চার পার করতেই অস্তিত্ব সঙ্কটে আইএসএল, আই লিগের কাছে কেন অসহায় 'অম্বানি প্রোজেক্ট'
আইএসএল-এর জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকার মূল কারণ এক শহর এক টিম প্রথা। পরিস্কার করে বলতে গেলে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে আইএসএলে সুযোগ না দেওয়া।
ভারতীয় ফুটবল সার্কিটে আইএসএলের আবির্ভাবের পর থেকেই এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে ফুটবল সমর্থক এবং বিশেষজ্ঞদের উৎসাহের অভাব ছিল না। আইএসএলের হাজার ভোল্টের আলোর ঝলকানিতে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়তে হয়েছিল আই লিগকেও। এমন কী আইএসএল-কেই দেশের এক নম্বর লীগ করার পরিকল্পনা নিয়ে নিয়েছিলেন নীতা অম্বানি এবং তাঁর অনুগত ফুটবল হাউসের বিজ্ঞেরাও।
ক'টা বছর কাটতে না কাটতেই উধাও 'মিলিয়ন ডলার ফুটবল'-এর ক্রেজ। বরং স্বমহিমায় এখনও বজায় আছে আই লিগের রমরমা। কী কারণে মাত্র ৪ বছরের মধ্যেই ফুটবলপ্রেমীদের মন থেকে ধীরে ধীরে মুছে গেল আইএসএল?
মার্কেটিং থেকে তারকা, টাকা থেকে চোখ ঝলসানো ফুটবলার-এই সকলই দেখেছেন ভারতীয় ফুটবল প্রেমীরা, কিন্তু তবুও এক প্রকার অকাল মৃত্যুর পথে আইএসএল। কী কী কারণে ফুটবলপ্রেমীদের মন থেকে মুছে গেল আইএসএল, তারই ময়নাতদন্তে মাইখেল বাংলা।
আইএসএলের
অস্তিত্বসঙ্কটে
পরার
কারণ
গুলি
বিশ্লেষণ
করতে
গেলে
মূলত
উঠে
আসে
কয়েটি
পয়েন্ট।
প্রথমত,
ভারতীয়
ফুটবলকে,
একটি
অন্য
পর্যায়
নিয়ে
যাওয়ার
লক্ষ্য
নিয়ে
শুরু
হয়েছিল
আইএসএল।
মনে
করা
হয়েছিল
বিশ্বমানের
ফুটবলারদের
সঙ্গে
এক
সঙ্গে
খেললে
বা
ড্রেসিংরুম
শেয়ার
করলে
উন্নতি
হবে
ভারতীয়
ফুটবলারদেরও।
কিন্তু
পরিকল্পনা
থাকলেও
এর
বাস্তবায়িত
রুপ
দেখেনি
ভারতীয়
ফুটবল।
বরং
ভারতীয়
ফুটবলারদের
থেকে
অনেক
বেশি
মাতামাতি
শুরু
হয়
বিদেশিদের
নিয়েই।
দ্বিতীয়ত, আইএসএল-এর দৌলতে ফুটবলপ্রেমীরা আশা করেছিলেন স্বপ্নের তারকাদের বেশি করে দেশের মাটিতে খেলতে দেখতে পাবেন তাঁরা। প্রথম কয়েক বছর, লুইস গার্সিয়া, দেল পিয়েরো, নিকোলাস আনেলকা, দিয়োগো ফোরলানদের খেলা দেখতে পেলেও তার পর আর বিশ্বমানের কোনও তারকা ফুটবলার খেলতে আসেননি আইএসএলে।
তৃতীয়ত, ফোরলান, দেল পিয়েরো আইএসএল-এ খেললেও তা পেশাদার ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর। অর্থাৎ কেরিয়ারের অন্তিম সময় খেলেছেন ভারতে। ফলে তাঁদের খেলা স্বভাবতই আশাপূরণ করতে পারেনি ফুটবলপ্রেমীদের।
এ ছাড়াও রয়েছে একাধিক কারণ। যেমন, ২০১৮ সুপার কাপই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আই লিগের মানের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে আইএসএল-এর ফুটবল। যেখানে মনে করা হয়েছিল ফ্যাঞ্চাইজিগুলি দাপিয়ে খলবে আই লিগের ক্লাবগুলির বিরুদ্ধে। কিন্তু চলতি আই লিগে ভাল খেলতে না পারা ক্লাবগুলির কাছেই দিশাহীন দেখায় আইএসএলের বহু নামকরা টিমকে। এ ছাড়া, যত দিন গড়িয়েছে, ততই বয়স্ক ফুটবলারদের ভীড় বেড়েছে আইএসএল-এ। ক্রমাগত বৃদ্ধাশ্রমে পরিণত হয়েছে টুর্নামেন্টটি। ফলে ফুটবল প্রেমীরা গতির ফুটবল আশা করলেও প্রত্যাশাপূরণ করতে পারেননি 'বৃদ্ধ' ফুটবলাররা। সম্প্রতি ২০১৭ অনূধর্ব-১৭ বিশ্বকাপে যে গতির ফুটবল গোটা ভারত দেখেছে তার কাছে কিছুই নয় এই আইএসএল।
এ ছাড়া আই লিগ যে রাজ্যের দলগুলি খেলে, সেই রাজ্যগুলির মধ্যে অধিকাংশ রাজ্যেরই প্রতিনিধি আছে আই লিগে। ফলে ফ্রাঞ্চাইজি নির্ভর ফুটবলের তুলনায়, ক্লাব দলগুলিকেই সমর্থনে এগিয়ে আসছেন সমর্থকেরা।
আইএসএল-এর জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকার মূল কারণ এক শহর এক টিম প্রথা। পরিস্কার করে বলতে গেলে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে আইএসএলে সুযোগ না দেওয়া। ভারতীয় ফুটবলের অন্যতম দুই স্তম্ভ এই দু'টি ক্লাব। শুধু বয়সেই নয়, এই দুই দলের ঐতিহ্য এবং রেকর্ডের দিকে চোখ দিলে তাবড় তাবড় ফুটবল বিশেষজ্ঞকেও ভাবতে হয়। ধারাবাহিকতার সঙ্গে ভাল পারফর্ম করা এই দুই ক্লাবের মজ্জায় মজ্জায়। এ ছাড়া ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের ৯০ শতাংশই এই দুই দলের মিলিত সমর্থক। ফলে ঐতিহ্যশালী ক্লাবগুলিকে বঞ্চিত করা মেনে নিতে পারেননি ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা।
এরই ফল ভারতে ফুটবল বাজারে নিজেদের জায়গা তৈরি করতে আইএসএলের দলগুলির নাকানি চোবানি খাওয়ার নমুনা। যেখানে বিনামূল্যে জার্সি, খাবার দিয়েও গ্যালারি ভরানো যাচ্ছে না, এমন কী ফ্রি টিকিটও নিতে চাইছে না কেউই।