আই লিগ ২০১৮-১৯: বিস্ফোরক এস্কেদা! প্রথম ম্যাচেই ইম্ফল থেকে ৩ পয়েন্ট তুলে নিল লাল-হলুদ
নেরোকা এফসি বনাম ইস্টবেঙ্গল আইলিগ ২০১৮-১৯-এর ম্যাচের প্রতিবেদন।
ভারতের মাটিতে প্রথম ম্যাচ জোড়া গোল করে স্মরণীয় করে রাখলেন ইস্টবেঙ্গলের মেক্সিকান ফরোয়ার্ড এনরিকে এস্কেদা। দুই অর্ধে দুটি গোল (১০' ও ৪৮') করে প্রথম ম্যাচেই নিজের আবির্ভাব জানান দিলেন তিনি। গতবার সবাইকে চমকে দিয়ে রানার আপ হওয়া মনিপুরের দল নেরোকা এফসির বিরুদ্ধে ম্য়াচ ২-০ গোলে জিতে ৩ পয়েন্ট তুলে নিল লাল-হলুদ।
শনিবার (২৭ অক্টোবর) নেরোকার ঘরের মাঠ ইম্ফলের খুনাম লুম্পক স্টেডিয়ামে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রথম একাদশ নামিয়েছিলেন লাল-হলুদের স্প্যানিশ কোচ আলেজান্দ্রো মেন্দেজ গার্সিয়া। তিন কাঠির নিচে ছিলেন দাগার রক্ষিত। রক্ষণের নেতৃত্বে ছিলেন বিশ্বকাপার জনি অ্যাকোস্টা। আর আক্রণভাগে ছিলেন এস্কেদা, জবি জাস্টিন ও চুলোভা।
অপরদিকে নেরোকার গোলে জায়গা হয়নি তাদের অধিনায়ক ললিত থাপার। বলে ইতালিয়ান গোলরক্ষক মৌরো বোয়েরচিও-কে খেলানো হয়। রক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন কলকাতা ময়দানের পরিচিত খেলোয়ার এডু। মাঝমাঠ সচল রেখেছিলেন কাতসুমি উসা। আর আক্রমণভাগে ফেলিক্স চিডিকে রেখে দল সাজিয়েছিলেন তাদের স্প্যানিশ কোচ ফার্লি।
এদিন কিন্তু ম্যাচের শুরুতে রীতিমতো প্রাধান্য নিয়ে খেলা শুরু করেছিল। ম্যাচের মাতচ্র ২ মিনিটের মাথাতেই কর্নার আদায় করেছিল তারা। কিন্তু সজাগ ছিল লাল হলুদ রক্ষণ ভাগ।
ম্যাচের ১০ মিনিটে আচমকাই গোল পেয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। টুর্নামেন্টে এস্কেদা বলে প্রথমবার পা ছুঁইয়েই গোল পেয়ে যান। লম্বা থ্রো ইন থেকে বল ধরে গ্লেন উইলিয়ামস বল বাড়িয়েছিলেন এস্কেদার জন্য। বল জালে জড়াতে ভুল করেননি মেক্সিকান ফরোয়ার্ড।
গোল খেয়ে তা শোধ দেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নেরোকা। কাতসুমি, মালেমরা প্রতিআক্রমণে ব্যস্ত রেখেছিলেন লাল হলুদ রক্ষণভাগকে। ১৮ মিনিটের মাথায় বিপজ্জনক জায়গা থেকে ফ্রিকিক পেয়েছিল নেরোকা। ডেনে দ্বিতীয় পোস্টে দীর্ঘকায় এডুর জন্য বল ভাসিয়েছিলেন। এডু তাতে মাথা ছোঁয়াতে ভুল করেননি। কিন্তু গোলের নিচে দুরন্ত ফর্মে ছিলেন দাগার। তিনিই দলের পতন রোধ করেন।
আবার ২২ মিনিটের মাথায় প্রায় গোল করে ফেলেছিল নেরোকা। বাঁদিক থেকে ভেসে আসা ক্রস ফিস্ট করে বক্সের বাইরে বের করে দিতে গিয়েছিলেন দাগার। কিন্তু তা গিয়ে পড়ে মালেমোর পায়ে। তাঁর শট একেবারে গোললাইন থেকে বাঁচান মনোজ।
দুই দলই প্রথমার্ধে একের পর এক গোলের সুযোগ তৈরি করে। আক্রমণ প্রতি আক্রমণে জমজমাট খেলা হয়। প্রথমার্ধ শেষ হয় ১-০ ফলেই।
বিরতির পর খেলা শুরু হতেই প্রথম মিনিটেই পেনাল্টি পায় ইস্টবেঙ্গল। বক্সের মধ্যে লালডানমাওয়াইয়া-কে গুরুতর ফাউল করেন ডেনে। ফলে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয় লালডানমাওয়াইয়া-কে। ঠান্ডা মাথায় গোল করে যান এস্কেদা। নেরোকার ইতালীয় গোলরক্ষক কিন্তু ঠিক দিকেই ঝাঁপিয়েছিলেন। কিন্তু শটে এত জোর ছিল যে সেই বল ধরা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।
২ গোল করার পর আস্তে আস্তে খেলার গতি কমিয়ে আনে ইস্টবেঙ্গল। তবে এরপরেও প্রচুর সুযোগ পেয়েছিল নেরোকা। কিন্তু ইস্টবেঙ্গেলের জমাট রক্ষণ, বিশেষ করে গোলরক্ষক দাগার অসাধারণ খেলে নেরোকার সব আক্রমণই প্রতিহত করে দেন।
আলাদা করে বলতেই হবে এস্কেদার কথা। শুধু গোল করাই নয়, প্রয়োজনে তিনি নিচে নেমে এসে রক্ষণভাগকেও সহায়তা দিয়েছেন। ৭৩ মিনিটে এডুর হেড প্রায় লাল-হলুদের জালে জড়িয়ে গিয়েছিল। কিন্তু একেবারে গোললাইন থেকে তা ক্লিয়ার করেন এস্কেদা। হাফটাইমের বিরতিতে টিম হার্ডেলের সময় তাঁকে দলের খেলোযাড়দের উজ্জীবিতও করতে দেখা গিয়েছে। তাঁর মধ্যে প্রকৃত নেতাকে দেখা যাচ্ছে।
উল্টোদিকে নেরোকার হয়ে ফরোয়ার্ড চিডিকে দুর্দান্তভাবে মার্ক করে তাঁকে প্রায় গোটা ম্যাচ নির্বিষ করে রেখেছিলেন অ্যাকোস্টা। সবমিলিয়ে দারুণভাবে আই লিগ অভিযান শুরু করলো কোয়েস ইস্টবেঙ্গল। প্রথম ম্যাচের পর সমর্থকরা কিন্তু এই দলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতেই পারেন।