আইএসএল ২০১৮-১৯: ঘরের মাঠে ফের হার চেন্নাইন এফসি-র, লিগ শীর্ষে এফসি গোয়া
ইন্ডিয়ান সুপার লিগ ২০১৮-১৯-এ চেন্নাইন এফসি বনাম এফসি গোয়া ম্যাচের রিপোর্ট।
শনিবার সন্ধ্যায় চেন্নাইয়ের জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে গতবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাইন এফসিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে চল গেল এফসি গোয়া। অপরদিকে বেঙ্গালুরুর পর এই ম্যাচেও হেরে এটিকের সঙ্গে লিগের সবচেয়ে নিচে রইল চেন্নাইন।
এডু বেদিয়া, ফেরান কোরোমিনাস ও মৌর্তাদা ফলের গোলে খেলা শেষ হওয়ার অনেক আগেই গত মপসুমের প্লেঅফের বদলা নিশ্চিত করে ফেলেছিল গোয়া। ম্যাচের একেবারে শেষে চেন্নাইনের হয়ে স্বান্ত্বনা গোল পান এলি সাবিয়া। কিন্তু ততক্ষণে আর ম্যাচে ফেরার উপায় ছিল না।
এদিন চেন্নাইয়ের মিডফিল্ডে জর্জ গ্রেগরি অনিরুদ্ধ থাপাকে নামিয়েছিলেন জার্মানপ্রীত সিংয়ের সঙ্গে। এছাড়া অ্যাটাকিং থার্ডে জেজে লালপেখলুয়াকে সাহায্য়ের জন্য ছিলেন গ্রেগরি নেলসন, ফ্রান্সিসকো ফার্নান্ডেজ ও রাফায়েল অগুস্তো।
অপরদিকে এদিন সের্গিয়ো লোবেরার প্রথম একাদশে এডু বেদিয়া ফিরে আসায় আরও শক্তিশালী হয়েছিল গোয়ার মিডফিল্ড। তাঁর সঙ্গে মাঝমাঠে ছিলেন লেনি রড্রিগেজ ও আহমেদ জহৌহ। আক্রমণভাগের নেতৃত্বে ছিলেন সেই কোরোমিনাস। মান্দার রাও দেসাইকে লোবেরা নামান লেফ্ট ব্যাক পজিশনে। তরুণ গোলরক্ষক মহম্মদ নওয়াজ ছিলেন তিন কাঠির নিচে।
শুরু থেকেই ম্যাচে প্রাধান্য ছিল গোয়ার। জল গ্রেগরির ছেলেরা বলের দখলই ধরে রাখতে পারছিলেন না। চেন্নাই বক্সের আশপাশে ইচ্ছামতো পাস খেলে যাচ্ছিলেন এফসি গোয়ার ফুটবলাররা। এভাবেই ম্যাচের ১২ মিনিটের মাথায় ম্যাচের প্রথম গোলটি পেয়ে যায় তারা।
হুগো বৌমৌসের শর্ট কর্ণার থেকে বল ধরে ড্রিবল করতে করতে প্রায় মাঠের বাইলাইন ক্রস করে গিয়েছিলেন এই ভারতীয় মিডফিল্ডার সেখান থেকে দুর্দান্ত কাট ব্য়াকে বক্সের মধ্যে বল রেখেছিলেন এডু বেদিয়ার জন্য গোলের ডানপ্রান্তের নিচের কোনা দিয়ে বল গোলে জড়িয়ে দেন এডু।
আগাগোড়া মাঝমাঠের দখল রেখেছিল গোয়ার ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। পাসের পর পাস খেলে তারা বলের জন্য দৌড় করিয়ে গিয়েছেন অনিরুদ্ধ ও জার্মানপ্রীতকে। প্রথমার্ধে একবারই চেন্নাইনের এই দুই মাঝমাঠের খেলোয়াড় বল নিয়ে আক্রমণে এগোতে পেরেছিলেন। বক্সের একেবারে মাথা থেকে গোলে শটও নিয়েছিলেন অনিরুদ্ধ, কিন্তু তা বার পোস্টের উপর দিয়ে উড়ে যায়।
হাফটাইমের কাছাকাছি গোয়া আক্রমণের জাঁঝ একটু কমায়। সেই সুয়োগে নিজেদের কিছুটা গুছিয়ে নিয়েছিল চেন্নাইন। হাফটাইমের আগের ১৫ মিনিটে তাদের কিছু ভাল মুভও দেখা গিয়েছিল গোয়ার বক্সে। গ্রেগরি নেলসন এইসময় দুইবার গাউরদের রক্ষণ ভেঙে ঢুকে পড়েছিলেন। কিন্তু তরুণ নওয়াজ দুবারই দলের পতন রোধ করেন। গোয়ার পক্ষে ১-০ ফলেই শেষ হয় প্রথমার্ধ।
প্রথমার্ধের শেষের দিকের পারফরম্যান্সে বেশ আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেমছিল দ্বিতীয়ার্ধে। প্রথম থেকে বেশ আক্রমণাত্মক খেলাও শুরু করেছিল। কিন্তু রক্ষণভাগের দুর্বলতায় তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। বাঁ প্রান্ত থেকে একটি থ্রোইন পেয়েছিল এফসি গোয়া। ওভারল্যাপে অনেকটা উপরে উঠে এসেছিলেন সেরিটন ফার্নান্ডেজ। তাঁকে লক্ষ্য করেই বল ছোঁড়েন বৌমৌস।
সেরিটন বক্সের মধ্যে একেবারে নিখুঁত বল রেখেছিলেন কোরোমিনাসের জন্য। গোল করে যান কোরোমিনাস। নেলসন ও জেরি লালরিনজুয়ালা তাঁকে দেখতেই পাননি। চেন্নাইনের বাকি রক্ষণও সেই সময়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। গতবারের গোল্ডেন বুট বিজয়ীর কিন্তু এইবারও ২ ম্যাচে ৩ গোল হয়ে গেল।
২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর ম্যাচের ৭০ মিনিটের মাথায় জেজে কে তুলে আইজ্যাক ভানমালসাওয়ামাকে নামান চেন্নাইন এফসি কোচ গ্রেগরি। সেই সঙ্গে ফুল ব্যাক কালডেরনকে তুলে নামানো হয় কার্লোস সালোমকে। পরপর দুই ম্যাচেই কিন্তু ব্যর্থ হলেন জেজে।
এই দুই বদলের পর চেন্নাইয়ের বলের দখল বেড়েছিল। কিন্তু তাদের যাবতীয় আক্রমণ অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়েই আটকে যাচ্ছিল। নেলসন ও অহুস্তো দুজনই এই সময়ে এফসি গোয়ার রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন।
কিন্তু খেলার গতির বিরুদ্ধেই ম্য়াচের ৮০ মিনিটের মাথায় তাদের তৃতীয় গোল পেয়ে যায় গোয়া। আহমেদ জাহৌহের একটি ক্রস বক্সের মধ্যে মাথা দিয়ে ফ্লিক করে নামিয়েছিলেন কোরোমিনাস। সেই বল মৌর্তাদা ফল হেড করে রাখেন একেবারে গোলের উপরের কোনায়। চেন্নাইন গোলরক্ষক করণজিত সিংয়ের ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল সেই বল।
আগের ম্যাচে পাহাড়ে জয় না পেলেও এই ম্যাচে বড় ব্যবধানে জিতে লিগ টেবিলের একেবারে শীর্ষে চলে গেল এফসি গোয়া। আর দুই ম্যাচচ হেরে চেন্নাইন চলে গেল ৯ নম্বরে, এটিকের ঠিক আগে। আগামী বৃহস্পতিবার তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচে তারা ঘরের মাঠে খেলবে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের সঙ্গে। আর এফসি গোয়ার পরের ম্যাচ ২২ তারিখ ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরুর সঙ্গে।