গ্রুপ সি-র প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রযুক্তির হাত ধরে কষ্টার্জিত জয় ফ্রান্সের
গ্রুপ সি-র প্রথম ম্যাচে কাজান এরিনা স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কষ্ট করে জিতল ফ্রান্স
প্রযুক্তির হাত ধরে গ্রুপ সি-র প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২-১ গোলে জয় পেল ফ্রান্স। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধে ফুটবল বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর দেশ ফ্রান্সের জয় যত মসৃণ হবে ভাবা গিয়েছিল তা হয়নি। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর স্ট্র্যাটেজির জোরে ফরাসীদের প্রায় রুখেই দিয়েছিল 'সকারু'রা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
পোগবা, হুগো লরিস, উমতিতি গ্রিজম্যান - বিশ্বফুটবলের একেকটি বড় নাম। উল্টোদিকে জেদিনাক, ম্যাথু রায়ান-দের কজন চেনেন? কাজেই সহজেই এই ম্যাচ বের করে নেবেন ফরাসীরা এমনটাই ভাবা হয়েছিল। শুরুটা সেভাবেই করেছিলেন। প্রথম পনোরো মিনিটের খেলা দেখে মনে হয়েছিল গোল পাওয়া ফ্রান্সের কাছে স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কখনও বাঁপ্রান্ত থেকে গতি বাড়িয়ে উঠে আসছেন দেম্বেলে। কখনো মাঝমাঠ থেকে গোলের ঠিকানা লেখা পাস বাড়াচ্ছেন পল পোগবা।
স্রোতের মতো একের পর এক আক্রমণ আছড়ে পড়েছে অসি ডিফেন্সে। হিমশিম খাচ্ছিলেন অসি দুর্গের শেষ প্রহরী ম্যাথু রায়ান। এসময় তিনি বেশ কয়েকটি সেভ না করতে পারলে ম্যাচের সুরটা হয়তো অন্যরকমই হতো। এসময়ই হলুদ কার্ড দেখেন অসি মিডফিল্ডার ম্যাথু লেকি। তবে এরপরই অবশ্য খেলাটা ধরে নেয় অস্ট্রেলিয়া। তারা বুঝেছিল ফ্রান্সকে এই গতিতে খেলতে দেওয়া যাবে না। তাই নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করে খেলার গতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনে সকারুরা। আর গতিটা কমে যেতেই ছন্দপতন হয় ফরাসী দলের। শুরুতে আক্রমণের ঝড় তুলেও গোল না পাওয়ায় চাপে পড়ে যায় তরুন ফরাসী দল। আস্তে আস্তে ম্যাচ থেকে হারিয়ে যেতে থাকে তারা। এসময় বক্সের বাইরে একটি ফ্রিকিক থেকে প্রায় গোলের মুখ খুলে ফেলেছিল অসিরা, কিন্তু লরিসের তৎপড়তায় সেযাত্রা রক্ষা পায় ফ্রান্স।
বিরতিতে স্কোর ০-০ ছিল। এসময় বল পজেশনেও ফ্রান্সের প্রায় সমানই ছিল অস্ট্রেলিয়া। বিরতির পরও ছবিটা পাল্টায়নি। তবে কিছুটা হলেও খেলায় ফেরে ফ্রান্স। এসময়ই একটি থ্রু পাস ধরে বক্সের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে ছুকে পড়েছিলেন গ্রিজম্যান। তাকে ফাউল করেন অসি ডিফেন্ডার জশ রিশডন। তাঁকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়। তবে প্রথমে রেফারি ফাউল দেননি। ফরাসী খেলোয়ারদের আবেদনে প্রথমবার বিশ্বকাপে ভিএআর প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দেওয়া হয় ফ্রান্সকে। বক্সের ডানদিক ঘেসে শটে ম্যাচের ৫৮ মিনিটে গোল করেন গ্রিজম্যান।
কিন্তু এরপরই ধরা পড়ে ফ্রান্সের ফুটবলারদের অভিজ্ঞতার অভাব। পাঁচ মিনিটও না যেতেই বক্সের মধ্যে মনোসংযোগ হারিয়ে ফরাসী ডিফেন্ডার উমতিতি প্রায় মারাদোনার হ্যান্ড অব গডের কায়দায় হ্যান্ডবল করেন। ঠান্ডা মাথায় ম্যাচের ৬২ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে যান অস্ট্রেলিয় ক্য়াপ্টেন মিলে জেদিনাক। ফলে আবার চাপে পড়ে ফ্রান্স। গোল পেতে মরিয়া ফপাসী কোচ দেশঁ ৭০ মিনিটে জোড়া পরিবর্চন করে গ্রিজম্যান ও দেম্বেলে তুলে নামাল জিরু ও ফেকিরকে।
৮০ মিনিটের মাথায় প্রত্যাশিত দয়ের গোলটি পায় ফ্রান্স। জিরুর সঙ্গে পাস খেলে বক্সে ঢুকে হাল্কা চিপ করেন পল পোগবা। বারপোস্টের নিচে লেগে তা গোল লাইন পার করে ফের মাঠে ফিরে আসে। কিন্তু গোললাইন প্রযুক্তি জানিয়ে দেয় বল আগে গোললাইন পার করে গেছে। দুটি গোলের ক্ষেত্রেই প্রযুক্তি না থাকলে গোল পেত না ফ্রান্স। উল্টো দিকে বিশ্বকে চমকে দিয়ে ডাচ কোচ বার্ট ভ্যান মারউইক-এর স্ট্র্যাটেজিতে ভর করে ফ্রান্সকে প্রায় আটকে দিয়েছিল অস্ট্র্রেলিয়া। বিশ্বকাপ জয়ের ব্যাপারে এবার অন্যতম ফেবারিট ধরা হচ্ছে ফ্রান্সকে। কিন্তু প্রথম ম্যাচে তাদের খেলা মন ভরাতে ব্যর্থ ফুটবলপ্রেমীদের। ভাল কিছু করতে গেলে কিন্তু অনেক উন্নতি করতে হবে এই ফ্রান্স দলকে।