গোল্ডেন কিক থেকে ভোকাল টনিক, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের শূণ্যতা পূরণ হবে কি!
গোল্ডেন কিক থেকে ভোকাল টনিক, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের শূণ্যতা পূরণ হবে কি!
মাঠে তাঁর পায়ের জাদু দেখে মুগ্ধ হয়েছিল ফুটবল বিশ্ব। আবার খেলা ছাড়ার পর কোচিং জীবনেও চূড়ান্ত সফল কিংবদন্তি পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ভোকাল টনিক শোনার জন্য নাকি বসে থাকতেন ফুটবলাররা। সুভাষ ভৌমিক থেকে কৃশাণু দে কিংবা বাইচুং ভুটিয়া, পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমক খাওয়া থেকে বাঁচেননি ময়দানের কোনও ফুটবলারই। সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক তাঁর জীবন।
জন্ম
১৯৩৬ সালের ২৩ জুন জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়িতে জন্ম প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল ও কেএমপিএইচ স্কুল থেকে তিনি উচ্চশিক্ষিত হন।
সন্তোষ ট্রফি দিয়ে শুরু
শৈশব থেকেই ফুটবলের প্রতি ঝোঁক ছিল পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর প্রতিভারও আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল সেই শিশুকালেই। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ঐতিহ্যবাহী সন্তোষ ট্রফিতে তিনি বিহার দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে নজর কেড়েছিলেন। তখন রাইট উইং-এ খেলতেন প্রদীপ কুমার।
১৯৫৪ সালে কলকাতায় আসা
ততদিন প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম পরিচিত হয়ে গিয়েছে রাজ্যের ফুটবল মহলে। তাই তাঁর ডাক পড়েছিল কলকাতায়। ১৯৫৪ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে এরিয়ান ক্লাবে যোগ দেন পিকে। পরে তিনি ইস্টার্ন রেল ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হন।
ভারতের জার্সি
সালটা ১৯৫৫। মাত্র এক বছরেই কলকাতা ময়দানে নিজের প্রতিভাকে মেলে ধরা পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভারতীয় ফুটবল দলের ট্রায়ালে ডেকে পাঠানো হয়। দলে সুযোগও দেওয়া হয় তাঁকে। সে বছর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় হওয়া কোয়াড্রাঙ্গুলার টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পান পিকে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৯।
ভারতীয় দল ও পিকে
১৯৫৮ সালে ভারতীয় ফুটবল দলের সঙ্গে এশিয়ান গেমসে অংশ নিতে টোকিও যান পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই টুর্নামেন্টে ভারতকে খালি হাতে ফিরতে হলেও, ১৯৬২-র এশিয়ান গেমসে সোনা জেতে মেন ইন ব্লু। টুর্নামেন্টে স্বপ্নের ফর্মে ছিলেন পিকে। ১৯৫৬ সালে মেলবোর্নে আয়োজিত অলিম্পিকে আয়োজক অস্ট্রেলিয়াকে ৪-২ গোলে হারিয়েছিল ভারত। সেই ম্যাচে অনবদ্য খেলেছিলেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে তাঁর নেতৃত্বেই অংশ নিয়েছিল ভারতীয় ফুটবল দল। সেই টুর্নামেন্টেরই এক ম্যাচে দুর্ধর্ষ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন পিকে। ম্যাচ ড্র করেছিল ভারত। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতীয় দলের জার্সিতে ৮৪টি ম্যাচ খেলেছেন। করেছেন ৬৫টি গোল।
বড় ক্লাবে খেলেননি
পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেরিয়ারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা বড় ঘটনা যে তিনি কলকাতার তিন বড় ক্লাব ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও মহামেডান স্পোর্টিং-র হয়ে কোনও দিনই খেলেননি। তাঁর ফুটবল জীবনের অধিকাংশ সময় কেটেছে ইস্টার্ন রেলে খেলে।
পিকে-র কোচিং-এ ইস্টবেঙ্গল
খেলা ছেড়ে কোচিং-কেই কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৭২ সলে তিনি ইস্টবঙ্গলের কোচ হন। সেই সময় পরপর চার বার কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয় লাল-হলুদ। পিকে-র কোচিংই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানকে ৫-০ গোলে হারায় ইস্টবেঙ্গল। ১৯৯৭ সালের ফেডারশন কাপের সেমিফাইনালে মোহনবাগানকে ৪-১ গোলে হারিয়েছিল লাল-হলুদ। হ্যাটট্রিক করেছিলেন বাইচুং ভূটিয়া। কোচ ছিলেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়।
পিকে বনাম পেলে
১৯৭৭ সালে কলকাতায় প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে এসেছিল কিংবদন্তি পেলের ক্লাব নিউ ইয়র্ক কসমস। পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোচিংয়েই সেই ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র করতে সক্ষম হয়েছিল মোহনবাগান। পিকে-র কোচিংয়েই একই মরশুমে আইএফএ শিল্ড, রোভার্স কাপ ও ডুরান্ড কাপ জিতে রেকর্ড করেছিল মোহনবাগান। ১৯৯৯ সালে কোচিং কেরিয়ার থেকেও অবসর নেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর ভোকাল টনিক ও ম্যান ম্যানেজমেন্টের প্রশংসা ময়দানে চলতে থাকে।
পুরস্কার
১৯৬১ সালে অর্জুন পুরস্কার পান পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৯০ সালে তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। ২০০৪ সালে ফিফার সর্বোচ্চ অর্ডার অফ মেরিট পুরস্কারে সম্মানিত হন প্রদীপ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়।