জেদ আর নাছোড় মনোভাবেই অসাধারণ ফুটবল খেলে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ম্যাচ ড্র রাখল অস্ট্রেলিয়া
জেদ আর নাছোড় মনোভাবেই অসাধারণ ফুটবল খেলে ডেনমার্কের বিরুদ্ধে ম্যাচ ১-১ ড্র রাখল অস্ট্রেলিয়া
ফ্রান্স ম্য়াচে অস্ট্রেলিয়ার খেলা দেখে অনেকেই বলেছিলেন সেদিনের খেলা ধরে রেখে ভুলগুলো শুধরে নিতে পারলেই আজ ডেনমার্কের বিরুদ্ধে জিততে পারে অস্ট্রেলিয়া। শেষ অবধি না জিতলেও ফুটবলপ্রেমীদের মন জিতে নিল সকারুরা। শুরুতে গোল খেয়েও বাকি ম্যাচে প্রাধান্য রেখে বুঝিয়ে দিলেন মনের জোর আর জেদ থাকলে এভাবেও ফিরে আসা যায়।
খাতায় কলমে পিছিয়ে থাকা একটা দল খেলা শুরুর সাত মিনিটেই গোল খেয়ে গেলে তারা মানসিকভাবে দমে যাবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া বোঝালো কেন তাদের খেলার জগতে এত সম্মান করা হয়। হকি, রাগবি বা ক্রিকেটে যে অস্ট্রেলিয় হার না মানা কঠিন মনোভাব দেখা যায়, তাই দেখা যাচ্ছে এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ খেলতে আসা সকারু দলে।
শুরুর সাত মিনিটের মাথায় অসাধারণ ভলিতে বল অসিদের জালে জড়িয়ে দিয়েছিলেন ড্য়ানিশ তারকা ফুটবলের এরিকসেন। সেই সময় দুরন্ত গতিতে একের পর এক আক্রমণ তুলে আনছিল ডেনমার্ক। মনে হচ্ছিল আরও গোল খাবে অসিরা।
ওখান থেকেই খেলাটা ধরে নিল অস্ট্রেলিয়া। শুরুর ঝড় সামলে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। পর পর বক্সের বাইরে বেশ কয়েকটি ফ্রিকিক পায় তারা। তা থেকে গোল করতে না পারলেও চাপ বাড়ছিল ড্যানিশ ডিফেন্সে। মাঠেও কখনও বাঁপ্রান্ত, কখনও জানপ্রান্ত দিয়ে দ্রুত গতিতে উঠে আসছিলেন অস্ট্রেলিয় ৭ নম্বর জার্সিধারী লেকি।
সারা ম্যাচে দুর্দান্ত খেললেন লেকি। অনেকে তাঁকেই এই ম্যাচের প্রকৃত ম্যান অব দ্য ম্যাচ বলেছেন। ডিফেন্স থেকে বিপক্ষের গোলের সামনে, সারা মাঠ দাপিয়ে বেড়ান লেকি। একের পর এক ক্রস তুলেছেন ডেনমার্কের বক্সে। এরকমই একটা ক্রস নিজেদের বক্সের মধ্যে হাতে লাগিয়ে হ্যান্ডবল করে বসেন ডেনমার্কের ফরোয়ার্ড পলসেন।
প্রথমে রেফারি খেলা না থামালেও পরে ভিএআর-এর সাহায্য নিয়ে পলসেনের বিরুদ্ধে ফাউল দেন। তাঁকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়, এবং অস্ট্রেলিয়া পেনাল্টি পায়। বিশ্বকাপে ভিএআর-এর সাহায্যে প্রথম গোল হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ারই বিরুদ্ধে। এদিন যেন ভারসাম্য রাখতেই এই নয়া প্রযুক্তির সুবিধা পেল অস্ট্রেলিয়া।
পেনাল্টি নেন, আগের ম্য়াচেও পেনাল্টি থেকে গোল করা অসি অধিনায়ক জেদিনাক। শেমিচেল অবশ্য একটু আগেই ঝাঁপ দিয়ে দেন। তিনি বাঁদিকে ঝাপাচ্ছেন দেখে আগের দিনের মতোই ডান পোস্টে জমিঘেসা শট মারেন মাইল জেদিনাক। এই নিয়ে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মোট ৩ টি গোল হল তাঁর।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলার শুরুতে কিছুটা গতি বাড়িয়ে কেলা শুরু করে ডেনমার্ক। শুরুতেই অসি বক্সে হানা দিতে শুরু করে ডেনমার্ক। এসময় বক্সের মধ্যে পড়ে যান ডেনমার্কের স্ট্রাইকার পলসেন। কিন্তু তার পা থেকে বেরনো বস ফাঁকায় পান সিসতো। তিনি খেলা না থামিয়ে গোলে শট নেন। যদিও নিশানাট্যুত হন। তাই এক্ষেত্রে আর ভিএআর-এর দিকে যাননি রেফারি।
এরপর আর কোনও গেল না হলেও তুল্যমূল্য লড়াই হয় দুই দলের। অবশ্যই আক্রমণের ঝাঁঝ বেশি ছিল সকারুদের। দুটি নিশ্চিত সুযোগ তাদের হাতছাড়া হয়। একবার বক্সের ভেতর ক্রশে মাথা ছুঁইয়েও গোলে রাখতে পারেননি লেকি। আর একবার চোট পাওয়া নাবৌটের বদলে মাঠে নামা তরুল আরজানির গোলের একেবারে সামনে বাড়ানো শট শেমিচেলকে ছাড়িয়ে চলে যায়। ফাঁকা গোলে অস্ট্রেলিয়ার কেউ বলে সামান্য ছোঁয়া লাগাতে পারলেই গোল হতে পারত। কিন্তু কেউ এসে পৌঁছাননি দ্বিতীয় পোস্টে। সুযোগ পেয়েছিল ডেনমার্কও। সবমিলিয়ে একটি জমজমাট বিশ্বকাপ গ্রুপ লিগের ম্যাচের সাক্ষি হল সামারা এরিনা।