৬-১-এর বিশাল ব্যবধানে জয়ের তলায় চাপা পড়ে গেল ইংলিশ ডিফেন্সের সমস্যা, স্টার্লিং-এর অফ-ফর্ম
ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮: ইংল্যান্ড বনাম পানামা ম্যাচের রিভিউ
অধিনায়ক হ্যারি কেনের হ্যাট্রিকের জোরে রেকর্ড ৬-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে পানামাকে হারিয়ে নকআউট রাউন্ডে চলে গেল ইংল্যান্ড। অন্যদিকে পানামার পক্ষে বলার মতো হল, দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্ত হিসেবে নামা বালয়-এর গোলে তারা বিশ্বকাপে প্রথম গোল তুলে নিল। কিন্তু এই বিশাল জয়ের মধ্যেও ইংল্যান্ডের জন্য রয়ে গেছে বেশ কিছু কাঁটা।
প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গীতে শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। বলতে গেলে কার্যত তাদের সামনে দিশাহীন হয়ে পড়ে নবাগত পানামা। এই ম্যাচে ইংল্যান্ডের বেশ কিছু অসাধারণ সেটপিস মুভমেন্ট দেখা গেল। কর্ণার হোক বা ফ্রিকিক, ইংল্যান্ড সেটপিস পেলেই মনে হয়েছে গোল হতে পারে।
প্রথম গোল আসে ম্যাচের ৮ মিনিটে। দেশের হয়ে খেলতে নেমে প্রথম গোল করেন ডিফেন্ডার জন স্টোন্স। ইংল্যান্ড ম্যেচর প্রথম কর্ণার পেয়েছিল। বক্সের মধ্যে ব্রিটিশ মিডফিল্ডার ম্যাগুয়ের ও পানামিয়ান ডিফেন্ডার গোমেজের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই ট্রিপারের বক্সে ভাসানো বলে নিখুতভাবে মাথা ছুইয়ে গোল করে যান স্টোন্স।
পরের গোল আসে পেনাল্টি থেকে। ইংল্যান্ডের মুহূর্মুহু আক্রমণের সামনে পানামার ভুল করাটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। এভাবেই ২২ মিনিটে বক্সের মধ্যে পানামার এসকোবার ফাউল করেন জেসি লিঙ্গার্ডকে। মাথা ঠান্ডা রেখে গোলের বাঁপ্রান্তের উপরের কোনা দিয়ে হল জালে জড়ান ব্রিটিশ অধিনায়ক হ্যারি কেন।
তার পরের গোলটি ম্যাচের অন্যতম সেরা। অনেকক্ষণ ধরে পেনাল্টি বক্সে ছটফট করলেও কাজের কাজটা করতে পারছিলেন না। কিন্তু ৩৬ মিনিটে মাঠের বাঁপ্রান্তে অ্যাশলি ইয়ং-এর সঙ্গে ওয়ান-টু পাস খেলে হঠাত গতি বাড়িয়ে পানামা ডিফেন্ডারদের মধ্যে ফাঁক পেয়ে যান জেসি লিঙ্গার্ড। চমৎকার বাঁক খাওয়া ভলিতে গোলের উপরের কোনা দিয়ে গোল করে যান তিনি।
পাঁচ মিনিটও কাটতে না কাটতেই আসে ম্যাচ ও ইংল্যান্ডের চতুর্থ গোল। বক্সের অনেকটা বাইরে ফ্রিকিক পেয়েছিল তারা। ট্রিপার বল বাড়ান হেন্ডারসনকে লক্ষ্য করে। হেন্ডারসন বক্সের ফার পোস্টে বল তোলেন। প্রথম হেড নেন স্টার্লিং। কিন্তু, তা বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন পানামার গোলকিপার পেনেদো। কিন্তু ফিরতি বলে গোল করে যান সেই স্টোন্স।
প্রথমার্ধের শেষ গোলটি আসে সংযুক্ত সময়ে। জন স্টোন্সকে আটকাতে গিয়ে তাঁকে বক্সের মধ্যে ফাউল করা হয়। প্রায় আগের পেনাল্টিটিরই রিপ্লে ঘটিয়ে ম্যাচে তাঁর দ্বিতীয় গোল তুলে নেন কেন। বিরতির আগেই ৫-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে পরে পানামা।
ঘটনাবহুল প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধ ছিল তুলনায় ম্যাড়মেড়ে। প্রথমার্ধের মতো অতটা দাপট বজায় রাখতে পারেনি ইংল্যান্ড। সম্ভবত, ম্যাচের লিখ পরিষ্কার হয়ে যাওয়ায়, টুর্ণামেন্টের বাকি অংশের জন্য নিজেদের শক্তি সামর্থকে সঞ্চয় করছিল ব্রিটিশরা। তারমধ্যেও আক্রমণ থামেনি। ম্যাচের ৬২ মিনিটের মাথায় হ্যাট্রিক করেন হ্যারি কেন।
এক্ষেত্রে অবশ্য তাঁর বিশেষ কৃতিত্ব ছিল না। তাঁর বদলি মাঠের বাইরে অপেক্ষা করছেন, এই অবস্থায় লফটাস-চিকের নেওয়া একটি জোরালো শট, তাঁর পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে ঢুকে যায় পানামার গোলে। এরপরেই তাঁকে তুলে নামানো হয় জেইমি ভার্ডিকে।
পানামার জন্য ম্যাচ ও এখনও অবধি বিশ্বকাপের সেরা মুহূর্ত আসে যখন, ৭৮ মিনিটে পরিবর্ত হিসেবে নামা খেলোয়ার বালয় গোল করেন। এটিই পানামার বিশ্বকাপে অভিষেক গোল। গোলটি কিন্তু অত্যন্ত দর্শনীয়। ইংল্যান্ড বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে বক্সের মধ্যে ফ্রিকিক নিয়েছিলেন পানামার খেলোয়ার আভিলা। পেছন থেকে অনেকটা দৌড়ে এসে চলতি বলেই নিখুতভাবে পা ঠেকিয়ে বল গোলে রাখেন ফেলিপে বালয়। এই বর্ষীয়ান খেলোয়ারের নাম কিন্তু পানামার ফুটবল ইতিহাসে উঠে গেল। তবে মারধর করে খেলার প্রবণতা না কমালে কিন্তু এগোতে পারবে না পানামা।
তবে এই গোলের বন্যার নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে ইংল্যান্ড দলের অনেক ত্রুটি। ৬-১ গোলে জিতলেও গ্রুপ জি-এরই আরেক দল বেলজিয়ামের মতো মসৃণ কিন্তু লাগেনি ইংল্যান্ডের খেলা। ফরোয়ার্ডে রহিম স্টার্লিং এখনও তাঁর ক্লাবের ফর্ম খুঁজছেন। এদিনও অনেক সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি।
সবচেয়ে ভয় রয়েছে ডিফেন্স নিয়ে। মাঝে মাঝেই যেন ঘুমিয়ে পড়ছে ব্রিটিশ ডিফেন্স। দুর্বল পানামার বিরুদ্ধে ম্যাচেই ডিফেন্সের অনেক ফাঁক ধরা পড়ছে। শেষ অবধিই একটিই গোল করতে পারলেও যখনই পানামা আক্রমণে এসেছে তখনই শিরশিরানি ধরেছে ইংলিশ ডিফেন্সে।
মাঝে মাঝেই ইংলিশ ডিফেন্ডারদের পেছন থেকে দৌড়ে বক্সে প্রায় বল ধরার মতো জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে পানামিয়ানরা। সামনের বেলজিয়াম ম্যাচে, বা নকআউট রাউন্ডে ডিফেন্সের ফাঁক ভরাতে না পারলে কিন্তু সমস্যায় পড়তে হবে। এদিনও ম্যাচের শেষদিকে গোল খেল তারা। এ অসুখের ওষুধ খোঁজাই এখন সাউথগেটের চ্যালেঞ্জ।