স্বপ্নপূরণ থেকে দুস্বপ্নের জীবন! ভয়ঙ্কর তালিবানি হুমকিতে ঘরছাড়া সাত বছরের 'লিটল মেসি'
আফগানিস্তানের 'লিটল মেসি' মুর্তাজা আহমদি তালিবান হামলার মুখে হাজার হাজার আফগানদের মতো বাড়ি থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
২০১৬ সালে আফগানিস্তান শিশু মুর্তাজা আহমদির লিয়েনেল মেসির প্রতি ভালবাসা সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এমনকী মু্তাজা আহমদির নামই হয়ে যায় 'আফগানিস্তানের ছোট্ট মেসি'। তার মেসির সঙ্গে দেখা করার স্বপ্নও পূরণ হয়েছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের পর এখন তার জীবনে নেমে এসেছে দুঃস্বপ্ন।
সংবাদ সংস্থা এএফপির সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব গজনি প্রদেশে হানা দিয়েছে তালিবানরা। হাজার হাজার আফগান পরিবার সেই হামলার হাত থেকে বাঁচতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের মতো গৃহহারা এখন এই সাত বছরের শিশু ও তার পরিবারও। নিজেদের সর্বস্ব ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। আহমদির বাবা-মা জানিয়েছেন, মেসির সঙ্গে দেখা করে বিখ্যাত হওয়ার জেরে তাঁদের পরিবার ও সাত বছরের ছোট্ট আহমদি আলাদা করে রয়েছেন তালিবানি জঙ্গিদের নিশানায়।
আফগানিস্তানের ছোট্ট মেসি
২০১৬ সালে সমবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ছোট্ট আহমদির একটি ছবিই বিখ্য়াত করে দিয়েছিল তাঁকে। ছবিতে দেখা গিয়েছিল যুদ্ধ-বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে আহমদি একটি আকাশি নীল-সাদা পলিথিন দিয়েই মেসির জার্সি তৈরি করেছে। তাতে স্কেচপেন দিয়ে মেসির নাম ও তাঁর জার্সি নম্বর মিলিয়ে ১০ লেখা। সেই ছবি নজর এড়ায়নি স্বয়ং মেসিরও। কাতারে বার্সেলোনার এক প্রদর্শনী ম্যাচে ইউনিসেফের মাধ্যমে তাঁকে ডেকে এনে মেসি তাঁর সই করা একটি জার্সি ও একটি ফুটবল উপহার দিয়েছিলেন তাঁকে। মেসির হাত ধরে সেই ম্যাচে ম্য়াস্কট হিসাবে মাঠেও নেমেছিল আহমদি।
দুঃস্বপ্নের রাত
আফগানিস্তানের ছোট্ট মেসির সেই আনন্দের দিন বেশিদিন থাকেনি। তাদের বাড়ি গজনির জাঘোরি জেলায়। তার মা সফিকা জানিয়েছেন তাঁরা হাজারা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, যারা শিয়া-পন্থী। তাই সুন্নিপন্থী তালিবানির 'নভেম্বর অপারেশনে' নিশানা করে তাদের প্রদেশে। এক রাতে তালিবানিদের গোলা বারুদের শব্দ পেয়েই স্রেফ প্রাণটুকু সম্বল করে তাঁরা বাড়ি ছেড়ে পালান। আপাতত কাবুল শহরে এক অস্থায়ী আস্তানায় তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন। ইউনাইটেড নেশনস-এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই রাতে প্রায় ৪০০০ পরিবার ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
বিখ্যাত হওয়াটাই কাল
সফিকা যা জানিয়েছেন তা শিউড়ে ওঠার মতো। তালিবানি জঙ্গিরা তাঁদের বিখ্যাত সন্তানেকে বিশেষভাবে খুঁজছে। খোলাখুলি হুমকি দিয়ে রেখেছে মুর্তাজা আহমদিকে ধরতে পারলে তাঁর দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হবে। স্থানীয় কেউ কেউও ঈর্ষার থেকে বিশ্বাসঘাতকতা করে মুর্তাজাকে তুলে দিতে পারে তালিবানদের হাতে। তালিবানরা কোনওদিনই খেলাধুলা পছন্দ করে না। তাদের আমলে কাবু স্টেডিয়ামকে ব্যবহার করা হত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য।
কী বলছে ছোট্ট মেসি?
মুর্তাজাকে পলিথিন ব্য়াগ দিয়ে মেসির জার্সিটি বানিয়ে দিয়েছিল তার দাদা হুমায়ুন। সে জানিয়েছে এমনকী কাবুলেও তাদের খারাপ কিছু ঘটতে পারে বলে ভয় পাচ্ছে তারা। কিন্তু বড়ের এই ভয় কিন্তু স্পর্শ করেনি মুর্তাজাকে। সে জানিয়েছে বাড়িতে মেসির দেওয়া জার্সি আর ফুটবলটা রয়ে গিয়েছে। সেইগুলো সে ফেরত চায়, তাহলে আবার সে খেলতে পারবে। সে জানিয়েছে মেসিকে সে 'মিস' করে। আবারও তাঁর স্বপ্নের নায়ের সঙ্গে সে দেখা করতে চায়। দেখা করে সে তাঁকে সালাম জানাবে। তারপর মেসির হাত ধরে আবার মাঠে যাবে তাঁর খেলা দেখতে।