গর্বের দিন ভারতীয় ফুটবলে, চিনের মাটি থেকে এশিয়াকে সন্দেশ - জাগছে ঘুমন্ত দৈত্য
ভারত বনাম চিন ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচের প্রতিবেদন।
ভারতকে বলা হয় ফুটবলের ঘুমন্ত দৈত্য। সেই দেশের ফুটবলের আজ অত্যন্ত গর্বের দিন। চিনের বিরুদ্ধে প্রথম জয় না পেলেও, শনিবার চিনের মাটিতে তাদের শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে সুজৌ সিটির ম্যাচে চিনের যাবতীয় আক্রমণ সামলে দিয়ে গোলশূন্য ড্র করল ভারত। বুঝিয়ে দিল ভারতের ফুচবল গত কয়েক বছরে অনেক এগিয়ে এসেছে। বুঝিয়ে দিল জাগছে ঘুমন্ত দৈত্য। ফিফা ক্রমতালিকায় ২৭ ধাপ আগে থাকা দলও এখন আর বড় চ্যালেঞ্জ নয় ভারতের কাছে।
ভারতের জাতীয় দল শেষ খেলেছিল ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে কেনিয়ার বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে ভারতের যে প্রথম একাদশ খেলেছিল সেই দলের থেকে মাত্র একটি পরিবর্তন করেন কোচ কনস্টান্টাইন। আনাসের জায়গায় খেলানো হয় নারায়ণ দাসকে। তাঁকে রাইট ব্যাকে রেখে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে অধিনায়ক সন্দেশের সঙ্গে খেলেন শুভাশীষ বসু।
অপরদিকে মার্সেলো লিপ্পিও এদিন ভারতের মতই চিন দলকে খেলান ৪-২-৩-১ ছকে। খেলার একেবারে শুরু থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল চিন। ভারতীয় ডিফেন্ডারদের প্রথম মিনিট থেকেই ব্য়তিব্যস্ত করা শুরু করেছিলেন চিনের আক্রমণভাগের ফুটবলাররা। এমনকী মাঝমাঠ থেকে প্রণয় হালদার ও অনিরুধ থাপাকেও নিচে নেমে এসে রক্ষণ সামলাতে হয়।
তবে প্রাথমিক সেই ঝড় সামলে ম্যাচের ১৩ মিনিটের মাছায় ভারতের সামনে প্রথম সুযোগ আসে গোল করার। বক্সের একেবারে মাথা থেকে সুনীল ছেত্রী প্রণয় হালদারকে বল বাড়িয়েছিলেন। তিনি ফরোয়ার্ড পাস দেন অনিরুধ থাপাকে। তিনি ডানপ্রান্ত থেকে ওভারল্যাপে আসা প্রীতম কোটালের জন্য বল রাখেন। কোটালের তীব্র গতির শট দারুণভাবে বাঁচান চিনা গোলকিপার।
থাপার তোলা ফ্রিকিক থেকে ফের গোল করার সুয়োগ এসেছিল সুনীল ছেত্রীর কাছে। বক্সের মধ্য়ে বাঁক খাওয়া বল তুলেছিলেন অনুরুধ থাপা। সুনীল ছেত্রী প্রথম সুযোগেই গোলে শট নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার পা মাটিতে ঠেকে যাওয়ায় শটটি তিনি তিন কাঠির মধ্যে রাখতে পারেননি।
এরপরই চাপ বাড়িয়েছিল চিন। ২৪ মিনিটে গাও লিন ১২ গজের একটি দুর্দান্ত শট নিয়েছিলেন ভারতীয় গোলে। কিন্তু গুরপ্রীত তাঁর পা ব্যবহার করে ততোধিক ক্ষিপ্রতায় তা বাঁচিয়ে দেন।
বিরতির পর একসঙ্গে তিনজন খেলোয়াড় পরিবর্তন করেন চিনের কোচ মার্সেলো লিপ্পি। যার দৌলতে দ্বিতীয়ার্ধের ৫ মিনিটের মধ্যেই তিনটি গোলের সুযোগ পেয়েছিল চিন। এরমধ্যে গাও লিন প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন।
শি ঝি ডানপ্রান্ত থেকে বক্সের মধ্যে স্কোয়ার পাস রেখেছিলেন লিনের ফার্সট-টাইম শট প্রথম রোস্টে লেগে মাঠের বাইরে চলে য়ায়।
এরপর ম্যাচের ৫৬তম মিনিটে চিনের অর্ধে বল জিতে নেন হোলিচরণ। তিনি স্কোয়ার পাসে বল দেন উদান্তকে। বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে উদান্ত চিনের গোল উদ্দেশ্য করে জোরালো শট নিয়েছিলেন। কিন্তু তা বার পোস্টের উপর দিয়ে উড়ে যায়। ম্যাচের ৬০ মিনিটের মাথায় কনস্টান্টাইন নারায়ণ দাস ও উদান্তকে তুলে নামান আনাস ও নিখিল পুজারিকে।
এরপর আরও একবার গোল করার খুব কাছে এসে গিয়েছিল চিন। কিন্তু বক্সের মধ্যে থেকে নেওয়া উ নেই-এর শট বারপোস্টে প্রতিহত হয়ে ফিরে আসে।
ম্যাচের ৭৯ মিনিটে জেজেকে তুলে নামানো হয় ফারুখ চৌধুরিকে। ম্যাচের ৯৩ মিনিটের মাথায় এই ফারুখই ঐতিহাসিক গোলটি প্রায় করেই ফেলেছিলেন। নিখিল পুজারির আড়াআড়ি বল থেকে ফারুখ ক্লোস রেঞ্জে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাঁচিয়ে দেন চিনের গোলরক্ষক।
চিন এই নিয়ে এই বছর এখনও অবধই একটি ম্যাচেও জয় পেল না। অপরপক্ষে ভারত ঝুলি ভরে নিয়ে আসছে অভিজ্ঞতা ও সাহস।