বন্দনা থেকে লিঙ্গ পরিবর্তন করে বনি: তাঁকে নিয়ে তথ্যচিত্র এবার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে
বন্দনা পালের বনি হয়ে ওঠার সংগ্রাম নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি তথ্যচিত্র। এই তথ্যচিত্র দেখানো হবে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে।
কলকাতা, ৫ নভেম্বর : বাংলাকে জাতীয় ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন করা নয়ের দশকের নামী ফুটবল তারকা বন্দনা পাল। সময় বদলেছে পরিস্থতি বদলেছে। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলেছেব বন্দনা। জীবন সংগ্রাম তাঁকে বন্দনা থেকে বনিতে পরিণত করেছে, তবুও মেটেনি অনটন।
মনমোহিনী এই মহিলারা, যাঁরা জন্মেছিলেন পুরুষ হয়ে!
লিঙ্গ পরিবর্তন করে বন্দনা বনি পাল হয়েছেন ঠিকই তবুও সমাজের চোখে 'সমাজে বসবাসযোগ্য' হয়ে উঠতে পারেননি। বিয়ে করেছেন, কিন্তু সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পাননি। আর তাই তো গোবরডাঙায় নিজের বাড়িতেও জায়গা পাননি তিনি। কিন্তু এবার কি নতুন আলোর শিখা দেখতে পাচ্ছেন বন্দনা থেকে হয়ে ওঠা বনি?
বন্দনা থেকে বনি হয়ে ওঠার সংগ্রাম এবার ক্যামেরাবন্দি হয়েছে। বনির জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে একটি তথ্যচিত্র। এই তথ্যচিত্র দেখানো হবে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে। বনি পালকে স্বীকৃতির পাশাপাসি আর্থিক পুরস্কারও দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
তবে জীবনে এত সঙ্কট দেখেছেন বনি যে আজ আর কোনও কিছুতেই আগাম উচ্ছ্বাস নেই তার। তাই এই বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলেও এখনই কিছু মন্তব্য করতে চান না তিনি। আগে সব ঠিকঠাক মিটে গেলে তবেই মুখ খুলবেন।
প্রসঙ্গত ২০১২ সালে অ্যাথলেট পিঙ্কি প্রামাণিকের লিঙ্গ বিতর্কের সময়েই ফের চর্চায় আসে বন্দনা পালের নাম। পিঙ্কি পুরুষ না নারী তা নিয়ে চরম তর্ক বিতর্ক শুরু হয়। পিঙ্কি সব অভিযোগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। বন্দনা পারেননি। সমাজের লাঞ্ছনা, অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে লুকিয়ে গিয়েছিলেন।
বন্দনার কথায়, এশিয়ান গেমস থেকে ফেরার পর ডাক্তার বলেছিলেন ক্রোমোজোমে সমস্যার কারণে তিনি আর মহিলা ফুটবল দলে খেলতে পারবেন না। ছেলেদের ফুটবলে একটা মেয়ের জায়গা নেই। চোখের সামনে মুহূর্তে কেরিয়ারটা নষ্ট হয়ে যেতে দেখেছিলেন তিনি।
বাড়ি ছেড়ে পালিয়েও লোকের মুখ বন্ধ করাতে পারেননি বন্দনা। সবাই পিঠপিছে কথা বলত, হাসাহাসি করত, টিটকিরি দিত, তাই এসবের থেকে বাঁচতেই ডাক্তারের সাহায্যে লিঙ্গ পরিবর্তন করে বনি হয়েছিলেন বন্দনা। কিন্তু তবুও আর্থিক সঙ্কট মেটেনি। সমাজও গ্রহণ করেনি।
কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের স্বীকৃতিও তার জীবনের সমস্যা কাটাতে পারবে কি না তা নিয়েও নিশ্চিত নন বনি। তবু, তাঁর সংগ্রামের কাহিনী সবাই জানুক তা চান তিনি। মনে এ আশা নিয়েও দিন গুনছেন, হয়তো সব কালো মুছে এবার তাঁর জীবনের ভালটা শুরু হতে চলেছে।