দশ মিনিটের ফরাসি ঝড়ে লন্ডভন্ড আর্জেন্তিনা, এবারের মতো শেষ বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন
বিশ্বকাপে জয়ের আশা শেষ হল আর্জেন্তিনার। ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে সলিল সামাধি ঘটল আর্জেন্তিনার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নের।
শেষ হয়ে গেল আর্জেন্তিনার আশা। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল লিওনেল মেসির দল। অঘটনের বিশ্বকাপে আরও এক অঘটনের সাক্ষী থাকল কাজান এরিনা। এই মাঠে হেরেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। এবার বিদায় নিল রানার্স দল আর্জেন্তিনা। ৪-৩ গোলে ফ্রান্সের কাছে হেরে গেল আর্জেন্তিনা। বলা ভাল ফ্রান্সের দশ মিনিটের ঝড়ে পর্যুদস্ত হল আর্জেন্টিনা। অবশ্যই যেই সাইক্লোনের নেতৃত্বে ফ্রান্সের উদীয়মান তারকা কিলিন এমবাপে। এই ১৯ বছর বয়সী এমবাপের গতির কাছেই এদিন স্বপ্নভঙ্গ হল আর্জেন্তিনার।
এদিন আর্জেন্তিনার দল গঠনকে ঘিরেই থাকবে এক রাশ প্রশ্ন। কোন যুক্তিতে কোনও পজেটিভ স্ট্রাইকারকে প্রথম একাদশে রাখলেন না আর্জেন্তাইন কোচ হর্হে সাম্পাওলি, তা বোধগম্য হয়নি অধিকাংশ ফুটবল বিশেষজ্ঞেরই। গত ম্যাচে গঞ্জালো ইগুয়েইনের ফর্ম যা ছিল তা পাড়ার লিগ খেলারও যোগ্য নয়। এই পরিস্তিতিতে দলে যে একটা পরিবর্তন আসবে তা নিশ্চিত ছিল। কিন্তু ইগুইনের পরিবর্তে কেন কুন আগুয়েরো বা ডিবালাকে সুযোগ না দিয়ে ক্রিস্টিয়ান পাভোনকে প্রথম একাদশে রাখলেন সম্পাওলি, তা সত্যি এক ধাঁধা।
এছাড়া এই ম্যাচে আর্জেন্তিনাকে ভুগতে হল ডিফেন্সের অসংলগ্নতা এবং ডিফেন্সিভ লাইনেরল তালমিলের অভাবে। যাকে অন্যমাত্রা দেয় একাধিক ৩০ উর্ধ্ব ডিফেন্ডারের স্লথ গতি।
আর এই সুযোগটাই ভাল মতো কাজে লাগায় ফ্রান্স। ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যায় ফ্রান্স আজ যে চারটি গোল করেছে তার মধ্যে তিনটিই এসেছে আর্জেন্তিনার ডিফেন্ডারদের ভুল পজিশন নেওয়ার কারণে এবং ফ্রান্সের তরুণ ফুটবলারদের তুলণায় গতিতে পিছিয়ে পড়ার কারণে।
ম্যাচের ১৩ মিনিটে আর্জেন্তিনার বিপক্ষে পেনাল্টি যে সিদ্ধান্ত নেন রেফারি তার মূল কারণই আর্জেন্তাইন ডিফেন্ডারদের স্লথ গতি। এমবাপেকে আটকাতে না পারায় রোহোর ফাউল-ই পেনাল্টি উপহার দিয়ে গেল ফ্রান্স। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করবেন না গ্রিজম্যান তা জানাই ছিল। কারণ এর দেশের হয়ে তিনটি পেনাল্টির মধ্যে তিনটিতেই গোল করেছিলেন তিনি। এছাড়া এর মিনিট চারেক আগেই বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া গ্রিজম্যানের শট লেগে আসে আর্জেন্তিনার বারে লেগে।
প্রথম গোলের পর আক্রমণের মাত্র আরও বাড়িয়ে দেয় ফ্রান্স। আর এই আক্রমণগুলির অধিকাংশই তৈরি হয়ে থাকে এমবাপেকে কেন্দ্র করে। কিন্তু বার বার আর্জেন্টিনার ডি বক্সে ঢুকেও প্রথমার্ধে গোল সংখ্যা বাড়াতে পারেনি ফ্রান্স।
বরং ৩০ মিনিটের পর থেকে ম্যাচে ফিরতে চেষ্টা করে আর্জেন্তিনা। যার ফল ম্যাচের ৪১ মিনিটে দি মারিয়ার অসাধারণ গোল। প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ের অসাধারণ শটে গোল করে যান দি মারিয়া। আর্জেন্তিনা হারলেও বিশ্বকাপের মঞ্চে দি মারিয়ার এই গোল ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেবে। চলতি বিশ্বকাপের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন গোলটি করেন দি মারিয়া। প্রথমার্ধের খেলা শেষ হল ১-১ ব্যবধানে।
আশা করা হয়েছিল প্রথমার্ধে সমতা ফিরিয়ে আনা আর্জেন্তিনা দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আরও চেপে ধরবে ফ্রান্সকে। প্রত্যাশা মতোই খেলা শুরু করে ছিলেন মেসিরা। খেলা শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যেই মেসির গোলমুখী শটকে বাঁ পায়ের আউট স্টেপে টোকা মেরে জালে জড়িয়ে দেন গ্যাব্রিয়াল মার্সেডো।
সবাই
যখন
ধরেই
নিয়েছেন
লিড
পেয়ে
যাওয়ায়
ধীরে
ধীরে
ম্যাচের
রাশ
নিজেদের
হাতে
তুলে
নেবে
আর্জেন্তিনা,
ঠিক
তখনই
শুরু
হয়
ফরাসি
ঝড়।
ম্যাচে
৫৯
মিনিটে
বিশ্বমানের
গোল
করে
ফ্রান্সকে
সমতায়
ফিরিয়ে
আনেন
তরুণ
ডিফেন্ডার
পাভার্ড।
পার্ভাডের
গোলের
রেশ
কাটতে
না
কাটতেই
গোল
করে
ফ্রান্সকে
এগিয়ে
দেন
এমবাপে।
এই
একাটা
গোলই
গোটা
আর্জেন্তাইন
ডিফেন্সের
কঙ্কাল
সর্বস্য
চিত্রটা
পরিস্কার
করে
দেওয়ার
পক্ষে
যথেষ্টা
এই
গোলের
পর
ঠিক
চার
মিনিটের
অপেক্ষা,
তার
পরই
ফের
এমবাপে
ম্যাজিক।
জিরুর
পাস
ধরে
দুই
ডিফেন্ডারকে
অবহেলায়
এড়িয়ে
গোল
করে
যান
প্যারিস
সাঁ
জাঁ-এর
এই
স্ট্রাইকার।
অপ্রত্যাশিত ভাবে দু'গোলে পিছিয়ে পড়া আর্জেন্তিনাকে দেখে তখন অবাকই লাগছিল বেশ। ভাবতে কষ্ট হচ্ছিল এই প্লেয়ারগুলিই ক্লাবের জার্সি পরে একের পর এক স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেন সমর্থকদের। যদিও লড়াই থেকে সরে আসেনি আর্জেন্তিনা। ক্ষীন আশাকে সঙ্গী করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালায় তারা। যার ফল ৯৩ মিনিটে করা সার্জিও আগুয়েরোর গোল। মেসির পাস থেকে হেডে গোল করে যান ম্যানচেস্টার সিটির এই স্ট্রাইকার। আকস্মিক একটা আশা আর্জেন্তাইন সমর্থকদের মনে জাগলেও তা মিলিয়ে যায় ঠিক দু'মিনিটের মধ্যেই। কারণ ইরানের রেফারি ততক্ষণে বাঁশি বাজিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন শেষ হয়ে গিয়েছে আর্জেন্তিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন।
এই বিশ্বকাপ থেকে আর্জেন্তিনার ছিটকে যাওয়ার নেপথ্য আর্জেন্তিনার বিশ্রী ডিফেন্স বা সাম্পাওলির পরিকল্পনাহীন স্ট্র্যাটেজি যতটা দায়ী, ততটাই দায়ী ইরানের রেফারি। এদিন পেনাল্টি বক্সে দি মারিয়া বা মেসিকে ফাউল করা হলেও তা চোখ এড়িয়ে যায় রেফারি। এমন কী ভিএআর এর সুবিধা থাকা স্বত্ত্বেও তিনি তাঁর সিদ্ধান্তগুলি একবার পুনঃবিবেচনা করে দেখার প্রয়োজনও মনে করেননি। যেমন বক্সের মধ্যে ফ্রান্সের ফুটবলার হ্যান্ড বল করলেও দেননি নিশ্চিত পেনাল্টি।
এই বিস্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার ফলে হয়তো আর্জেন্তিনার এক সোনালী প্রজন্মকে বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ না পেয়েই নামিয়ে রাখতে হবে আর্জেন্তিনার জার্সি। হয়তো সেই তালিকায় নাম থাকবে লিওনেল মেসিরও। যিনি বার্সেলোনাকে মোট ৩২টি ট্রফি দিয়েছেন নিজের ফুটবল কেরিয়ারে। কিন্তু দেশের হয়ে তাঁর সাফল্য বলতে শুধুই শূণ্যতা।