অনুর্ধ ১৭ বিশ্বকাপের ১ বছর পার হল, কতদূর এগোলেন ভারতের সেই দলের তরুণ তারকারা
অনুর্ধ ১৭ ফিফা বিশ্বকাপ দলের ৬ ভারতীয় তরুণ যাঁরা এখন আইসএল ২০১৮-এর আসর মাতাচ্ছেন।
গত অক্টোবর মাসে ভারতে বসেছিল ফিফা অনুর্ধ ১৭ বিশ্বকাপের আসর। তারপর থেকে এক বছর কেটে গিয়েছে। ভারতে প্রথমবার যে কোনও স্তরের ফুটবলের সবচেয়ে বড় সেই প্রতিযোগিতা কিন্তু বেশ কিছু তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলার উপহার গিয়ে গিয়েছে ভারতকে।
বিশ্বকাপের পর অনেক ফুটবল বিশেষজ্ঞই এই তরুণদের ভবিষ্যতের তারকা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। বিশ্বকাপে একটিও পয়েন্ট আদায় করতে না পারলেও ভারতের সেই তরুণ প্রতিভারা সমর্থকদের হৃদয় জিতে নিয়েছিলেন। একবছর পর তারা এখন কোথায়?
কেউ অনুর্ধ ১৯ দলে কেউ কেউ আইএসএল-এ
সেই তরুণ প্রতিভাদের অনেকেই আজ তাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছেন ভারতের অনুর্ধ ১৯ দলে। তবে অনেকেই বিশ্বকাপ শেষ হতে না হতেই ডাক পেয়েছিলেন আইএসএল-এর বিভিন্ন দলে। ভারতের সিনিয়র খেলোয়াড় ও বিদেশী ফুটবলারদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন ধীরাজ সিং মৈরাঙ্থেম, মহম্মদ রাকিপ, মহম্মদ নওয়াজ, কোমল থাতাল, শুভম সারঙ্গীরা।
ধীরাজ সিং
ধীরাজ কেরল ব্লাস্টার্সের হয়ে প্রথম দুটি ম্যাচেই প্রথম একাদশে ছিলেন। ভারতের অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়টি কিন্তু ডেভিড জেমসের দলের তিনকাঠির নিচেও যথেষ্ট প্রভাবিত করেছেন। প্রথম ম্যাচে কলকাতায় এটিকের বিরুদ্ধে ক্লিনশিট রেখেছিলেন তিনি।
২
ম্যাচে
তিনি
মোট
৬টি
সেভ
করেছেন।
ব্লাস্টার্সদের
দুটি
ম্যাচেই
তিনি
হিরো
আইএসএল
এমার্জিং
প্লেয়ার
অব
দ্য
ম্যাচের
পুরস্কার
জিতেছেন।
তাঁর
প্রশমায়
পঞ্চমুখ
তাদের
কোচ
ডেভিড
জেমস,
যিনি
নিজে
ইংল্যান্ডের
জাতীয়
দলের
গোলকিপার
ছিলেন।
মহম্মদ রাকিপ
ধীরাজর মতো কেরলের ফ্র্যাঞ্চাইজিটির হয়ে এই বছর দুটি ম্যাচেই প্রথম থেকে খেলেছেন রাকিপ। ভারতের অনুর্ধ ১৭ বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে থাকলেও মূল দল বাছাইয়ের সময় তিনি ছিটকে গিয়েছিলেন। দুই ম্যাচেই ব্লাস্টার্সের রাইট ব্যাকে ছিলেন তিনি। ইতিমধ্যেই আইএসএল-এর পঞ্চম সংস্করণে নয়টি সফল ট্যাকল রয়েছে তাঁর নামের পাশে।
প্রাঞ্জল ভূমিজ
ধীরাজ এখনও অবধি একবারই পরাস্ত হয়েছেন। অথবা বলা ভাল তাঁকে পরাস্ত করেছেন, আরেক তরুণ মুম্বই এফসির হয়ে খেলা প্রাঞ্জল ভূমিজ। বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে দূরপাল্লার বাঁক খাওয়া শট তিনি রেখেছিলেন গোলের একেবারে দুরূহ কোনে। সেই বল ধীরাজ কেন, বিশ্বের কোনও গোলকিপারই বাঁচাতে পারতেন না। তাও গোলটি করেন কখন? ম্যাচের তখন ইনজুরি টাইমেরও একেবারে শেষ মুহূর্ত। তাঁর দল পিছিয়ে ছিল ১-০ গোলে। বদলি হিসেবে নেমে তাঁর নেওয়া ওই বিশ্বমানের শটটিই খেলার শেষ মুভ ছিল।
মহম্মদ নওয়াজ
রাকিপের মতোই ভারতের অনুর্ধ ১৭বিশ্বকাপের মূল দলে জায়গা করে নিতে পারেননি মহম্মদ নওয়াজ। কিন্তু এফসি গোয়ার হয়ে আইএসএল-এ নিজের জাত চেনাচ্ছেন এই তরুণ প্রতিভা। কোট সের্গিও লোবেরাকে তিনি এতটাই মুগ্ধ করেছেন যে, গোয়া দলে কাট্টিমনি ও রালতের মতো অভিজ্ঞ গোলকিপারদের বসিয়ে তাঁকেই প্রথম দলে খেলানো হচ্ছে। প্রথম ম্যাচে অবশ্য তিনি বড় ভুল করে ফেলেছিলেন। কিন্তু তাও কোচের ভরসা তাঁর উপর থেকে যায়নি। এবং তিনিও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেভ করে তার মর্যাদা দিয়েছেন। লোবেরা বলেছেন, 'আমি বয়স দেখি না, কোচ হিসেবে সেই মুহূর্তে কোন গোলকিপার সবচেয়ে ফিট, সেটাই আমার কাছে প্রধান বিচার্য। আমি যখন ১৮ বছর বয়সী ছিলাম নওয়াজের থেকে ইনেক বেশি ভুল করতাম।'
শুভম সারঙ্গী
অনুর্ধ ১৭ বিশ্বকাপের মূল দলে জায়গা করে নিতে পারেননি শুভম সারঙ্গীও। কিন্তু এই তরুণ স্ট্রাইরাপ ইতিমধ্যেই আইএসএল-এ দিল্লি ডায়নামোসের হয়ে অভিষেক ঘটিয়ে ফেলেছেন। গোল না করলেও তিনি দলের বিকল্প স্ট্রাইকার হিসেবে কিন্তু কোচ জোসেপ গোম্বাউয়ের পরিকল্পনায় জায়গা করে নিয়েছেন।
কোমল থাতাল
ধীরাজ, নওয়াজ, রাকিপদের আইএসএল-এ অভিষেক হযে গেলেও এখনও অপেক্ষায় রয়েছেন আরেক তরুণ কোমল থাতাল। ভারতের অনুর্ধ ১৭ বিশ্বকাপ দলের অন্যতম সদস্যটি কিন্তু প্রাক মরসুম ট্রেনিংয়ের সময় কোচ স্টিভ কপেলের ভরসা জিতে নিয়েছেন। কাজেই আইএসএল-এ তাঁর অভিষেক হওয়াটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কোচ কপেলও বলেছেন, 'ওর কিছু কিছু মুভ দেখলে নে হয় যেন তৈরি করা, আর কিছু কিছু মুভ দেখলে মনে হয় ভেতর থেকে আসা। ওর মাত্র ১৮ বছর বয়স। আমি ওকে প্রাক-মরসুমে যেরকম খেলতে দেখেছি, আইএসএল-এর বেশিরভাগ ম্যাচে ও প্রথম দলে জায়গা করে নিলে আমি অন্তত অবাক হব না। ও কিন্তু আমার পরিকল্পনার অন্যতম অঙ্গ।'
স্পষ্টতই এই তরুণরা হিরো আইএসএল-এ তাদের ছাপ ফেলতে শুরু করেছে। খেলা যত এগোবে তত তারা আরও বিকশিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতের তরুণ ফুটবলদের জন্য এটা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ভাল সময়।