েছিল।
আশা ছিল পেরু বিশ্বকাপেও তারা যোগ্যতা অর্জন করবে। অনুর্ধ ১৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে উঠতে পারলেই সেই স্বপ্ন পূরণ হতো। কিন্তু এদিনের হারের ফলে ফিনিশিং লাইনের কাছে পৌঁছেও শেষ করা হল না ভারতীয় খুদে ফুটবলারদের।
প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভাল, ধারে ও ভারে দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবল ভারতের থেকে অনেক এগিয়ে আছে। এদিন ভারত তাদের প্রথম একাদশে বিশেষ পরিবর্তন করেনি। কার্ড সমস্যার জন্য শুধুমাত্র রাইটব্যাকে বিকাশ ইয়ুমনামের জায়গায় খেলেন হরপ্রিত সিং।
অপরদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার কোচ বিস্ময়করভাবে এই ম্যাচে প্রথম একাদশে রাখেননি তাদের প্রতিভাবান স্ট্রাইকার মুন জুহো-কে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তিনি ইরাকের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেছিলেন।
ভারত খুব সাবধানে শুরু করেছিল। আক্রমণে না গিয়ে প্রতি আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলছিলেন অনুর্ধ ষোল ভারতীয় ফুটবলাররা। দলের শেপ ধরে রেখে তারা দক্ষিণ কোরিয়ানদের সব আক্রমণ ভোঁতা করে দিচ্ছিলেন।
ভারতীয় গোলকিপার নীরজ কুমারকে প্রথম বলে হাত লাগাতে হয় ম্যাচের ১৩ মিনিটে। দুর্দান্ত দক্ষতায় তিনি কোরিয়ানদের প্রথম শটটি বাঁচালেও ফিরতি বলটি ক্লিয়ার করতে পারেনি ভারতীয় ডিফেন্স। কোরিয়ানদের দ্বিতীয় শটটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় বেঁচে যায় ভারত।
এরপর ধীরে ধীরে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতে থাকে দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু এদিন যেন দক্ষিণ কোরিয়ানদের আটকাতে প্রতিজ্ঞা করে নেমেছিলেন ভারতীয় ডিফেন্ডাররা। মাঝমাঠ দিয়ে ভারতের ডিফেন্স ভেদ করা যাচ্ছে না দেখে কোরিয়ানরা মাঠের দুই প্রান্ত থেকে ভারতের বক্সের ভেতর ক্রস তোলা শুরু করে। তাও নীরজ একের পর এক লুফে নেন।
৩০ মিনিটের মাথায় কিন্তু তিনি পরাস্ত হয়েছিলেন। কোরিয়ানদের তোলা একটি বাঁক খাওয়া কর্ণারে দাড়িয়ে পড়েছিল গোটা ভারতীয় ডিফেন্স। বক্সের মধ্যে থেকে হেডও লাগিয়েছিলেন এশিয় রেড ডেভিলদের স্ট্রাইকার। কিন্তু বল তিন কাঠির মধ্যে রাখতে পারেননি।
ভারত প্রথমার্ধে একটিই গোলের সুয়োগ পেয়েছিল। তা আসে একেবারে হাফটাইমের গায়ে। রবি রানার একটি দূরপাল্লার শট কোরিয়ান ডিফেন্স ভেদ করে ফেলেছিল। কিন্তু তা আটকে দেন কোরিয়ান গোলকিপার। প্রথমার্ধ শেষ হয় ০-০ ফলেই।
দ্বিতীয়ার্ধেও দক্ষিণ কোরিয়া শুরু থেকেই প্রাধান্য রেখে খেলা শুরু করেছিল। কিন্তু প্রথম গোলের সুযোগ পায় ভারত। রিজ একেবারে গোলে শট নেওয়ার জন্য বল সাজিয়ে দিয়েছিলেন গিভসনের জন্য। গিভসনের জোরালো শটটিও ছিল অব্যর্থ লক্ষ্যে। কোনক্রমে ফিস্ট করে সেই যাত্রায় কোরিয়ার পতন রোধ করেন তাদের গোলরক্ষক।
এরপরই গোলের জন্য মরিয়া কোরিয়ানরা চাপ বাড়াতে শুরু করে। তাদের কাঙ্খিত গোলটি আসে ম্যাচের ৬৮ মিনিটে। কোরিয় খেলোয়াড়ে মিনসেও-র শট বাঁচিয়েছিলেন নীরজ কুমার। কিন্তু সেই ফিরতি বল এসে পড়ে বদলি হিসেবে মাঠে নামা কোরিয়ান ফুটবলার জিয়ং সাংবিনের পায়ে। বক্সের মধ্যে থেকে সহজ সেই বল জালে জড়াতে ভুল করেননি সাংবিন।
গোল খাওয়ার পরই ভারতীয় কোচ বিবিয়ানো ফার্নান্ডেজ রবি রানা ও গিভসন সিংকে তুলে নামান ভূবনেশ শেন্দ্রে ও লালচানহিমা সাইলোকে। ম্যাচের শেষ দিকে ভারত তেড়েফুরে আক্রমণে এসেছিল। কিন্তু এই কোরিয়ান ডিফেন্স গোটা টুর্নামেন্টে একটিও গোল খায়নি। তাদের সঙ্গে শেষ অবধি পেরে ওঠেননি ভারতীয় খেলোয়াড়রা।